০৭। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকল বাহিনী আল্লাহ্র অধীনে ৪৮৭৫। এবং আল্লাহ্ ক্ষমতায় পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাতে পরিপূর্ণ।
৪৮৭৫। আপতঃদৃষ্টিতে এই আয়াতটি ৪নং আয়াতের পুণঃরাবৃত্তি বলে ভ্রম হয়। পুণঃরাবৃত্তি অবশ্যই তবে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে মূল বক্তব্যকে জোরালোরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীতে সুদক্ষ যোদ্ধাবাহিনী, সমরাস্ত্র প্রভৃতির প্রয়োজন সমরক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এটাই শেষ কথা নয়। এসব দৃশ্যমান সমরশক্তি ব্যতীতও আল্লাহ্র অদৃশ্য শক্তি সর্বত্র কর্তৃত্বশালী। শুধুমাত্র দৃশ্যমান শক্তির উপরে নির্ভর করেই আল্লাহ্র পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় না। আল্লাহ্র শক্তি জলে স্থলে, অন্তরীক্ষে, দ্যুলোকে, ভূলোকে, সর্বত্র অদৃশ্য থেকে পৃথিবীর প্রতিটি কার্য্যকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে এবং আল্লাহ্র পরিকল্পনাকে তার নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি এগিয়ে নিয়ে চলে। ঠিক যেরূপটা ঘটেছিলো হুদায়বিয়ার প্রান্তরে। ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। এই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। পূর্বের আয়াতে আল্লাহ্র জ্ঞানের উপরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিলো, এই আয়াতে আল্লাহ্র ক্ষমতার উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জ্ঞান ও বিচক্ষণতা পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করে এবং ক্ষমতা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্য করে।
আয়াতঃ 048.008
আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।
Verily, We have sent you (O Muhammad SAW) as a witness, as a bearer of glad tidings, and as a warner.
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
Inna arsalnaka shahidan wamubashshiran wanatheeran
YUSUFALI: We have truly sent thee as a witness, as a bringer of Glad Tidings, and as a Warner:
PICKTHAL: Lo! We have sent thee (O Muhammad) as a witness and a bearer of good tidings and a warner,
SHAKIR: Surely We have sent you as a witness and as a bearer of good news and as a warner,
KHALIFA: We have sent you as a witness, a bearer of good news, and a warner.
০৮। আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষী দাতা ৪৮৭৬, সুসংবাদদাতা এবং সর্তককারীরূপে।
৪৮৭৬। রাসুলের (সা ) আগমন পৃথিবীতে আল্লাহ্র একত্বের উপাসনা শিক্ষা দানের জন্য। মানুষকে ঈমানের রাস্তায় আহ্বানের জন্য। এই আয়াতে রাসুলের তিনটি বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরা হয়েছে :
১) সাক্ষীরূপে তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে দুর্বল, ও নির্যাতিতের সাহায্যকারী ও শক্তিশালীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাধাদানকারী হিসেবে। তিনি ঘোষণাকারী বা সাক্ষ্যদাতা।
২) যারা অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন করে এবং আল্লাহ্ নির্দ্দেশিত পবিত্র জীবন যাপন করে থাকে, রাসুল (সা) তাদের জন্য আল্লাহ্র ক্ষমা, দয়া ও করুণার সুসংবাদ প্রদানকারী।
পাপীদের পাপের শেষ পরিণতি সম্বন্ধে সর্তককারী হিসেবে তাঁর আগমন।
আয়াতঃ 048.009
যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।
In order that you (O mankind) may believe in Allâh and His Messenger (SAW), and that you assist and honour him (SAW), and (that you) glorify (Allâh’s) praises morning and afternoon.
لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
Litu/minoo biAllahi warasoolihi watuAAazziroohu watuwaqqiroohu watusabbihoohu bukratan waaseelan
YUSUFALI: In order that ye (O men) may believe in Allah and His Messenger, that ye may assist and honour Him, and celebrate His praise morning and evening.
PICKTHAL: That ye (mankind) may believe in Allah and His messenger, and may honour Him, and may revere Him, and may glorify Him at early dawn and at the close of day.
SHAKIR: That you may believe in Allah and His Messenger and may aid him and revere him; and (that) you may declare His glory, morning and evening.
KHALIFA: That you people may believe in GOD and His messenger, and reverence Him, and observe Him, and glorify Him, day and night.
০৯। যেনো [ হে মানব ! ] তোমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসুলে ঈমান আন। যেনো তোমরা তাঁকে সাহায্য কর ও সম্মান কর, এবং সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহ্র প্রশংসা কীর্তন কর।
১০। যারা তোমার হাতে বায়’আত করে তারা তো আল্লাহ্রই হাতে বায়’আত করে, ৪৮৭৭। এরপরে যে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, সে তা করে নিজেরই আত্মার অকল্যাণের জন্য এবং যে আল্লাহ্র সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে ; শীঘ্রই আল্লাহ্ তাকে মহাপুরষ্কার দান করবেন।
৪৮৭৭। হুদায়বিয়ার প্রান্তর থেকে মক্কার কোরাইশদের সাথে আলাপ আলোচনার জন্য মুসলমান শিবির থেকে দূত প্রেরণ করা হয়। কোরাইশরা মুসলমানদের দুতকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করবে না, অসম্মানিত করবে এ ব্যাপারে সকলেই ছিলো অনিশ্চিত। মুসলমান শিবিরে চরম উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিলো – সে সময়ে ১৪০০-১৫০০ মুসলিম তীর্থযাত্রীর মাঝে আল্লাহ্র প্রতি ভক্তি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের তীব্র আবেগ বিরাজ করছিলো। তাঁরা আরবের প্রথা অনুযায়ী, রাসুলের হাতের উপরে হস্ত স্থাপন পূর্বক সকল বিপদ বিপর্যয়ে রাসুলের (সা ) প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে। [ দেখুন এই সূরার ভূমিকা ৩নং অনুচ্ছেদ ]। এই আনুগত্য ছিলো সকল নৈতিক সাহস ও পার্থিব শক্তির মূল ভিত্তি। এই আনুগত্যই হচ্ছে সকল বিজয়ের অদৃশ্য শক্তির উৎস। প্রকৃত বিজয় এই আনুগত্য প্রদর্শন ইসলামের ইতিহাসে “Bai’at ur Ridhwan” নামে বিখ্যাত। [Fealty of Allah’s Good Pleasure ]। সাহাবীরা রাসুলের (সা) হাতের উপরে হস্ত স্থাপন পূর্বক আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, প্রকৃত পক্ষে তারা আল্লাহ্রই আনুগত্য গ্রহণ করেছে।