বুখারি হাদিস ১৯৫
‘আবদুল্লাহ ইবন মুনীর (র)…আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ী নিকটে ছিল তাঁরা (উযূ করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোন উযূর ব্যবস্থা ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ –এর জন্য একটি পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক উযূ করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনারা কতজন ছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আশিজন বা আরো বেশী।’
বুখারি হাদিস ১৯৬
মুহাম্মদ ইবনুল ‘আলা (র)… আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার নবী একটি পানি ভর্তি পাত্র আনালেন। তাতে তাঁর উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুইলেন এবং কুলি করলেন।
বুখারি হাদিস ১৯৭
আহমদ ইবন ইউনুস (র)… ‘আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ আমাদের বাড়ীতে এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি পাত্রে পানি দিলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ করলেন। তাঁর মুখমণ্ডল তিনবার ও উভয় হাত দু’ দু’বার করে ধুইলেন এবং তাঁর হাত সামনে ও পেছনে এনে মাথা মসেহ করলেন আর উভয় পা ধুইলেন।
বুখারি হাদিস ১৯৮
আবুল ইয়ামান (র)… ‘আয়িশা (রা) বলেন, নবী –এর রোগ যন্ত্রণা বেড়ে গেলে তিনি আমার ঘরে শুশ্রূষার জন্য তাঁর পত্নীগনের অনুমতি চাইলেন। তাঁরা অনুমতি দিলে নবী (আমার ঘরে আসার জন্য) দু’ব্যক্তির ওপর ভর করে বের হলেন। আর তাঁর পা দু’খানি তখন মাটিতে চিহ্ন রেখে যাচ্ছিল। তিনি ‘আব্বাস (রা) ও অন্য এক ব্যক্তির মাঝখানে ছিলেন। ‘উবায়দুল্লাহ (র) বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস (রা)- কে এ কথা অবহিত করলাম। তিনি বললেন, সে অন্য ব্যক্তিটি কে তা কি তুমি জান? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি হলেন ‘আলী ইবন আবূ তালিব (রা)। ‘আয়িশা (রা) বর্ণনা করেন, নবী তাঁর ঘরে আসার পর রোগ আরো বেড়ে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমরা আমার উপর মুখের বাঁধন খোলা হয়নি এমন সাতটি মশকের পানি ঢেলে দাও, তাহলে হয়ত আমি মানুষকে কিছু ওয়াসিয়্যাত করব।’ তাঁকে তাঁর সহধর্মিণী হাফসা (রা) এর একটি বড় পাত্রের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হল। তারপর আমরা তাঁর ওপর সেই সাত মশক পানি ঢালতে শুরু করলাম। এভাবে ঢালার পর এক সময় তিনি আমাদের প্রতি ইশারা করলেন, (এখন থাম) তোমরা তোমাদের কাজ করেছ। এরপর তিনি বের হয়ে জনসমক্ষে গেলেন।
বুখারি হাদিস ১৯৯
খালিদ ইবন মাখলাদ (র)… ইয়াহইয়া (র) বলেন, আমার চাচা উযূর পানি বেশী খরচ করতেন। একদিন তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রা)- কে বললেন, ‘আপনি নবী কে কিভাবে উযূ করতে দেখেছেন’? তিনি এক গামলা পানি আনালেন। সেটি উভয় হাতের ওপর কাত করে (তা থেকে পানি ঢেলে) হাত দু’খানি তিনবার ধুইলেন, তারপর তাঁর হাত গামলায় ঢুকালেন। তারপর এক আঁজলা পানি দিয়ে তিনবার কুলি করলেন এবং নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর পানিতে তাঁর হাত ঢুকালেন। উভয় হাতে এক আঁজলা পানি নিয়ে মুখমণ্ডল তিনবার ধুইলেন। তারপর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার করে ধুইলেন। তারপর উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার সামনে এবং পেছনে মসেহ করলেন এবং দু’পা ধুইলেন। তারপর বললেন, ‘আমি নবী কে এভাবেই উযূ করতে দেখেছি।’
বুখারি হাদিস ২০০
মুসাদ্দাদ (র)… আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, নবী একপাত্র পানি চাইলেন। একটি বড় পাত্র তাঁর কাছে আনা হল, তাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে তাঁর আঙ্গুল রাখলেন। আনাস (রা) বলেন, আমি পানির দিকে তাকাতে লাগলাম। তাঁর আঙ্গুলের ভেতর দিয়ে পানি উথলে উঠতে লাগল। আনাস (রা) বলেন, যারা উযূ করেছিল, আমি অনুমান করলাম তাদের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ জন।
missing 201- 245
গোসল অধ্যায় (২৪৬-২৮৯)
হাদিস ২৪৬
‘আবদুল্লাহ ইব্ন ইউসুফ (র)… ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। তারপর সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। তারপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। তারপর তার উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি পৌঁছিয়ে দিতেন।
হাদিস ২৪৭
মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন, অবশ্য পা দুটো ছাড়া এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নাপাক লেগেছে তা ধুয়ে নিলেন। তারপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর থেকে সরে গিয়ে পা দুটো ধুয়ে নেন। এই ছিল তাঁর জানাবাতের গোসল।
হাদিস ২৪৮
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও নবী (সাঃ) একই পাত্র (কাদাহ) থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।
হাদিস ২৪৯
আবু সালমা (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও ‘আয়িশা (রাঃ) এর ভাই ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তাঁর ভাই তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি প্রায় এক সা’ (তিন কেজির চেয়ে কিছু পরিমাণ বেশি) এর সমপরিমাণ এক পাত্র আনলেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং নিজের মাথার উপর পানি ঢাললেন। তখন আমাদের ও তাঁর মাঝে পর্দা ছিল।
হাদিস ২৫০
আবু জাফর (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ও তাঁর পিতা জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে ছিলেন। সেখানে আরো কিছু লোক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এক সা’ তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলঃ আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়। জাবির (রাঃ) বললেনঃ যাঁরা মাথায় তোমার চাইতে বেশি চুল ছিল এবং তোমার চাইতে যিনি উত্তম ছিলেন [রাসূলুল্লাহ সাঃ)] তাঁর জন্য তো এ পরিমাণই যথেষ্ট ছিল। তারপর তিনি এক কাপড়ে আমাদের ইমামতি করেন।