হাদিস ৭৬৮
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান। কোন কোন সময় সুফিয়ান রহ. হাদীস বর্ণনা করার সময় عن فرس শব্দের স্থলে من فرس শব্দ বলতেন। ফলে তার ডান পাজর আহত হয়ে পড়ে। আমরা তার শুশ্রূষা করার জন্য সেখানে গেলাম। এ সময় সালাতের ওয়াক্ত হল। তিনি আমাদের নিযে বসে সালাত আদায় করলেন, আমরাও বসেই আদায় করলাম। সুফিয়ান রহ. আর একবার বলেছেন, আমরা বসে সালাত আদায় করলাম। সালাতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাকে ইকতিদা করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন রুকু থেকে উঠেন তখন তোমরাও উঠবে, তিনি যখন سمع الله لمن حمده বলবে, তখন তোমরা ربنا ولك الحمد বলবে। তিনি যখন সিজদা করেন, তখন তোমরাও সিজদা করবে। সুফিয়ান রহ. বলেন, তিনি ঠিকই স্মরণ রেখেছেন, এ রূপই যুহরী রহ. ولك الحمد বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান রহ. বলেন, (যুহরীর কাছ থেকে) ডান পাজর যখন হওয়ার কথা মুখস্থ করেছিলাম। কিন্তু যখন তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে আসলাম, তখন ইবনে জুরায়জ রহ. বললেন, আমিও তাঁর কাছে ছিলাম। (তিনি বলেছেন,) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডান পায়ের নল যখম হয়েছিল।
হাদিস ৭৬৯
আবুল ইয়ামান রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা কি কিয়ামতের দিনি আমাদের রবকে দেখতে পাব ? তিনি বললেন : মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর ? তারা বললেন, না ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে ? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন : নি:সন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে অনুরূপভাবে দেখতে পাবেব। কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলবেল, যে যার উপাসনা করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র এ উম্মাহ, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন : আমি তোমাদের রব। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের শুভাগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন শুভাগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং তাকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ তা’আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতু পথ ((পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মাত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবে : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) ইয়া আল্লাহ, রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে, সেগুলো হবে সাদান কাটার মতো। তোমরা কি সাদান কাটা দেখেছ ? তারা বলবে, হাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সাদান কাটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। সে কাটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে আমালের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিন্তু লোক কাটায় আক্রান্ত হবে, তারপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ পাক রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফেরেশতাগণ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের উপর আবে-হায়াত ঢেলে দেওয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামিদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব ! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এ ছাড়া আর কিছুই চাইবে না তো ? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের শপথ ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ তা’আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা’আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। এরপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। তারপর সে বলবে, হে আমার রব ! আপনি জান্নাতের দরজার কাছে পৌছে দিন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি ? তখন সে বলবে, হে আমার রব ! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাৎক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পুরন করা হলে তুমি এ ছাড়া চাইবে না তো ? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের কসম ! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে। এরপর সে বলবে, হে আমার রব ! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন : হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য ! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী ! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না ? তখন সে বলবে, হে আমার রব ! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্খা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন : এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন : এ সবই তোমার, এ সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেওয়া হল) । আবু সাঈদ খুদরী রা. আবু হুরায়রা রা. কে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলবেন : এ সবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেওয়া হল)। আবু হুরায়রা রা. বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ।