হাদিস ৬৪৭
আবু মা’মার (র.)………… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রোগশয্যায় থাকার কারণে) তিনি দিন পর্যন্ত নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাইরে আসেন নি। এ সময় একবার সালাতের ইকামত দেওয়া হল। আবু বকর (রাঃ) ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তখন নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাতের ইশারায় আবু বকর (রাঃ) কে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে যেতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দেন। তারপর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
হাদিস ৬৪৮
ইয়াহিয়া ইবন সুলাইমান (র.)………… আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রোগ যখন খুব বেড়ে গেল, তখন তাঁকে সালাতের জামা’আত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক। কিরা’আতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। তিনি বললেন, তাকেই সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) সে কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি আবারো বললেন, তাঁকেও সালাত আদায় করতে বল। তোমরা ইউসুফ (আঃ) এর সাথী রমণীদের মত। এ হাদীসটি যুহরীর (র.) থেকে বর্ণনা করার ব্যাপারে যুবাইদী যুহরীর ভাতিজা ও ইসহাক ইবন ইয়াহইয়া কালবী (র.) ইউনুস (র.) এর অনুসরণ করেছেন এবং মা’মার ও উকায়ল (র.) যুহরী (র.) এর মাধ্যমে হামযা (র.) সূত্রে নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদিসটি (মুরসাল হিসাবে) বর্ণনা করেন।
হাদিস ৬৪৯
যাকারিয়া ইবন ইয়াহইয়া (র.)………… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। উরওয়া (রাঃ) বর্ননা করেন, ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটু সুস্থতা বোধ করলেন এবং সালাতের জন্য বেরিয়ে আসলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তিনি নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে ইশারা করলেন যে, যেভাবে আছ সেভাবেই থাক। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রাঃ) এর বরাবর তাঁর পাশে বসে গেলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিলেন আর লোকেরা আবু বকর (রাঃ) কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিল।
হাদিস ৬৫০
আবুদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.)………… সাহল ইবন সা’দ সায়িদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমর ইবন আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতিমধ্যে (আসরের) সালাতের সময় হয়ে গেলে, মুয়াজ্জিন আবু বকর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেবেন? তা হলে ইকামত দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আবু বকর (রাঃ) সালাত আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাতে থাকতে থাকতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাশরীফ আনলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে গেলেন।১ তখন সাহাবীগন হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবু বকর (রাঃ) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগন বেশী করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতি ইশারা করলেন – নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বকর (রাঃ) দু’হাত উঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবু বকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কি সে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবু বকর (রাঃ) বললেন, আবু কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা শোভা পায় না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাদের এত হাতে তালি দিতে দেখলাম। ব্যাপার কি? শোন! সালাতে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তাঁর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হবে। আর হাতে তালি দেওয়া তো মহিলাদের জন্য।
হাদিস ৬৫১
সুলাইমান ইবন হারব (র.)………… মালিক ইবন হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদল যুবক একবার নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর খেদমতে হাযির হলাম এবং প্রায় বিশ দিন আমরা সেখানে থাকলাম। নবী (করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা যখন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের দীন শিক্ষা দিবে, তখন তাদের এ সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে। এবং ওই সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে। তারপর যখন সালাতের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ইমামতি করবে।