১২. পরিচ্ছেদঃ ফিতনা থেকে পলায়ন দীনের অংশ
হাদিস ১৮
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসলামা (রঃ) ……… আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সেদিন দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চুড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা থেকে সে তার দীন নিয়ে পালিয়ে যাবে।
১৩. পরিচ্ছেদঃ নবী করীম-এর বাণী, “আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী। আর মারেফাত (আল্লার পরিচয়) অন্তরের কাজ। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ “কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করবেন।” (২:২২৫)
হাদিস ১৯
মুহাম্মদ ইব্ন সালাম (রঃ) ……… ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের যখন কোন আমলের নির্দেশ দিতেন তখন তাঁরা যতটুকু সমর্থ্য রাখতেন ততটুকুই নির্দেশ দিতেন। একবার তাঁরা বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ তা’আলা আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল ত্রুটি মা’ফ করে দিয়েছেন।’ একথা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি তাঁর চেহারা মুবারকে রাগের চিহ্ন প্রকাশ পাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের চাইতে আল্লাহকে আমিই বেশি ভয় করি ও বেশি জানি।
১৪. পরিচ্ছেদঃ কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার ন্যায় অপছন্দ করা ঈমানের অংগ
হাদিস ২০
সুলায়মান ইব্ন হারব (রঃ) ………. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়ঃ (১) যার কাছে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অন্য সব কিছু থেকে প্রিয়; (২) যে একমাত্র আল্লাহরই জন্য কোন বান্দাকে মুহব্বত করে এবং (৩) আল্লাহ তা’আলা কুফর থেকে মুক্তি দেওয়ার পর যে কুফরে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দ করে।
১৫. পরিচ্ছেদঃ আলমের দিক থেকে ঈমানদারদের শ্রেষ্ঠত্বের স্তরভেদ
হাদিস ২১
ইসমা’ঈল (রঃ) ……… আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবেন। পরে আল্লাহ্ তা’আলা (ফিরিশতাদের) বলবেন, যার অন্তরে একটি সরিষা পরিমানও ঈমান রয়েছে, তাকে দোযখ থেকে বের করে নিয়ে আস। তারপর তাদের দোযখ থেকে বের করা হবে এমন অবস্থায় যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। এরপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক (রঃ) শব্দ দু’টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন] নদীতে ফেলা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন নদীর পাশে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাওনা সেগুলো কেমন হলুদ রঙের হয় ও ঘন হয়ে গজায়? উহাইব (র) বলেন, ‘আমর (রঃ) আমাদের কাছে —- এর স্থলে —- এবং —— এর স্থলে —— বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ২২
মুহাম্মদ ইব্ন উবায়দুল্লাহ (রঃ) ……….. আবূ উমামা ইব্ন সাহল ইব্ন হুনাইফ (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম যে, লোকদেরকে আমার সামনে হাযির করা হচ্ছে। আর তাদের পরণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আমার সামনে হাযির করা হল এমন অবস্থায় যে, তিনি তাঁর জাম (এত লম্বা যে) টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি এর কী তা’বীর করেছেন? তিনি বললেনঃ (এ জামা মানে) দীন।
১৬. পরিচ্ছেদঃলজ্জা ঈমানের অংগ
হাদিস ২৩
আবদুল্লাহ্ ইব্ন ইউসুফ (রঃ) ……… আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক আনসারীর পাশ দেয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের জন্য নসীহত করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারন লজ্জা ঈমানের অংগ।
১৭.পরিচ্ছেদঃ যদি তারা তওবা করে, সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। (৯:৫)
হাদিস ২৪
আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মদ আল-মুসনাদী (রঃ) ………… ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছে, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই ও মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র রাসূল, আর সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। তারা যদি এ কাজগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করল; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারন থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর ওপর ন্যস্ত।
হাদিস ২৫
আহমদ ইব্ন ইউনুস ও মূসা ইব্ন ইসমা’ঈল (রঃ) ……. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন আমলটি উত্তম?’ তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনা।’ প্রশ্ন করা হল, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ প্রশ্ন করা হল, ‘তারপর কোনটি।’ তিনি বললেনঃ ‘মকবূল হজ্জ।’
হাদিস ২৬
আবুল ইয়ামান (রঃ) ……… সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। সা’দ (রাঃ) সেখানে বসা ছিলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের এক ব্যক্তিকে কিছু দিলেন না। সে ব্যক্তি আমার কাছে তাদের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় ছিল। তাই আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অমুক ব্যক্তিকে আপনি বাদ দিলেন কেন? আল্লাহর কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ (মু’মিন) না মুসলিম? তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি, তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম, আপনি অমুককে দানের ব্যপারে বিরত রইলেন? আল্লাহর কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ ‘না মুসলিম?’ তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর তার সম্পর্কে যা জানি তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবারও সেই জবাব দিলেন। তারপর বললেনঃ ‘সা’দ! আমি কখনো ব্যক্তি বিশেষকে দান করি, অথচ অন্য লোক আামার কাছে তার চাইতে বেশি প্রিয়। তা এ আশঙ্কায় যে (সে ঈমান থেকে ফিরে যেতে পারে পরিণামে), আল্লাহ তা’আলা তাকে অধোমুখে জাহান্নামে ফেলে দেবেন।