হাদিস ৫১২
আদম ইব্ন আবূ ইয়াস (র.)……আবূ যার্র (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ্(সা.)- এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্যিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী (সা.) বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষন পর আবার মুয়ায্যিন আযান দিতে চাইলে নবী (সা.) (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমার টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। তারপ্র নবী (সা.) বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। ইব্ন আব্বাস (রা.) বলেন, হাদীসে শব্দটি ঝুঁকে পড়া, গড়িয়ে পড়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
হাদিস ৫১৩
আবুল ইয়ামান (র.)……আনাস ইবন্মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সূয ঢলে পড়লে রাসূলুল্লাহ্(সা.) বেরিয়ে এলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর মিম্বরে দাঁড়িয়ে কিয়ামত সম্বন্ধে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, কেয়ামতে বহু ভয়াঙ্ক ঘটনা ঘটবে। এরপর তিনি বলেন, আমাকে কেউ কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে করতে পারে। আমি যতক্ষন এ বৈঠকে আছি, এর মধ্যে তোমরা আমাকে যা কিছু জিজ্ঞাসা করবে আমি তা জানিয়ে দিব। এ শুনে লোকেরা খুব কাঁদতে শুরু করল। আর তিনি বলতে থাকলেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর, আমাকে প্রশ্ন কর। এ সময় আব্দুল্লাহ্ইব্ন হুযাইফা সাহমী (রা.) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার পিতা কে? রাসূলুল্লাহ্(সা.) বললেন, তোমার পিতা ‘হুযাইফা’। এরপর তিনি অনেকবার বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন হযরত উমর (রা.) নতজানু হয়ে বসে বললেন, “আমরা আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসাবে। ইসলামকে দীন হিসাবে এবং মুহাম্মদ (সা.) – কে নবী হিসাবে হ্রহণ করে সন্তুষ্ট। এরপর নবী (সা.) নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণ পর বললেনঃ এক্ষনি এ দেওয়ালের পাশে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল; এত উত্তম ও এত নিকৃষ্টের মত কিছু আমি আর দেখিনি।
হাদিস ৫১৪
হাফ্সা ইব্ন উম্র (র)……আবূ বারযা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পাশব্বতী আপরজনকে চিনতে পারত। আর এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য পশিম দিকে ঢলে পড়ত। তিনি আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে পৌছে আবার ফেরে আসতে পারত, তখনও সূর্য সতেজ থাকত। রাবী বলেন, মাগরিব সম্পর্কে তিনি [আবূ বারযা (রা.] কী বলেছিলেন,আমি তা ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনরূপ দ্ধিধাবোধ করতেন না। তারপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করতেন না। আর মু’আয (র.) বর্ণনা করেন যে, শু’বা (র.) বলেছেন, পরে আবুল মিনহালের (র.) সংগে সাক্ষাত হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছেন, রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বলম্ব করতে অসুবিধা বোধ করতেন না।
হাদিস ৫১৫
মুহাম্মদ ইব্ন মুকাতিল (র.)……আনাস ইব্ন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর পিছনে গরমের সময় সালাত আদায় করতাম, তখন উত্তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাপড়ের উপর সিজদা করতাম।
হাদিস ৫১৬
আবূ নু’মান (র.)……ইব্ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) মদীনা শরীফে অবস্থানকালে (একবার) যুহর ও আসরের আট রাকাআত এবং মাগরিব ও ইশার সাত রাকাআত একএে মিলেয়ে আদায় করেন। আয়্যূব (র.) বলেন, সম্ভবত এটা বৃষ্টির রাতে হয়েছিল। জাবির (র.) বললেন, সম্ভবত তাই।
হাদিস ৫১৭
ইব্রাহীম ইব্ন মুনযির (র.)…… আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করতেন যে, তখনো সূর্যরশ্মি ঘরের বাইরে যায়নি।
হাদিস ৫১৮
কুতাইবা (র.)…..আয়িশা (রা.) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েনি।
হাদিস ৫১৯
আবূ নু’আইম (র.)……আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্যকিরণ তখনো আমার ঘরে থাকত। সালাত আদায় করার পড়ও পশ্চিমের ছায়া ঘরে দৃষ্টিগোচর হত না। আবূ আবদুল্লাহ্[ইমাম বুখারী (র.)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্ইয়া ইব্ন সাঈদ, শুআইব ও ইব্ন আবূ হাফস্(র.) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়’ সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝে ছায়া নেমে আসেনি’ এরূপ বলেছেন।
হাদিস ৫২০
মুহাম্মদ ইব্ন মুকাতিল (র.)…..সায়্যার ইব্ন সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রা.) – কাছে গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ফরয সালাতসমূহ কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বললেন, আল-হাজীর, যাকে তোমরা আল-উলা বা যুহর বলে থাক, তা তিনি আদায় করতেন যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ত। আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, তারপর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রন্তে তার ঘরে ফিরে যেতো সূর্য তখনও সতেজ থাকতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন তা আমি ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত যাকে তোমরা ‘আতামা’ বলে থাক, তা তিনি বিলম্বে আদায় করা পসন্দ করতেন। আর তিনি ইশার সালাতের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপসন্দ করতেন। তিনি ফজরের সালাত এমন সময় সমাপ্ত করতেন যখন প্রত্যেকে তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তেলাওয়াত করতেন।