৩) যাদের অন্তরে ব্যধি [ ২ : ৮ – ১০ ] আয়াত ও টিকা ৩৩ – ৩৪ এরা হলো মোনাফেক বা মিথ্যাবাদী। ফলে তারা হয় অবিশ্বস্ত। মোনাফেকরা কোনও কিছুই বিশ্বাস করে না ফলে তারা শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্র করুণা বঞ্চিত হয়।
৪) অবিশ্বাসী বা কাফের যাদের অবস্থা মোনাফেকদের অনুরূপ।
৫৭৯৭। আল্লাহ্ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। সে ইচ্ছা করলে ভালোকে গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করতে পারে, বা মন্দকে গ্রহণ ও ভালোকে বর্জন করতে পারে। যদি আল্লাহ্ এই “ইচ্ছাশক্তি” না দিতেন তবে কেউই পথভ্রষ্ট হতো না এর পরেও যারা পথভ্রষ্ট তারা সৎপথে ফিরে আসতে চাইলে আল্লাহ্ তাদের পথ দেখান। মানুষের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সদ্ব্যবহার করা। আল্লাহ্র নিদর্শন ও সাবধান বাণী এবং তাঁর আধ্যাত্মিক জগত পরিচালনার বিশাল বাহিনীর সংবাদ জানেন একমাত্র আল্লাহ্ -যা তাঁর অসীম ক্ষমতার স্বাক্ষর। কোন মানুষের পক্ষেই সেই ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সুতারাং জাহান্নামের এই বর্ণনা বিশ্বমানবের সকলের জন্য সাবধান বাণী।
সব কিছুই শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন করবে আল্লাহ্র দিকে। মানুষের উচিত অনুধাবন করা যে আল্লাহ্ অসীম করুণার আঁধার। কোন ক্ষতি বা মন্দ আল্লাহ্র নিকট থেকে আসে না। সূরা [ ৪ : ৭৯] আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, যা কল্যাণকর ও মঙ্গলময় তা আল্লাহ্র নিকট থেকে আসে আর যা মন্দ তা আমাদের কৃতকর্মেরই ফল।
আয়াতঃ 074.032
কখনই নয়। চন্দ্রের শপথ,
Nay, and by the moon,
كَلَّا وَالْقَمَرِ
Kalla waalqamari
YUSUFALI: Nay, verily: By the Moon,
PICKTHAL: Nay, by the Moon
SHAKIR: Nay; I swear by the moon,
KHALIFA: Absolutely, (I swear) by the moon.
রুকু – ২
৩২। কখনই না, শপথ চন্দ্রের ৫৭৯৮
৫৭৯৮। আমাদের দৈনন্দিক জীবনে আমরা এমন কিছুর শপথ করি যা আমাদের নিকট অত্যন্ত পবিত্র। আল্লাহ্র বাণীকে যখন মানুষের ভাষায়, মানুষের জন্য প্রেরণ করা হয়, তখন এমন কিছুর শপথ উচ্চারণ করা হয় যার পবিত্রতা মানুষের মনে প্রগাঢ় প্রভাব এবং গভীর রেখাপাত করবে। যা সরাসরি মানুষের হৃদয়ের দুয়ারে আঘাত হানবে। শপথের জন্য তাই-ই প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যার আবেদন নির্দ্দিষ্ট যুক্তিকে সমুজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে। এই আয়াতে তিনটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যাপারের প্রতি চিন্তা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে, এবং শপথের বিষয়বস্তুকে দেয়া আছে ৩৮নং আয়াতে।
১) চন্দ্র হচ্ছে সূর্যের পরেই যার অবস্থান পৃথিবীকে আলোকিত করার ক্ষমতা। চাঁদের আলো আমাদের দৃষ্টিতে অতি মনোহর। চাঁদের আলোর বন্যা আমাদের করে বিমোহিত,মুগ্ধ, চাঁদের আলোর আলো আঁধারি বিশ্ব চরাচরে এক স্বপ্নের মায়াজাল বিস্তার করে যা সূর্যের অত্যুজ্জ্বল আলোকচ্ছটা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যে আলো আমাদের নিকট স্বপ্নীল মনে হয়। চেনা পৃথিবীকে মনে হয় কোন স্বপ্নপুরীর রহস্যে ঘেরা। এ কারণে পৌত্তলিকদের অনেকেই চন্দ্রকে পূঁজনীয় হিসেবে গণ্য করতো। যদিও চাঁদের আলো পৃথিবীকে কোমলতায় ভরিয়ে দেয় – কোমল আলোর বন্যায় সমগ্র বিশ্বচরাচর ডুবে যায়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই আলো চাঁদের কোনও নিজস্ব আলো নয়। এই আলো সে সূর্যের নিকট থেকে লাভ করে পৃথিবীতে প্রতিফলিত করে থাকে, যার ফলে চাঁদের আলোতে উষ্ণতা ও পৃথিবীর প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় জীবনীশক্তি থাকে না, যা থাকে সূর্যের আলোতে। ঠিক সেরূপ অবস্থা হচ্ছে যারা আল্লাহ কে প্রত্যাখান করে আল্লাহ্র পরিবর্তে অন্য কোন শক্তির বা আল্লাহ্র সৃষ্ট বস্তুর উপাসনা করে আত্মার মুক্তির জন্য,বা আত্মার অন্ধকার দূর করার জন্য তাদের অবস্থা। এসব উপাস্য হচ্ছে চাঁদের মত, যাদের নিজস্ব ক্ষমতা নাই। কারণ সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্। যিনি সকল আধ্যাত্মিক আলোর উৎস।
২)নম্বর শপথ হচ্ছে রাত্রির এবং
৩) নম্বর শপথ হচ্ছে প্রভাতের।
এ জন্য দেখুন নিচের টিকা সমূহ।
আয়াতঃ 074.033
শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়,
And by the night when it withdraws,
وَاللَّيْلِ إِذْ أَدْبَرَ
Waallayli ith adbara
YUSUFALI: And by the Night as it retreateth,
PICKTHAL: And the night when it withdraweth
SHAKIR: And the night when it departs,
KHALIFA: And the night as it passes.
৩৩। শপথ রাত্রির যখন তা অপসৃয়মান, ৫৭৯৯
৫৭৯৯। ২) নম্বর শপথ হচ্ছে রাত্রির। রাত্রি হচ্ছে অন্ধকারের প্রতীক। যদিও শুক্লপক্ষের রাত্রিগুলিতে চাঁদের আলো অন্ধকারকে কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম, কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে রাত্রি সর্বদা অন্ধকারকেই উপস্থাপন করে থাকে এবং
৩) প্রভাতের আগমনে তা অপসারিত হয়। সুতারাং রাত্রি হচ্ছে প্রভাতের আগমনের অগ্রদূত স্বরূপ। ঠিক সেরূপ হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগত। যখন প্রতিটি আত্মা তাঁর দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন হয় তাঁর অন্তরে বোধদয় ঘটে যে প্রকৃত আলোর উৎস কোথায়। সে তখন প্রতিফলিত আলোর দ্বারা প্রভাবিত বা প্রতারিত হবে না। আত্মার অন্ধকারকে অতিক্রম করে তার চেতনাতে প্রভাতের সূর্যের ন্যায় আল্লাহ্র হেদায়েতের আলোর প্রবেশ লাভ ঘটবে। প্রভাতের প্রথম আলো যেরূপ বিশ্ব প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে, ঠিক সেরূপ আল্লাহ্র আলোতে উদ্ভাসিত করে জাগিয়ে তুলবে, আমাদের পৌঁছে দেবে স্বপ্নের দেশে বেহেশতে।