হাদিস ৭১৮
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমানগণ ফযরের সালাতে রত এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা.-এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তারা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন। তা দেখে তিনি মুচকী হাসলেন। আবু বকর রা. তাঁর ইমামতির স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হওয়ার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতে চান। মুসলিম গণ সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইশারায় তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ কর। তারপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনেরই শেষভাগে তাঁর ইনতিকাল হয়।
হাদিস ৭১৯
মূসা রহ…..জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুফাবাসীরা সাদ রা.-এ বিরুদ্ধে উমর রা.-এর নিকট অভিযোগ করেন। কুফার লোকেরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন এবং আম্মার রা.-কে তাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কুফার লোকেরা সাদ রা.-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে এ-ও বলে যে, তিনি ভালোরূপে সালাত আদায় করতে পারেন না। উমর রা. তাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, হে আবু ইসহাক! তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, আপনি নাকি ভালোরূপে সালাত আদায় করতে পারেন না। সাদ রা. বললেন, আল্লাহর শপথ ! আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের অনুরূপই সালাত আদায় করে থাকি। তাঁতে কোন ত্রুটি করি না। আমি ইশার সালাত আদায় করতে প্রথম দু’রাকাআতে একটু দীর্ঘ ও শেষের দু’রাকাআতে সংক্ষেপ করতা। উমর রা. বললেন, হে আবু ইসহাক! আপনার সম্পর্কে আমরা এ-ই ধারণা। তারপর উমর রা. কুফার অধিবাসীদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সাদ রা. -এর সঙ্গে কুফায় পাঠান। সে ব্যক্তি প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সাদ রা. সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল এবং তারা সকলেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি বনু আবস গোত্রের মসজিদে উপস্থিত হয়। এখানে উসামা ইবনে কাতাদাহ নামে এক ব্যক্তি যাকে আবু সাদাহ বলে ডাকা হত-দাঁড়িয়ে বলল, যেহেতু তুমি আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছ, সাদ রা. কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যান না, গনীমতের মাল সবভাবে বন্টন করেন না এবং বিচারে ইনসাফ করেন না। তখন সাদ রা. বললেন, মনে রেখো, আল্লাহর শপথ! আমি তিনটি দুআ করছি : ইয়া আল্লাহ ! যদি তোমার এ বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, লোক দেখানো এবং আত্মপ্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে-১. তার হায়াত বাড়িয়ে দিন, ২. তার অভাব বাড়িয়ে দিন এবং ৩. তাকে ফিতার সম্মুখীন করুন। পরবর্তীকালে লোকটিকে (তার অবস্থা সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলত, আমি বয়সে বৃদ্ধ, ফিতনায় লিপ্ত। সাদ রা. -এর দুআ আমার উপর লেগে আছে। বর্ণনাকারী আবদুল মালিক রহ. বলেন, পরে আমি সে লোকটিকে দেখেছি, অতিবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার উভয় ভ্রু চোখের উপর ঝুলে পড়েছে এবং সে পথে মেয়েদের উত্যক্ত করত এবং তাদের চিমটি কাটতো।
হাদিস ৭২০
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ…….উবাদা ইবনে সামিত রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার নামায হল না।
হাদিস ৭২১
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন একজন সাহাবী এসে সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন : ফিরে গিয়ে আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন। সাহাবী বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন-আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করতে জানি না। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন : যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। তারপর রুকতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদায় যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর এভাবেই পুরো সালাত আদায় করবে।
হাদিস ৭২২
আবু নুমান রহ………জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত যে, সাদ রা. বলেন, আমি তাদেরকে নিয়ে বিকালের দু’ সালাত (যুহর ও আসর) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালতের ন্যায় সালাত আদায় করতাম। এতে কোন ত্রুটি করতাম না। প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘয়িত এবং শেষে দু’রাকাআতে তা সংক্ষিপ্ত করতাম। উমর রা. বলেন, তোমার সম্পর্কে এরূপই ধারণা।
হাদিস ৭২৩
আবু নুআইম রহ……আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সহিত আরও দুটি সূরা পাঠ করতেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন। কখনো কোন আদায় শুনিয়ে পড়তেন। আসরের সালাতেও তিনি সূরা ফাতিহার সাথে দুটি সূরা পড়তেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন। ফজরের প্রথম রাকাআতেও তিনি দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন।