০৮। এই কারণে, যাতে তোমরা [ নির্দ্দিষ্ট ] মানদন্ডে সীমালংঘন না কর।
০৯। সুতারাং ন্যায়ের ভিত্তিতে ওজন কর, এবং মাপে কখনও কম দিও না ৫১৭৮।
৫১৭৮। “ন্যায়ের ভিত্তিতে ওজন কর ” বাক্যটি আক্ষরিক ও আলংকারিক উভয় অর্থ বহন করে। মানুষ তার দৈনন্দিক প্রতিটি কাজে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হবে যেমন : ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে উপযুক্ত প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া। সামাজিক জীবনে আমাদের প্রতিনিয়ত মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। এখানে আমাদের মানুষের সাথে আচরণ প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বোচ্চ সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে। এই সততা যে শুধুমাত্র অন্য লোকের প্রতি প্রদর্শন করতে হবে তাই-ই নয় এই সততা ব্যক্তির নিজের জীবনেও প্রতিফলিত করতে হবে। যেমন চিন্তার সততা, বক্তব্যের সততা, কার্যের নিয়তের সততা, এবং আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যের সততা। মানুষ মনের গহন গভীরের চিন্তাধারাকে অনুধাবন করতে না পারলেও আল্লাহ্র নিকট তা দিবালোকের ন্যায় সুষ্পষ্ট। মানুষ মনে করে যা প্রকাশ্য নয় তা পাপ নয়, সুতারাং সুযোগ পেলেই ছোটখাট প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করে না, অবশ্য যদি তাতে তার জীবিকার বা কোন পার্থিব কাজ সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন ন্যায় নীতি হচ্ছে সকল ঐশ্বরিক গুণাবলীর কেন্দ্রবিন্দু।
সততা ও ন্যায়নীতি একটি সমাজের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে ঠিক যেমন গাণিতিক সুত্র নভোমন্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে। যে সমাজে সততা ও ন্যায়নীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য; ঠিক যেরূপ হবে নভোমন্ডলের গাণিতিক ভারসাম্য নষ্ট হলে। এরই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলকে বিচার করতে হবে।
আয়াতঃ 055.010
তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্যে।
And the earth He has put for the creatures.
وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ
Waal-arda wadaAAaha lil-anami
YUSUFALI: It is He Who has spread out the earth for (His) creatures:
PICKTHAL: And the earth hath He appointed for (His) creatures,
SHAKIR: And the earth, He has set it for living creatures;
KHALIFA: He created the earth for all creatures.
১০। তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন ৫১৭৯, [ তাঁর ] সৃষ্ট জীবের জন্য।
৫১৭৯। আল্লাহ্র অনুগ্রহ গুণে শেষ করা অসম্ভব। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে আল্লাহ্র অনুগ্রহের সামান্য ইঙ্গিত করা হয়েছে মাত্র। পৃথিবীতে জীবন ও পরিবেশ পরস্পর ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। উদ্ভিদ জগত বিভিন্ন ধরণের ফল এবং শষ্য দানা উৎপন্ন করে যার দ্বারা মানুষ ও প্রাণী জগত জীবন ধারণ করে। ফসল কেটে ঘরে তোলার পরে শষ্য দানা মানুষের খাদ্য ও খড় বিচালী পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। উদ্ভিদ জগত যে শুধুমাত্র খাদ্য সরবরাহ করে তাই-ই নয়, সুগন্ধ গুল্ম খাদ্য দ্রব্যকে সুস্বাদু করার জন্য মশলা উৎপন্ন করে থাকে। এসব হলো দেহের খাদ্য, মনের খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ জগত অপূর্ব সুন্দর ফুলের জন্ম দেয় যার শোভা মানুষকে মুগ্ধ করে। এ সবই আল্লাহ্র অনুগ্রহ মাত্র।
আয়াতঃ 055.011
এতে আছে ফলমূল এবং বহিরাবরণবিশিষ্ট খর্জুর বৃক্ষ।
Therein are fruits, date-palms producing sheathed fruit-stalks (enclosing dates).
فِيهَا فَاكِهَةٌ وَالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ
Feeha fakihatun waalnnakhlu thatu al-akmami
YUSUFALI: Therein is fruit and date-palms, producing spathes (enclosing dates);
PICKTHAL: Wherein are fruit and sheathed palm-trees, SHAKIR: Therein is fruit and palms having sheathed clusters, KHALIFA: In it there are fruits, and date palms with their hanging fruit.
১১। সেখানে রয়েছে ফল এবং খেঁজুর গাছ যা উৎপন্ন করে [ আবরণযুক্ত ] ফলের কাঁদি।
১২। আর তুষযুক্ত ও পশুখাদ্য সম্বলিত শষ্যদানা এবং সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ।
১৩। তাহলে তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ৫১৮০ ?
৫১৮০। ‘উভয়ে’ অর্থাৎ মানুষ ও জ্বিন। ‘তোমাদিগের ‘ শব্দটি দ্বারা মানুষ ও জ্বিন এই উভয় সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। সমগ্র সূরাটি এক সূরের মুর্চ্ছনা, যাতে সব কিছুকে জোড়ায় জোড়ায় দ্বৈতভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। এই দ্বৈত ভাবে বা জোড়ায় জোড়ায় আহ্বানের মাধ্যমে আল্লাহ্র একত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে জড় এবং জীব সব কিছুকে সৃষ্টি করা হয়েছে জোড়ায় জোড়ায়, যেমন বলা হয়েছে [ ৫১ : ৪৯ ] আয়াতে ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে টিকা নং ৫০২৫ – ২৬; [ ৩৬ : ৩৬ ] আয়াতে ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে টিকা নং ৩৯৮১। ন্যায়ের মানদন্ড দুই বিরোধী শক্তির দ্বন্দ দূর করে – ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি করে থাকে। এই সূরাতে সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় দ্বৈতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মানুষ ও প্রকৃতি, সূর্য ও চন্দ্র, লতাগুল্ম ও বৃক্ষ, আকাশ ও পৃথিবী, ফল ও শষ্যদানা,মানুষের খাদ্য ও পশু খাদ্য ; পুষ্টিকর ও সুগন্ধিযুক্ত ইত্যাদি প্রতিটি জিনিষই দ্বৈতভাবে এই সূরাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াতঃ 055.012