হাদিস ৪৫
আহমদ ইব্ন ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন ‘আলী আল-মানজূফী (রঃ) ……… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কোন মুসলমানের জানাযায় অনুগমন করে এবং তার সালাত-ই জানাযা আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সাথে থাকে, সে দুই কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কীরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযা আদায় করে, তারপর দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই চলে আসে, সে এক কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে।
‘উসমান আল-মুয়ায্যিন (রঃ) ……… আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী করীম (সাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৪৬
মুহাম্মদ ইব্ন ‘আর ‘আরা (রঃ) ……… যুবায়দ (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল (র)-কে মুরজিআ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ (ইব্ন মাস’উদ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।
হাদিস ৪৭
কুতায়বা ইব্ন সা’ঈদ (রঃ) ……… ‘উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লায়লাতুল কদ্র সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য বের হলেন। তখন দু’জন মুসলমান পরস্পর বিবাদ করছিল। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের লায়লাতুল কদ্র সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান কর ২৭, ২৯ ও ২৫ তম রাতে।
হাদিস ৪৮
মুসাদ্দাদ (রঃ) ……… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জনসমক্ষে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরাত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই নিকট…।” (৩১:৩৪)
এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল (আ)। লোকদের দীন শেখাতে এসেছিলেন।’
হাদিস ৪৯
ইবরাহীম ইব্ন হামাযা (রঃ) ……… আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ সুফিয়ান ইব্ন হারব আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ তা তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেউ তাঁর দীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, ‘না।’ প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
হাদিস ৫০
আবূ নু’আয়ম (রঃ) ……… নু’মান ইব্ন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, উদহারন সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভুমির আশে পাশে চরায়, অচিরেই সেগুলো সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব।
হাদিস ৫১
আলী ইবনুল জা’দ (রঃ) ……… আবূ জামরা (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইব্ন আব্বাস (রা) এর সঙ্গে বসতাম তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ থেকে কিছু অংশ দেব। আমি দু’ মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম। তারপর একদিন তিনি বললেন, আবদুল কায়েসের একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কোন কওমের? অথবা কোন প্রতিনিধিদলের? তারা বলল, রাবী‘আ গোত্রের।’ তিনি বললেনঃ মারহাবা সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লহ! নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোন সময় আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। (কারন) আমাদের এবং আপনার মাঝখানে মুযার গোত্রীয় কাফিরদের বাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে আমরা যাদের পিছনে রেখে এসেছি তাদের জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তারা পানীয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বললেনঃ ‘এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা জান?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।’ তিনি বললেনঃ ‘তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের সিয়াম পালন করা; আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলোঃ সবুজ কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরীকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র। রাবী বলেন, বর্ণনাকারী (—- এর স্থলে) কখনও —- উল্লেখ করেছেন (উভয় শব্দের অর্থ একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো করে আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে দিও।