২৪। [ দাউদ ] বলেছিলো , ” সে তোমার [ একটি মাত্র ] দুম্বাকে তার দুম্বা [ দলের ] সাথে যোগ করতে চেয়ে নিঃসন্দেহে সে তোমার প্রতি অন্যায় করেছে ৪১৭৪। প্রকৃত পক্ষে [ব্যবসাতে ] অনেক অংশীদারই একে অন্যের উপরে অন্যায় করে থাকে ৪১৭৫। তারাই করে না যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে এবং তারা সংখ্যায় কত অল্প ? ” – দাউদ বুঝতে পারলো যে আমি তাঁকে পরীক্ষা করলাম। সে তাঁর প্রভুর ক্ষমা ভিক্ষা করলো ৪১৭৬ এবং [ সিজ্দায় ] নত হয়ে লুটিয়ে পড়লো এবং [অনুতাপে আল্লাহ্র ] অভিমুখী হলো ৪১৭৬ক।
৪১৭৪। সম্পূর্ণ পরিবেশই ছিলো রহস্যজনক কারণ যে ভাই অন্যায়কারী সে ভাইও অত্যাচারিত ভাইএর সাথে দাউদ নবীর নিকট আগমন করেছিলেন। রাজার প্রাসাদের সুউচ্চ দেয়াল, প্রহরীদের চক্ষু ফাঁকি দিয়ে অতিক্রম করা ছিলো এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু জীবন বাজি রেখে অন্যায়কারীর তা করার কোনও প্রয়োজন ছিলো না এবং সে অভিযোগ খন্ডন করার জন্য কোনও যুক্তিও উত্থাপন করে নাই। দাউদ নবী তাদের অভিযোগ শ্রবণ করেন এবং মিথ্যা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রচার করেন। লোভ ত্যাগ করে যার যা প্রাপ্য তাই নিয়ে সকলের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
৪১৭৫। দাউদ নবী তাঁর প্রচারণার সময়ে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন ব্যবসায়ে সক্রিয় অংশীদের মধ্যে ন্যায় বিচারের প্রতি। অংশীদারিত্বের প্রধান শর্ত-ই হচ্ছে কেউ কারও প্রতি প্রতারণা না করা , কেউ কারও সুযোগ গ্রহণ না করা। কিন্তু কত সামান্য সংখ্যক লোক আছে পৃথিবীতে যারা এই শর্ত মেনে চলে। যারা তা মেনে চলে তারাই পৃথিবীতে পূণ্যাত্মা। এই বিচার করার সময়ে দাউদ নবীর অন্তরে নিজের ন্যায় বিচার করার ক্ষমতা ও আল্লাহ্র প্রতি আত্মসমর্পনকারী রূপে মনে মনে গর্বের সূচনা ঘটে, কিন্তু হঠাৎ করেই লোকদ্বয় অন্তর্ধান করে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁর বোধদয় ঘটে। তিনি বুঝতে পারেন যে, সম্পূর্ণ ঘটনাটি ছিলো তার জন্য এক পরীক্ষা স্বরূপ। আল্লাহ্ তার নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক ভাবে তিনি কতটুকু আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত তাই পরীক্ষা করতে চেয়েছেন। যদিও রাজা হিসেবে তিনি ছিলেন দক্ষ প্রশাসক ও মহান , বিচারক হিসেবে ছিলেন ন্যায়বিচারক , কিন্তু এক মূহুর্তের জন্য তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে, এসব ক্ষমতা তাঁর নিজস্ব নয়, মহান আল্লাহ্ তাঁকে এসব ক্ষমতা দান করেছেন মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করার জন্য। এক মূহুর্তের জন্য তাঁর অন্তরে তাঁর নিজস্ব ক্ষমতার জন্য গর্ববোধ হয়েছিলো। “অবিচার করে না কেবল মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ এবং তারা সংখ্যায় অল্প।” এই বাক্যটি তাঁর আত্মগর্বেরই প্রকাশ মাত্র। কিন্তু যে মূহুর্তে লোকদ্বয় অন্তর্ধান করে সাথে সাথে তাঁর চৈতন্যদয় ঘঠে। তিনি বুঝতে পারেন যে, গর্ব ও অহংকার রূপ শয়তান তার আধ্যাত্মিক জগতকে ক্ষণকালের জন্য হলেও গ্রাস করেছে। সাধারণ লোকের মত তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে, আল্লাহ্র অনুগ্রহে তাঁর মধ্যে জ্ঞান , প্রজ্ঞা ও ন্যায়বোধ জন্মলাভ করেছে ; তিনি শুধু এসবের ধারক , বাহক ও রক্ষকমাত্র। এতে তার নিজস্ব কৃতিত্ব খুব বেশী নাই। এ সব লাভ করার জন্য তার উচিত বিনয়ের সাথে আল্লাহ্র নিকট ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা ও আত্মসমর্পন করা।
উপদেশ : সাধারণ মানুষ কত সামান্য কারণেই আত্মগর্ব , আত্মগরিমা ও অহংকারে মেতে উঠে তা আশ্চর্য্যজনক , যা ব্যক্তি নিজেও অনুধাবনে অক্ষম। যেরূপ অক্ষম হয়েছিলেন দাউদ নবী ; যদিও তা ক্ষণকালের জন্য । আত্মগর্ব , আত্মগরিমা ও অহংকার মানুষকে শয়তানের রাস্তায় পরিচালিত করে , কারণ মানুষ ভুলে যায় পার্থিব ও আধ্যাত্মিক সকল কিছুই আল্লাহ্র অনুগ্রহ।
৪১৭৬। দাউদ নবীর এই আত্মগরিমা ও আত্মগর্ব সাধারণের জন্য কোনও গুরুত্বই বয়ে আনে না। কারণ সাধারণ লোকের ধারণা যে, তিনি তো কোনও অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই। তিনি একজন ভালো এবং ন্যায়বান নৃপতি। তাঁর কোনও কার্যক্রমে বাহ্যিক অন্যায় ঘটে নাই। কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতে তিনি ছিলেন এক উচ্চমার্গের ব্যক্তি। আল্লাহ্র নিকটতম সান্নিধ্যে তাঁর অবস্থান [Muqarrabun ৫৬ : ১১ ]। সুতারাং এ সব পবিত্র আত্মাতে আত্মগর্বের স্থান নাই। দাউদ নবী যখনই আত্মোপলব্ধি করতে পারলেন , সঙ্গে সঙ্গে তিনি অনুতাপ ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্ষমা লাভের চেষ্টা করেন। পরবর্তী আয়াতে দেখুন আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
উপদেশ : মানুষের অবচেতন মনে সর্বদা শয়তান তাঁর জাল বিস্তার করে যার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে অহংকার , আত্মগর্ব ও আত্মগরিমা। দাউদ নবীর মত, মানুষ অনেক সময়ে নিজে বুঝতেই পারে না যে, সে আত্মগরিমার দ্বারা আক্রান্ত।
৪১৭৬-ক। অনেক তফসীরকারের মতে এখানে দাউদ নবীর অপরাধ ছিলো যে তিনি অন্য পক্ষের কোন যুক্তি না শুনেই তাড়াতাড়ি বিচারের রায় প্রদান করেন। যখন তিনি তাঁর অপরাধ বুঝতে পারলেন তিনি অনুতাপে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
আয়াতঃ 038.025
আমি তার সে অপরাধ ক্ষমা করলাম। নিশ্চয় আমার কাছে তার জন্যে রয়েছে উচ্চ মর্তবা ও সুন্দর আবাসস্থল।
So We forgave him this (lapse): he enjoyed, indeed, a Near Approach to Us, and a beautiful place of (Final) Return.