আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : এটি তো তার পোষাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর উমর রা. আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ততদিন অতিবাহিত করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, উমর রা. তা গ্রহণ করেন এবং সেটি নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। অথচ আপনি এ জুব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তুমি এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।
হাদীস নং ৯০২
আহমদ ইবনে ঈসা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবু বকর রা. এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ) বাজান হচ্ছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ! তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্যদিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তাঁর গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বনু আরফিদা ! পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তাহলে চলে যাও।
হাদীস নং ৯০৩
হাজ্জাজ (ইবনে মিনহাল) রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন : আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত আদায় করা। এরপর ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। তাই যে এরূপ করে সে আমাদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করল।
হাদীস নং ৯০৪
উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবু বকর রা. এলেন তখন আমার নিকট আনসার দুটি মেয়ে বুআস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবু বকর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আবু বকর ! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দ।
হাদীস নং ৯০৫
মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহীম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর বর্ণনায় আনাস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন।
হাদীস নং ৯০৬
মুসাদ্দাদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সালাতের আগে যে যবেহ করবে তাকে আবার যবেহ (কুরবানী) করতে হবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজকের এদিন গোশত খাওয়ার আকাংখ্যা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার কাছে দুটি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চাইতেও বেশী পছন্দনীয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি না ?
হাদীস নং ৯০৭
উসমান রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। খুতবায় তিনি বলেন : যে আমাদের মত সালাত আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবানী করল, সে কুরবানীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে ব্যক্তি সালাতের আগে কুরবানী করল তা সালাতের আগে হয়ে গেল, কিন্তু এতে তার কুরবানী হবে না। বারা-এর মামা আবু বুরদাহ ইবেন নিয়ার রা. তখন বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমার জানামতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পছন্দ করলাম যে, আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ করা হোক আমার বকরীই। তাই আমি আমার বকরীটি যবেহ করেছি এবং সালাতে আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশতাও করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার বকরীটি গোশতের উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়েছে । তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের কাছে এমন একটি ছয় মাসের মেষ শাবক আছে যা আমার কাছে দুটি বকরীর চাইতেও পছন্দনীয়। এটি (কুরবানী দিলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ, তবে তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন যথেষ্ট হবে না।