১) কুৎসা রটনাকারী, যারা মহিলা বা পুরুষদের সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে অথবা কটাক্ষ বা বক্রোক্তি করে অথবা মন্দ আচরণ বা বিদ্রূপ ব্যঙ্গের উদ্দেশ্যে অনুকরণ করে, অথবা অপমান করে ইত্যাদি;
২) গীবতকারী অর্থাৎ যারা পশ্চাতে নিন্দা করে, ব্যক্তির চরিত্রহানি বা মানহানি করে। তাদের বক্তব্য যদি সঠিকও হয়, কিন্তু তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য যদি ব্যক্তির চরিত্র সংশোধন অপেক্ষা ব্যক্তির চরিত্র হননই হয়ে থাকে, তবে তা-ও গীবতের পর্যায়ে পড়ে। কারণ আল্লাহ্ বিচার করবেন কর্মের উদ্দেশ্য বা নিয়ত দ্বারা কর্ম দ্বারা নয়।
৩) যারা সম্পদের পাহাড় গড়তে ভালোবাসে, কিন্তু তা কখনও জনহিতকর কাজে ব্যয় করে না। এ সব লোকেরা কখনও পরলোকের কথা বা মৃত্যুর কথা চিন্তা করে না। অর্থের আদান -প্রদান ও প্রাপ্তি তাদের পরলোকের জীবনকে ভুলিয়ে দেয়, যেনো তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। অর্থের প্রতি প্রচন্ড মোহ থেকে কৃপণতা স্বভাবের জন্ম হয় যা একটি কুৎসিত মনের প্রকাশ।
আয়াতঃ 104.004
কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।
Nay! Verily, he will be thrown into the crushing Fire.
كَلَّا لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ
Kalla layunbathanna fee alhutamati
YUSUFALI: By no means! He will be sure to be thrown into That which Breaks to Pieces,
PICKTHAL: Nay, but verily he will be flung to the Consuming One.
SHAKIR: Nay! he shall most certainly be hurled into the crushing disaster,
KHALIFA: Never; he will be thrown into the Devastator.
৪। না কখনও না ! অবশ্যই সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে [যা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করবে ] ৬২৬৭
৬২৬৭। ‘Hutama’ যার অর্থ ধ্বংসকারী বা যা টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে দেয়। যে তিনটি সামাজিক পাপের উল্লেখ এখানে করা হয়েছে তাদেরই প্রকৃত রূপকে এখানে বর্ণনা করা হয়েছে হুতামা দ্বারা। কুৎসা রটনাকারী ও গীবত কারীরা কখনও কোনও ব্যাপারেই নিজেদের মাঝে সংহতি ও একতা রক্ষা করতে পারবে না। তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে তারা কখনও পারস্পরিক বিশ্বাস রক্ষা করতে পারবে না। অপরের কুৎসা রটনা করা ও গীবত করা একধরণের মানসিক ব্যধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক অবস্থাকেই এখানে বর্ণনা করা হয়েছে হুতামা শব্দটি দ্বারা। লক্ষ্য করুণ আয়াতটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সমগ্র বাঙ্গালী জাতিই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত যে কারণে বাঙ্গালীরা জাতি হিসেবে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংহতি ও একতা রাখতে অক্ষম। তাদের একতা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়বে।
অপর পক্ষে কৃপণতা ও অর্থের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণও মানসিক ব্যাধির জন্ম দেয়। কৃপণতার ফলে ব্যক্তির মন মানসিকতা এ রূপ ধারণ করে যে, সে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য অর্থ সাহায্য করতে বা ব্যয় করতে সব সময়েই কুণ্ঠিত থাকবে ফলে সে মানুষের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা থেকে বঞ্চিত হবে, মানুষ তাকে কখনও বিশ্বাস করবে না। এদের শেষ পরিণতি ‘হুতামায়’। অর্থাৎ পারস্পরিক বিশ্বাস ও একতার ব্যাপারে এরা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়বে।
আয়াতঃ 104.005
আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কি?
And what will make you know what the crushing Fire is?
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ
Wama adraka ma alhutamatu
YUSUFALI: And what will explain to thee That which Breaks to Pieces?
PICKTHAL: Ah, what will convey unto thee what the Consuming One is!
SHAKIR: And what will make you realize what the crushing disaster is?
KHALIFA: Do you know what the Devastator is?
৫। তুমি কি জান হুতামা কি ?
৬। ইহা আল্লাহ্র [ ক্রোধের ] প্রজ্জ্বলিত আগুন,
৭। যা হৃদয় পর্যন্ত উঁচু হয়ে উঠবে ৬২৬৮
৬২৬৮। হুতামাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে, ” ইহা আল্লাহ্র,ক্রোধের প্রজ্বলিত আগুন বা হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে।” অর্থাৎ কুৎসা রটনাকারী, গীবতকারী ও কৃপণ ব্যক্তিদের মাঝে কখনও সংহতি ও একতা হতে পারে না। তারা কাউকে বিশ্বাস করবে না; অন্য কেউ তাদের বিশ্বাস করবে না। ফলে তাদের অন্তরের মাঝে মানুষের জন্য ভালোবাসা জন্মাবে না, মানুষও তাদের ভালোবাসবে না। অবিশ্বাসে ভরা, ভালোবাসাহীন জীবন তাদের অন্তরের শান্তি নষ্ট করে দেবে এবং অন্তর হুতাশনে ভরিয়ে দেবে যা প্রজ্বলিত আগুনের মত যন্ত্রণাদায়ক মনে হবে। এই আগুনের বর্ণনা হচ্ছে ; ” যা হৃদয়কে গ্রাস করবে।” এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ভাষার প্রকাশকে। আরবীতে হৃদয় শব্দটি দ্বারা বিশাল ভাবের প্রকাশ ঘটানো হয়। আরবীতে ‘হৃদয়’ শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় স্নেহ, ভালোবাসা, দয়া, করুণা, ইত্যাদি মনের কোমল অনুভূতি সমূহ বা সুকুমার বৃত্তিসমূহ। শুধু তা-ই নয় ব্যপক অর্থে এই শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় অনুভব ও উপলব্ধির ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি। চিন্তা করুণ, যে এই নিন্দনীয় ব্যাধিতে আক্রান্ত তার অন্তরে আল্লাহ্ হুতাশন সৃষ্টি করে দেবেন যার ফলে তার আত্মার কোমল অনুভূতি সমূহ ও আধ্যাত্মিক জগতকে বোঝার ও উপলব্ধি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে মানুষের দেহ ধারণ করলেও এরা মানসিক ও মানবিক গুণে বঞ্চিত হবে।