৩৬৩৯। এর পরে মানুষের সৃষ্টির তৃতীয় ধাপকে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্ মানুষের অবয়বকে সুঠাম, সৌন্দর্যমন্ডিত এবং যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। দেখুন আয়াত [ ১৫ : ২৯ ]। সৃষ্টির প্রাথমিক ক্রিয়ায় শুক্র ডিম্ব কোষকে নিষিক্ত করার ফলে প্রাণের অস্তিত্বের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই নিষিক্ত ডিম্ব ধীরে ধীরে মনুষ্য সৃষ্টির পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সৃষ্টি হয় , জীবনের বিকাশ আরম্ভ হয়। এই প্রক্রিয়ায় অভিজোযিত বস্তু শুধু যে প্রয়োজন মেটায় তাই-ই নয়, তা সৌন্দর্য বৃদ্ধিরও সহায়ক। এ পর্যন্ত মানব সৃষ্টির বর্ণনায় জান্তব বা পশুপ্রকৃতির দিকটি বর্ণনা করা হয়েছে। এ বারে বর্ণনা করা হয়েছে মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা যার কারণে মানব দেহে আল্লাহ্র “রূহ কে ফুঁকিয়া ” দেয়া হয়। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। মানুষ সাধারণ প্রাণীকূল থেকে আলাদা।
৩৬৪০। আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহের কারণে মানুষ বিশেষ মানসিক দক্ষতা প্রাপ্ত হয়। ইউসুফ আলী সাহেবের মতে প্রাণীদেহের পাচঁটি ইন্দ্রিয় লাভ হচ্ছে মানব গঠনের তৃতীয় ধাপ – যা মানুষ ও প্রাণী উভয়ের বেলাতে প্রযোজ্য। কিন্তু চতুর্থ ধাপে মানুষকে প্রাণীদের থেকে উর্দ্ধে উত্তোলন করা হয়েছে। সে কারণে তৃতীয় ধাপে সম্বোধনের ভাষা হচ্ছে ‘উহাকে’ যা তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হয়। এবং চতুর্থ ধাপে সম্বোধনের ভাষা হচ্ছে দ্বিতীয় পুরুষ “তোমাদিগকে” – এমন কি তৃতীয় পুরুষ ‘তাহাকে’ শব্দও ব্যবহার করা হয় নাই। কারণ আল্লাহ্র রূহ গ্রহণের ফলে তার মাঝে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার জন্মলাভ ঘটেছে। সে আল্লাহ্র বাণীর মর্মার্থ গ্রহণে সক্ষম। অর্থাৎ সে প্রকৃত সত্যের বাণী শুনতে পারে, তার শোনার ক্ষমতা থাকে। তার দেখার ক্ষমতা জন্মে , অর্থাৎ প্রকৃত সত্যকে সে দেখতে পারে, তার সে অন্তর্দৃষ্টি থাকে। তার মাঝে ভালোবাসার ক্ষমতা, সত্য ও সুন্দর কে অনুভব করার ক্ষমতা জন্মে। যে মানুষকে স্রষ্টা আকারে চেহারায়, অবয়বে, মানসিক দক্ষতায় , সৌন্দর্য্যে সুষম ও শ্রেষ্ঠ রূপে গড়েছেন , মানুষ কি তার জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ?
আয়াতঃ 032.010
তারা বলে, আমরা মৃত্তিকায় মিশ্রিত হয়ে গেলেও পুনরায় নতুন করে সৃজিত হব কি? বরং তারা তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে।
And they say: ”When we are (dead and become) lost in the earth, shall we indeed be recreated anew?” Nay, but they deny the Meeting with their Lord!
وَقَالُوا أَئِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ بَلْ هُم بِلِقَاء رَبِّهِمْ كَافِرُونَ (
Waqaloo a-itha dalalna fee al-ardi a-inna lafee khalqin jadeedin bal hum biliqa-i rabbihim kafiroona
YUSUFALI: And they say: “What! when we lie, hidden and lost, in the earth, shall we indeed be in a Creation renewed? Nay, they deny the Meeting with their Lord.
PICKTHAL: And they say: When we are lost in the earth, how can we then be re-created? Nay but they are disbelievers in the meeting with their Lord.
SHAKIR: And they say: What! when we have become lost in the earth, shall we then certainly be in a new creation? Nay! they are disbelievers in the meeting of their Lord.
KHALIFA: They wonder, “After we vanish into the earth, do we get created anew?” Thus, as regards meeting their Lord, they are disbelievers.
১০। এবং তারা বলে, ” সে কি ! যখন আমরা মাটির [ নীচে ] শুয়ে থাকবো, লুক্কায়িত থাকবো এবং হারিয়ে যাব, তখন আবার কি আমরা নূতন ভাবে সৃষ্টি হব ৩৬৪১?” বরং তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধেই অস্বীকার করে।
৩৬৪১। দেখুন আয়াত [১৩ : ৫ ]। ‘তারা ‘ শব্দটি দ্বারা তাদেরই বোঝানো হয়েছে যারা আল্লাহ্র অনুগ্রহের জন্য ‘সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” এরা হচ্ছে বস্তুবাদী এবং সন্দেহবাতিক – যারা পৃথিবীর জীবনশেষে মৃত্যু পরবর্তী আর কোনও জীবনই স্বীকার করতে চায় না। তারা তাদের জীবনের সীমানাকে পৃথিবীর জীবনের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী। এই আয়াতে তাদের বক্তব্য থেকে এই কথাই প্রমাণিত হয় যে, তাদের বিরুদ্ধে এই যুক্তির অবতারণা করা হয়েছিলো যে, যদি স্রষ্টা প্রথমে এত সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টিতে সক্ষম হন, তবে পরলোকে মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় বারেই বা তা করতে সক্ষম হবেন না কেন? বস্তুত পক্ষে এ সব লোক পরলোককে অস্বীকার করার প্রবণতা থেকেই এরূপ কথা বলে যে, ‘আমাদের আবার কি নূতন করে সৃষ্টি করা হবে ?’ প্রতিপালকের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করার ফলেই তাদের অন্তরে এরূপ ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্মে। অপরপক্ষে পরলোকের জীবন সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস এবং সেই জীবনের আশা আকাঙ্খার সাথে আল্লাহ্র প্রতি একান্ত নির্ভরশীলতাই হচ্ছে আমাদের ঈমানের বা বিশ্বাসের মজবুত ভিত্তি।
আয়াতঃ 032.011
বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
Say: ”The angel of death, who is set over you, will take your souls, then you shall be brought to your Lord.”