হাদিস ৫৩১
আবূ কুরাইব (র.)……আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, মুসলিম, ইয়াহূদী ও নাসারাদের উদাহারণ হল এরূপ, এক ব্যক্তি একদল লোককে কাজে নিয়োগ করল, তারা তার জন্য রাত পর্যন্ত কাজ করবে। কিন্তু অর্ধদিবস পর্যন্ত কাজ করার পর তারা বলল, আপনার পারিশ্রমিকের আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। সে ব্যক্তি অন্য আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল এবং বলল, তোমরা দিনের বাকী অংশ কাজ কর, তোমরা আমার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। তারা কাজ করতে শুরু করলে। যখন আসরের সালাতের সময় হল, তখন তারা বলল, আমরা যা কাজ করেছি তা আপনার জন্য রেখে গেলাম। তারপর সে ব্যক্তি আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বাকী অংশ কাজ করল এবং সে দুই দলের পূর্ণ পারিশ্রমিক হাসিল করে নিল।
হাদিস ৫৩২
মুহাম্মদ ইব্ন মিহারান (র.)……রাফি’ ইব্ন খাদীজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.) – এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেত।
হাদিস ৫৩৩
মুহাম্মদ ইব্ন বাশ্শার (র.)…..মুহাম্মদ ইব্ন আমর ইব্ন হাসান ইব্ন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইব্ন আমর(র.) বলেন, হাজ্জাজ (ইব্ন ইউসুফ) (মদীনা শরীফে) এলে আমরা জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ্(রা.)-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, (কেননা, হাজ্জাজ ইব্ন ইউসুফ বিলম্ব করে সালাত আদায় করতেন)। তিনি বললেন, নবী (সা.) যুহরের সালাত প্রচণ্ড গরমের সময় আদায় করতেন। আর আসরের সালাত সূর্য উজ্জল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সবাই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সাকাল সকাল আদয় করতেন। আর যদি দেখতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করতেন। আর ফজরের সালাত তাঁরা কিংবা রাসূলুল্লাহ্(সা.) অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন।
হাদিস ৫৩৪
মাক্কী ইবনে ইব্রাহীম (র.)……সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা নবী (সা.) – এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম।
হাদিস ৫৩৫
আদম (র.)…..ইব্ন আব্বাস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) (মাগরিব ও ইশার) সাত রাকআত ও (যুহর ও আসরের) আট রাকাআত একসাথে আদায় করেছেন।
হাদিস ৫৩৬
আবু মা’মার আবদুল্লাহ্ইব্ন আমর (র.)……আবদুল্লাহ্মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ বেদুঈনরা মাগরিবের সালাতের নামের ব্যাপারে তোমাদের উপর যেন প্রভাব বিস্তার না করে। রাবী (আবদুল্লাহ্মুযানী (রা.)) বলেন, বেদুঈনরা মাগরিবকে ইশা বলে থাকে।
হাদিস ৫৩৭
আবদান (র.)……আবদুল্লাহ্(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ্(সা.) আমাদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করেন, যে সালাতকে লোকেরা ‘আতামা’ বলে থাকে। তারপর তিনি ফিরে আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমারা জান কি? এ রাত থেকে নিয়ে একশ’ বছরের শেষ মাথায় আজ যারা ভূপৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
হাদিস ৫৩৮
মুসলিম ইব্ন ইব্রাহীম (র.)……মুহাম্মাদ ইব্ন আমর ইব্ন হাসান ইব্ন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ্(রা.)-কে নবী (সা.)-এর সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মধ্যাহ্ন গড়ালেই নবী (সা.) যুহরের সালাত আদায় করতেন এবং সূর্য সতেজ থাকতেই আসর আদায় করতেন, আর সূর্য আস্ত গেলেই মাগরিব আদায় করতেন, আর লোক বেশী হয়ে গেলে ইশার সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করতেন এবং লোক কম হলয়ে দেরী করতেন, আর ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতেই আদায় করতেন।
হাদিস ৫৩৯
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন বুকাইর (র.)…..আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইশার সালাত আদায় করতে বিলম্ব করলেন। এ হলো ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের আগের কথা। (সালাতের জন্য) তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি উমর (রা.) বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে।এরপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমারা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ইশার সালাতের জন্য অপেক্ষায় নেই।”
হাদিস ৫৪০
মুহাম্মদ ইব্ন আলা (র.)……আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার সংগীরা-যারা (আবিসিনিয়া থেকে) জাহাজ যোগে আমার সংগে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন- বাকী’য়ে বুতহানের একটি মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন নবী (সা.) থাকতেন মদীনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে এশার সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ইশার সালাতের সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী নবী (সা.) – এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোন কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সালাত আদায়ে বিলম্ব করলেন। এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেল। তারপর নবী (সা.) বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিছি যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এটি এক নিয়ামত যে, তোমরা ব্যতীত মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সালাত আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ব্যতীত কোন উম্মাত এ সময় সালাত আদায় করেনি। রাসূলুল্লাহ্(সা.) কোন বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হযরত আবূ মূসা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ী ফিরলাম।