- সূরার নাম: সূরা মুযযাম্মিল
- বিভাগসমূহ: ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ
সূরা মুযযাম্মিল
আয়াতঃ 073.001
হে বস্ত্রাবৃত!
O you wrapped in garments (i.e. Prophet Muhammad SAW)!
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ
Ya ayyuha almuzzammilu
YUSUFALI: O thou folded in garments!
PICKTHAL: O thou wrapped up in thy raiment!
SHAKIR: O you who have wrapped up in your garments!
KHALIFA: O you cloaked one.
১। হে বস্ত্রাবৃত ৫৭৫৪
৫৭৫৪। কোন কোন তফসীরকারের মতে ‘মুজাম্মিল ‘ শব্দটি দ্বারা “প্রার্থনার সময়ে সঠিক ভাবে পরিচ্ছদ পরিধানকে ” বুঝানো হয়েছে। অথবা বুঝানো হয়েছে পৃথিবীর অস্থায়ী গর্ব অহংকারকে দূরে সরানোর জন্য যার উপমা হচ্ছে নিজেকে আড়াল করা চাদর বিশেষ দ্বারা। আমাদের নবীর অন্যতম উপাধি হচ্ছে মোজাম্মেল। কিন্তু এই সূরা ও পরবর্তী সূরাতে রাসুলকে “মোজাম্মেল ” সম্বোধন এক সুগভীর ভাবধারা বহন করে থাকে। পার্থিব জীবনে সাধারণ মানুষ পরিচ্ছদ পরিধান করে শরীরকে শীতের ঠান্ডা, গ্রীষ্মের তাপদাহ বা বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু পার্থিব জীবনের এই আরাম আয়েস আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য অপ্রয়োজনীয়।
প্রতিটি আত্মা প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড়াবে পার্থিব সকল অলংকার ত্যাগ করে পরিশুদ্ধ রূপে। নবীকে সম্বোধনের মাধ্যমে সকল বিশ্বমানবকে সম্বোধন করা হয়েছে যে পার্থিব সকল ভুষণ ত্যাগ করে পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র সম্মুখে দাঁড়াতে নিস্তব্ধ নিশিত রাত্রির নিরবতার মাঝে। তবে এ ব্যাপারে খুব বেশী কঠোরতা অবলম্বন করতে নিষেধ করা হয়েছে, যার উল্লেখ করা হয়েছে পরবর্তী আয়াতে।
আয়াতঃ 073.002
রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে;
Stand (to pray) all night, except a little.
قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا
Qumi allayla illa qaleelan
YUSUFALI: Stand (to prayer) by night, but not all night,-
PICKTHAL: Keep vigil the night long, save a little –
SHAKIR: Rise to pray in the night except a little,
KHALIFA: Meditate during the night, except rarely.
২। রাত্রিতে [ নামাজে] দাড়াও, কিন্তু সমস্ত রাত্রি নয়, ৫৭৫৫
৫৭৫৫। রাসুল (সা) তার নবুয়ত লাভের পূর্বে এবং পরে হেরা পর্বতের গুহায় কঠোর আধ্যাত্মিক ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। তিনি দিবা রাত্র গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। এভাবেই মধ্যরাত্রি ও মধ্য রাত্রির পরবর্তী প্রার্থনা ” তাহাজ্জুতের নামাজ ” নামে পরিচিত হয়। দেখুন নীচের ২০ নং আয়াত ও [ ১৭: ৭৯ ] নং আয়াত।
আয়াতঃ 073.003
অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম
Half of it, or a little less than that,
نِصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا
Nisfahu awi onqus minhu qaleelan
YUSUFALI: Half of it,- or a little less,
PICKTHAL: A half thereof, or abate a little thereof
SHAKIR: Half of it, or lessen it a little,
KHALIFA: Half of it, or a little less.
৩। অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কম,
৪। অথবা, তদপেক্ষা বেশী, এবং কুর-আন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে, সুরেলা কন্ঠে। ৫৭৫৬
৫৭৫৬। যে সময়ে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়, সম্ভবতঃ সে সময়ে শুধুমাত্র ৯৬ নং সূরা ৬৮ নং সূরা সম্ভবতঃ ৭৪ নং সূরা এবং সূরা আল্- হামদ্ সূরা বিদ্যমান ছিলো। বর্তমানে আমাদের সম্মুখে সম্পূর্ণ কোরাণ মহাগ্রন্থ উপস্থাপন করা হয়েছে। লক্ষ্য করুন সামান্য কয়েকটি সূরা যখন বিদ্যমান তখনই সাবধান করা হয়েছে যে, কোরাণ যেনো কেউ তাড়াহুড়ো করে না পড়ে – যেমন আমাদের অনেকে গর্বের সাথে বলে থাকেন যে, সে রমজানে ৩-৪ বার কোরাণ খতম করেছে। না বুঝে, না অনুধাবন করে, শুধুমাত্র দ্রুত পড়ে যাওয়ার মাঝে কোনও পূণ্য নাই। কোরাণ আবৃত্তি করতে হবে, ধীরে ধীরে,স্পষ্ট ও সুন্দর সুরেলাভাবে যেনো এই বাণীর উপদেশ ও মর্মবাণী আত্মার অন্তঃস্থলে প্রবেশের সুযোগ লাভ করে। দ্রুত ও তাড়াহুড়ো করে অর্থ না বুঝে পড়লে তার কোন প্রতিক্রিয়াই চরিত্রে প্রতিফলিত হয় না। অর্থ না বুঝে কোরাণ তেলাওয়াত মূল্যহীন। কোরাণের আয়াতগুলি ভাষা ও ছন্দে এতই সুন্দর যে তা আবেগের সাথে সুরেলা ধ্বনিতে পড়তে হবে। এতে রয়েছে এক অপূর্ব মাধুর্য এবং বিন্যাসে রয়েছে বিশেষ ধরণের বর্ণাঢ্যতা যা আত্মাকে করে সমৃদ্ধ। এর অভ্যন্তরভাগে সেরূপ রয়েছে আত্মার জন্য সীমাহীন স্নিগ্ধ ফল্গুধারা।
মন্তব্য : সঙ্গীতের সুর মানুষের মনোজগতে বিশেষ প্রভাব ফেলতে সক্ষম। সে কারণেই সঙ্গীতের সুরে কুর-আন পড়তে বলা হয়েছে, আজান হবে সুরেলা ভাবে। সে কারণেই আল্লাহ দাউদ নবীকে বিশেষ সঙ্গীত প্রতিভা দান করেছিলেন। তাঁর সঙ্গীতে পাহাড় প্রতিধ্বনি করতো, পাখীরা গান করতো, সঙ্গীত প্রতিভা আল্লাহ্র বিশেষ দান। মানুষের মনোজগতকে সমৃদ্ধ করার জন্য- তবে সে সঙ্গীত হতে হবে রুচীসমৃদ্ধ আত্মার জন্য স্নিগ্ধ সীমাহীন স্নিগ্ধ ফাল্গুধারার মত।
অতএব আরবীর সাথে সাথে মাতৃভাষাতে কোরাণ পাঠ করতে হবে যেনো এর উপদেশ স্ব জীবনে প্রতিফলিত করার সুযোগ ঘটে। [২১:৭৯] [৩৪:১০] [৩৮:১৮] [৩৮:১৯]