হাদিস ৪৫৭
আহমদ ইবনে সালিহ (র)……কা’ব ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) এর যুগে তিনি ইবনে আবূ হাদরাদের কাছে তাঁর প্রাপ্য সম্পর্কে মসজিদে নববীতে তাগাদা করেন। এতে উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। এমন কি সে আওয়াজ রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর ঘর থেকে শুনতে পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর ঘরের পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে বের হয়ে এলেন এবং কা’ব ইবনে মালিককে ডেকে বললেন: হে কা’ব! উত্তরে কা’ব বললেন: লাব্বায়কা ইয়া রাসূলুল্লাহ! তখন নবী (সা) হাতে ইশারা করলেন যে, তোমার প্রাপ্য থেকে অর্ধেক ছেড়ে দাও। কা’ব (রা) বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তাই করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) ইবনে আবূ হাদরাদ (রা) কে বললেন: উঠ এবার (বাকী) ঋণ পরিশোধ কর।
হাদিস ৪৫৮
মুসাদ্দাদ (র)……ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন সাহাবী নবী (সা) কে প্রশ্ন করলেন, তখন তিনি মিম্বরে ছিলেন: আপনি রাতের সালাত কিভাবে আদায় করতে বলেন? তিনি বললেন: দু-দু’রাকা’আত করে আদায় করবে। যখন তোমাদের কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা হয় তখন সে আরো এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। আর এইটি তার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দেবে। [নাফি (র) বলেন] ইবনে উমর (রা) বলতেন: তোমরা বিতরকে রাতের শেষ সালাত হিসাবে আদায় কর। কেননা নবী (সা) এই নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদিস ৪৫৯
আবূ নু’মান (র)…… ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী নবী (সা) এর কাছে এমন সময় আসলেন যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: রাতের সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়? নবী (সা) বললেন: দু’রাকা’আত দু’রাকা’আত করে আদায় করবে। আর যখন ভোর হওয়ার আশংকা করবে, তখন আরো এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। সে সালাত তোমার আগের সালাতকে বিতর করে দিবে। ওয়ালীদ ইবনে কাসীর (র) বলেন: উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (র) আমার কাছে বলেছেন যে, ইবনে উমর (রা) তাঁদের বলেছেন: এক সাহাবী নবী (সা) কে সম্বোধন করে বললেন, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন।
হাদিস ৪৬০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (র)……আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রা) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে ছিলেন। এমন সময় তিনি জন লোক এলেন। তাঁদের দু’জন রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে এগিয়ে এলেন আর একজন চলে গেলেন। এ দু’জনের একজন হালকায় খালি স্থান পেয়ে সেখানে বসে পড়লেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি মজলিসের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি পিঠটান দিয়ে সরে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সা) কথাবার্তা থেকে অবসর হয়ে বললেন: আমি কি তোমাদের ঐ তিন ব্যক্তি সম্পর্কে খবর দেব? এক ব্যক্তি তো আল্লাহর দিকে অগ্রসর হলো। আল্লাহও তাকে আশ্রয় দিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি লজ্জা করলো, আর আল্লাহ তা’আলাও তাকে (বঞ্চিত করতে) লজ্জাবোধ করলেন। তৃতীয় ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, কাজেই আল্লাহও তাঁর থেকে ফিরে থাকলেন।
হাদিস ৪৬১
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলাম (র)…… আব্বাদ ইবনে তামীম (র) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (তাঁর চাচা) রাসূলুল্লাহ (সা) কে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। ইবনে শিহাব (র) সা’ঈদ ইবনে মুসায়্যাব (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর ও উসমান (রা) এরূপ করতেন।
হাদিস ৪৬২
ইয়াহইয়া ইবনে বুকায়র (র) নবী (সা) এর সহধর্মিণী আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমার জ্ঞানমতে আমি আমার পিতা মাতাকে সব সময় দীনের অনুসরণ করতে দেখেছি। আর আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সে দিনের উভয় প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আমাদের কাছে আসেন নি। তারপর আবূ বকর (রা) এর মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তাঁর ঘরের আঙ্গিনায় একটি মসজিদ তৈরী করলেন। তিনি এতে সালাত আদায় করতেন ও কুরান তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সেখানে দাঁড়াত এবং তারা বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আবূ বকর (রা) ছিলেন একজন অধিক রোদনকারী ব্যক্তি। তিনি কুরআন পড়া শুরু করলে অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। তাঁর এ অবস্থা নেতৃস্থানীয় মুশরিক কুরাইশদের শঙ্কিত করে তুলল।
হাদিস ৪৬৩
মুসাদ্দাদ (র)…… আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেছেন: জামা’আতের সাথে সালাত আদায় করলে ঘর বা বাইরে সালাত আদায় করার চাইতে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সালাতের শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তার জন্যে এ বলে দুয়া করেন: ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, ইয়া আল্লাহ! তাকে রহম করুন, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, সেখানে ভঙ্গের কাজ না করে।
হাদিস ৪৬৪
হামিদ ইবনে উমর (র)……ইবনে উমর বা ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সা) এক হাতের আঙুল অন্য এক হাতের আঙুলে প্রবেশ করান। আসিম ইবনে আলী (র) থাকে বর্ণিত, আসিম ইবনে মুহাম্মদ (র) বলেন: আমি এ হদীস আমার পিতা থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। এরপর এ হাদীসটি আমাকে ঠিকভাবে বর্ণনা করেন ওয়াকিদ (র) তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন: আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, আব্দুলাহ ইবনে আমর (রা) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন: হে আবদুল্লাহ ইবনে আমর! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের সাথে অবস্থান করবে, তখন তোমার অবস্থা কি হবে?
হুমায়দী (র) তাঁর আল আজম’উ বাইনাস সাহিহাইন গ্রন্তে ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত হদীস এরূপ বর্ণনা করেন, নবী (সা) এক হাতের আঙুল অর এক হাতের আঙুলে প্রবেশ করান এবং বলেন: হে আবদুল্লাহ! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের মধ্যে অবস্থান করবে তখন তোমার অবস্থা কি হবে? তাদের অঙ্গীকার পূরণ করা হবে না ও আমানতে খেয়ানত করা হবে এবং তাদের মতানৈক্য দেখা দিবে। আরে তার এরূপ হয়ে যাবে এবং তিনি এক হাতের আঙুল আরেক হাতে প্রবেশ করান। আবদুল্লাহ (রা) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তখন আমি কি করব? তিনি বললেন, যা তুমি শরী’আত সম্মত বলে জান তা গ্রহণ কর, আর যা শরী’আত বিরোধী বলে মনে করবে তা বর্জন করবে। -উমাদাতুল ক্বারী, ৪খ,পৃ-২২৬