বুখারি হাদিস ১৭৬
আদম ইবন আবূ ইয়াস (র)… আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, বান্দা যে সময়টা মসজিদে থেকে সালাতের অপেক্ষায় থাকে, তার সে পুরো সময়টাই সালাতের মধ্যে গণ্য হয় যতক্ষণ না সে হাদাস করে। এক অনারব ব্যক্তি বলল, ‘হাদাস কি, আবূ হুরায়রা’? তিনি বললেন, ‘শব্দ করে বায়ূ বের হওয়া।’
বুখারি হাদিস ১৭৭
আবুল ওয়ালীদ (র)… ‘আব্বাস ইবন তামীম (র), তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী বলেছেনঃ (কোন মুসল্লি) সালাত থেকে ফিরবে না যতক্ষণ না সে শব্দ শুনে বা গন্ধ পায়।
বুখারি হাদিস ১৭৮
কুতায়বা (র) মুহাম্মদ ইবনুল হানফিয়্যা (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ‘আলী (রা) বলেছেন, আমার বেশী বেশী মযী বের হতো। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এতে শুধু উযূ করতে হয়। হাদিসটি শু‘বা (র) আ‘মাশ (র) থেকে বর্ণিত।
বুখারি হাদিস ১৭৯
সা‘দ ইবন হাফস (র)… যায়দ ইবন খালিদ (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, তিনি ‘উসমান ইবন ‘আফফান (রা) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সে উযূ করে নেবে যেমন উযূ করে থাকে সালাতের জন্য এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রা) বলেন, আমি একথা রাসূলুল্লাহ থেকে শুনেছি। (যায়দ বলেন) তারপর আমি এ সম্পর্কে ‘আলী (রা), যুবায়র (রা), তালহা (রা) ও উবাই ইবন কা‘ব (রা)- কে জিজ্ঞাসা করেছি। তাঁরা আমাকে এ নির্দেশই দিয়েছেন।
বুখারি হাদিস ১৮০
ইসহাক ইবন মনসূর (র)… আবূ সা‘য়ীদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ এক আনসারীর কাছে লোক পাঠালেন। তিনি চলে এলেন। তখন তাঁর মাথা থেকে পানির ফোঁটা পড়ছিল। নবী বললেনঃ ‘সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াতাড়ি করতে বাধ্য করেছি।’ তিনি বললেন, ‘জী।’ রাসূলুল্লাহ বললেন, যখন ত্বরার কারণে মনী বের না হয় (অথবা বললেন), মনীর অভাবজনিত কারণে তা বের না হয় তবে তোমার উপর কেবল উযূ করা জরুরী। ওয়াহব (র) শু‘বা (র) সূত্রে এ রকমই বর্ণনা করেন। তিনি [শুবা (র)] বলেন, আবূ আবদুল্লাহ (র) বলেছেন, গুনদর (র) ও ইয়াহইয়া (র) শু‘বা (র)- এর সূত্রে বর্ণনায় উযূর কথা উল্লেখ করেন নি।
বুখারি হাদিস ১৮১
ইবন সালাম (র)… উসামা ইবন যায়দ (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ যখন আরাফাত থেকে ফিরছিলেন, তখন তিনি একটি গিরিপথের দিকে গিয়ে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এলেন। উসামা (রা) বলেন, পরে আমি তাঁকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম আর তিনি উযূ করছিলেন। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি সালাত আদায় করবেন? তিনি বললেন, ‘সালাতের স্থান তোমার সামনে।’
বুখারি হাদিস ১৮২
‘আমর ইবন ‘আলী (র)… মুগীরা ইবন শু‘বা (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, তিনি এক সফরে রাসূলুল্লাহ এর সঙ্গে ছিলেন। এক সময় তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে গেলেন। (প্রয়োজন সেরে আসার পর) মুগীরা তাঁকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং তিনি উযূ করছিলেন। তিনি তাঁর মুখমণ্ডল এবং দু হাত ধুলেন এবং তাঁর মাথা মসেহ করলেন ও উভয় মোজার উপর মসেহ করলেন।
বুখারি হাদিস ১৮৩
ইসমাইল (র)… ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি একবার নবী এর স্ত্রী মায়মূনা (রা) এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইবন ‘আব্বাস (রা) এর খালা। ইবন ‘আব্বাস (রা) বলেনঃ এরপর আমি বিছানার চওড়া দিকে শয়ন করলাম এবং রাসূলুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শয়ন করলেন; এরপর রাসূলুল্লাহ ঘুমিয়ে পরলেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তার কিছু পূর্বে কিংবা কিছু পরে রাসূলুল্লাহ জেগে উঠলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। তারপর সূরা আল-‘ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক থেকে উযূ করলেন। তিনি সুন্দরভাবে উযূ করলেন। তারপর সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইবন ‘আব্বাস (রা) বলেন, আমিও উঠে তিনি যেরূপ করেছিলেন তদ্রুপ করলাম। তারপর গিয়ে তাঁর বাঁ পাশে দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু নাড়া দিলেন (এবং তাঁর), ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন। তারপর তিনি দু রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর দু রাক‘আত, তারপর দু রাক‘আত, দু রাক‘আত, তারপর দু রাক‘আত, তারপর দু রাক‘আত, তারপর বিতর আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর কাছে মুয়াযযিন এলেন। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে দু রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর বেরিয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন।
বুখারি হাদিস ১৮৪
ইসমাইল (র)… আসমা বিনত আবূ বকর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি একবার নবী এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রা) এর কাছে এলাম। তখন সুর্য গ্রহণ লেগেছিল। দেখলাম সব মানুষ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছে এবং ‘আয়িশা (রা)- ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম লোকদের কী হয়েছে? তিনি তাঁর হাত দিয়ে আকাসের দিকে ইঙ্গিত কের বললেন, ‘সুবহান আল্লাহ’! আমি বললাম এটা কি কোন আলামত? তিনি ইশারা করে বললেন, ‘হাঁ’। এরপর আমিও সালাতে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি আমাকে সংজ্ঞাহীনতায় আচ্ছন্ন করে ফেলল এবং আমি আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (মুসল্লিদের দিকে) ফিরে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করে বললেন, “যেসব জিনিস আমি ইতিপূর্বে দেখিনি সেসব আমি আমার এই স্থানে আমি দেখতে পেয়েছি, এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও। আর আমার কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা তার কাছাকাছি।” বর্ণনাকারী বলেন, আসমা (রা) কোনটি বলেছিলেন, আমি জানি না। তোমাদের প্রত্যেকের কাছে (ফিরিশতা) উপস্থিত হবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, “এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি জ্ঞান আছে?” –তারপর ‘মু’মিন, বা ‘মু’কিন’ ব্যক্তি বলবে- আসমা ‘মুমিন’ বলেছিলেন না ‘মুকিন’ তা আমি জানি না- ইনি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। তিনি আমাদের কাছে মু‘জিযা ও হিদায়ত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছি, তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর অনুসরণ করেছি। তারপর তাকে বলা হবে নিশ্চিতে ঘুমাও। আমরা জানলাম যে, তুমি মু’মিন ছিলে। আর ‘মুনাফিক’ বা ‘মুরতাব’ বলবে,- আমি জানি না। আসমা এর কোনটি বলেছিলেন তা আমি জানি না- লোকজনকে এঁর সম্পর্কে কিছু একটা বলতে শুনেছি আর আমিও তা-ই বলেছি।