হাদিস ৪১১
ইয়াহইয়া (র)……সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য ব্যক্তিকে দেখতে পেলে কি সে তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তার স্ত্রী একে অন্যকে লি’য়ান করল। তখন আমি উপস্থিত ছিলাম।
হাদিস ৪১২
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (র)……ইতবান ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা) তার ঘরে এলেন এবং বললেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: তখন আমি তাঁকে একটি স্থানের দিকে ইশারা করলাম। নবী (সা) তাকবীর বললেন। আমরা তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম তিনি দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন।
হাদিস ৪১৩
সা’ঈদ ইবনে উফায়র (র)……মাহমুদ ইবনে রাবী আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনে মালিক (রা), যিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে হাযির হয়ে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরিফ নিয়ে কোন এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। রাবি বলেন: তাকে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: ইনশা আল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ইতবান (রা) বলেন: পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বকর (রা) আমার ঘরে তাশরিফ আনেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইংগিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। তিনি (ইতবান) বলেন: আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর তৈরী ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেন: এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে বলে উঠলেন, ‘মালিক ইবনে দু’খাইশিন’ কোথায়? অথবা বললেন ‘ইবনে দুখশুন’ কোথায়? তখন একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসে না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন: এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে? তখন সে ব্যক্তি বললেন: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আমরা তো তাঁর সম্পর্ক ও হিত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: আল্লাহ তা’য়াল তো এমন ব্যক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তোষটি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। রাবী ইবনে শিহাব বলেন: তারপর আমি মাহমুদ ইবনে রাবী (রা) এর হদীস সম্পর্কে হোসাইন ইবনে মুহম্মদ আনসারী (র)কে জিজ্ঞাসা করলাম, যিনি বানূ সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এ হদীস সমর্থন করলেন।
হাদিস ৪১৪
সুলায়মান ইবনে হারব (র)……আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সা) নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক থেক আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। পবিত্রতা হাসিলের সময়, মাথা আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরিধানের সময়ও।
হাদিস ৪১৫
মুহম্মদ ইবনে মুসান্না (র) ……আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত যে, উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালমা (রা) হাবশায় তাঁদের দেখা একটি গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নবী (সা) এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করলেন: তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরী করে রাখতো। কিয়ামতের দিন তারাই আল্লাহর কাছে সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে গণ্য হবে।
হাদিস ৪১৬
মুসাদ্দাদ (র) ……আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সা) মদিনায় পৌঁছে প্রথমে মদীনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বানূ ‘আমর ইবনে আউফ’ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে নবী (সা) চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। তারপর তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হলো। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি যে, নবী (সা) ছিলেন তার বাহনের উপর, আবূ বকর (রা) সে বাহনেই তাঁর পেছনে আর বানূ নাজ্জারের দল তাঁর আশেপাশে। অবশেষে তিনি আবূ আইয়্যুব আনসারী (রা) এর ঘরে সামনে অবতরণ করলেন। নবী (সা) যেখানেই সালাতের ওয়াক্ত হয় সেখানেই সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোয়ারেও সালাত আদায় করতেন। এখন তিনি মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেন। তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে বললেন: হে বানূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ আল্লাহর কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশা করি। আনাস (রা) বলেন: আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। নবী (সা) এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুরে ফেলা হলো। তারপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হলো, খেজুরের গাছ গুলো কেটে ফেলা হলো এবং এর দুই পাশে পাথর বসানো হলো। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নবী (সা)-ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেন:
“ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া (প্রকৃতপক্ষে) আর কোন কল্যাণ নেই। আপনি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা করে দিন।