- সূরার নাম: সূরা সেজদাহ
- বিভাগসমূহ: ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ
সূরা সেজদাহ
আয়াতঃ 032.001
আলিফ-লাম-মীম।
AlifLâmMîm. [These letters are one of the miracles of the Qur’ân, and none but Allâh (Alone) knows their meanings.]
الم
Alif-lam-meem
YUSUFALI: A. L. M.
PICKTHAL: Alif. Lam. Mim
SHAKIR: Alif Lam Mim.
KHALIFA: A. L. M.
০১। আলিফ্ -লাম-মীম ,
০২। এই কিতাব জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নাই ৩৬২৯।
৩৬২৯। আমাদের রাসুলের আগমনের পূর্বে ,পূর্ববর্তী নবী রসুলদের ঐশী গ্রন্থসমূহ মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করে। এর কারণ ছিলো, মানুষের অজ্ঞতা, স্বার্থপরতা, প্রতারণা এবং ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা। এভাবে প্রত্যাদেশের অনেক অংশ সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে যায় এবং সেখানে মানুষের মনগড়া বিষয়বস্তু স্থান লাভ করে। নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা দ্বারা ধর্মীয় প্রত্যাদেশকে প্রকাশ করতে প্রয়াস পায়। ফলে এ সব ধর্মের মাঝে বহু বিভক্তির সৃষ্টি হয়, এবং তারা পরস্পরের মাঝে ধর্মীয় ব্যাখ্যার ব্যাপারে কূট তর্কে জড়িয়ে পড়ে। কোরাণের অবতীর্ণ দ্বারা এ সব কূট তর্ক ও বিভেদের অবসান ঘটে। কোরাণের আয়াতসমূহ সরাসরি আল্লাহ্র নিকট থেকে আগত। আল্লাহ্ হচ্ছেন সার্বভৌম এবং জগতসমূহের প্রতিপালক। মানুষের তৈরী দর্শনে সর্বদাই সন্দেহ ও তর্কের অবকাশ থাকে।
আয়াতঃ 032.002
এ কিতাবের অবতরণ বিশ্বপালনকর্তার নিকট থেকে এতে কোন সন্দেহ নেই।
The revelation of the Book (this Qur’ân) is from the Lord of the ’Alamîn (mankind, jinns and all that exists) in which there is not doubt!
تَنزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ
Tanzeelu alkitabi la rayba feehi min rabbi alAAalameena
YUSUFALI: (This is) the Revelation of the Book in which there is no doubt,- from the Lord of the Worlds.
PICKTHAL: The revelation of the Scripture whereof there is no doubt is from the Lord of the Worlds.
SHAKIR: The revelation of the Book, there is no doubt in it, is from the Lord of the worlds.
KHALIFA: The book is, without a doubt, a revelation from the Lord of the universe.
০১। আলিফ্ -লাম-মীম ,
০২। এই কিতাব জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নাই ৩৬২৯।
৩৬২৯। আমাদের রাসুলের আগমনের পূর্বে ,পূর্ববর্তী নবী রসুলদের ঐশী গ্রন্থসমূহ মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করে। এর কারণ ছিলো, মানুষের অজ্ঞতা, স্বার্থপরতা, প্রতারণা এবং ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা। এভাবে প্রত্যাদেশের অনেক অংশ সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে যায় এবং সেখানে মানুষের মনগড়া বিষয়বস্তু স্থান লাভ করে। নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা দ্বারা ধর্মীয় প্রত্যাদেশকে প্রকাশ করতে প্রয়াস পায়। ফলে এ সব ধর্মের মাঝে বহু বিভক্তির সৃষ্টি হয়, এবং তারা পরস্পরের মাঝে ধর্মীয় ব্যাখ্যার ব্যাপারে কূট তর্কে জড়িয়ে পড়ে। কোরাণের অবতীর্ণ দ্বারা এ সব কূট তর্ক ও বিভেদের অবসান ঘটে। কোরাণের আয়াতসমূহ সরাসরি আল্লাহ্র নিকট থেকে আগত। আল্লাহ্ হচ্ছেন সার্বভৌম এবং জগতসমূহের প্রতিপালক। মানুষের তৈরী দর্শনে সর্বদাই সন্দেহ ও তর্কের অবকাশ থাকে।
আয়াতঃ 032.003
তারা কি বলে, এটা সে মিথ্যা রচনা করেছে? বরং এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে সত্য, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। সম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।
Or say they: ”He (Muhammad SAW) has fabricated it?” Nay, it is the truth from your Lord, that you may warn a people to whom no warner has come before you (O Muhammad SAW), in order that they may be guided.
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أَتَاهُم مِّن نَّذِيرٍ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
Am yaqooloona iftarahu bal huwa alhaqqu min rabbika litunthira qawman ma atahum min natheerin min qablika laAAallahum yahtadoona
YUSUFALI: Or do they say, “He has forged it”? Nay, it is the Truth from thy Lord, that thou mayest admonish a people to whom no warner has come before thee: in order that they may receive guidance.
PICKTHAL: Or say they: He hath invented it? Nay, but it is the Truth from thy Lord, that thou mayst warn a folk to whom no warner came before thee, that haply they may walk aright.
SHAKIR: Or do they say: He has forged it? Nay! it is the truth from your Lord that you may warn a people to whom no warner has come before you, that they may follow the right direction.
KHALIFA: They said, “He fabricated it.” Indeed, this is the truth from your Lord, to warn people who never received a warner before you, that they may be guided.
০৩। তবে ৩৬৩০ তারা কি বলে, ” সে [ মুহম্মদ ] ইহা জাল করেছে ? ” কখনও না, ইহা তোমার প্রভুর নিকট থেকে আগত সত্য,- যেনো তুমি সেই জাতিকে সর্তক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সর্তককারী আসে নাই , হয়তো তারা সৎপথ গ্রহণ করবে ৩৬৩১।
৩৬৩০। ‘ তবে কি ‘ বাক্যটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে অবিশ্বাসীরা কোরাণকে ঐশী গ্রন্থ হিসেবে বিশ্বাস করার পরিবর্তে রসুলের [ সা ] নিজস্ব রচনা হিসেবে মনে করে যা প্রতারণার সামিল। কিন্তু তাদের অনুমান সর্বৈব মিথ্যা : কারণ-
১) তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রধান সমালোচক ছিলো কোরেশরা – যারা তাঁকে সর্বদা সৎ ও সত্যবাদী বলে জানতো ;
২) তিনি ছিলেন নিরক্ষর। সুতারাং তাঁর পক্ষে পূর্ববর্তী কোন কিতাব পড়া সম্ভব নয়। সুতারাং তাঁর সকল জ্ঞানের উৎস হবে আল্লাহ্ কর্তৃক সরাসরি প্রদান; এবং
৩) প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হওয়ার অবশ্যই কোনও সুনির্দ্দিষ্ট কারণ থাকবে। কারণ রসুলের [সা ] পূর্বে আরবে কোনও নবীর আগমন ঘটে নাই।
৩৬৩১। একজন পথ প্রদর্শকের প্রকৃত অভাব ছিলো আরবদের মাঝে। তাদের মাঝে বিশ্ব নবীর আভির্ভাব আল্লাহ্র পূর্ববর্তী প্রত্যাদেশ সমূহের প্রত্যাশা অনুযায়ী -ই ঘটেছিলো।
আয়াতঃ 032.004
আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে বিরাজমান হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?
Allâh it is He Who has created the heavens and the earth, and all that is between them in six Days. Then He Istawâ (rose over) the Throne (in a manner that suits His Majesty). You (mankind) have none, besides Him, as a Walî (protector or helper etc.) or an intercessor. Will you not then remember (or be admonished)?
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ
Allahu allathee khalaqa alssamawati waal-arda wama baynahuma fee sittati ayyamin thumma istawa AAala alAAarshi ma lakum min doonihi min waliyyin wala shafeeAAin afala tatathakkaroona
YUSUFALI: It is Allah Who has created the heavens and the earth, and all between them, in six Days, and is firmly established on the Throne (of Authority): ye have none, besides Him, to protect or intercede (for you): will ye not then receive admonition?
PICKTHAL: Allah it is Who created the heavens and the earth, and that which is between them, in six Days. Then He mounted the Throne. Ye have not, beside Him, a protecting friend or mediator. Will ye not then remember?
SHAKIR: Allah is He Who created the heavens and the earth and what is between them in six periods, and He mounted the throne (of authority); you have not besides Him any guardian or any intercessor, will you not then mind?
KHALIFA: GOD is the One who created the heavens and the earth, and everything between them in six days, then assumed all authority. You have none beside Him as Lord, nor do you have an intercessor. Would you not take heed?
০৪। আল্লাহ্-ই ছয়দিনে আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবী ও ইহার অন্তর্বর্তী সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন ৩৬৩২। অতঃপর তিনি [কর্তৃত্বের ] সিংহাসনে দৃঢ়ভাবে সমাসীন হন ৩৬৩৩। তোমাদের কোন রক্ষাকারী অথবা সুপারিশকারী নাই। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না ?
৩৬৩২। “ছয়দিন” – দেখুন আয়াত [ ৭ : ৫৪ ] ও টিকা ১০৩১। আমাদের পৃথিবীর দিন ও রাত্রির সমতুল্য এই ‘দিন’ নয়। সময়ের ধারণা হচ্ছে আপেক্ষিক। পৃথিবীর বাসিন্দারা পৃথিবীর চর্তুদিকে সূর্যের আবর্তন দ্বারা দিন ও রাত্রিকে নির্ধারিত করে সময়ের ধারণা লাভ করে। কিন্তু এখানে যে ‘দিনের ‘ কথা বলা হয়েছে, সে ‘দিন’ বা দিনের ধারণা সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী সৃষ্টির বহু পূর্বের অবস্থা। সুতারাং আমাদের ‘দিন’ ও কোরাণ শরীফে বর্ণিত দিন এক নয়। নীচের আয়াত ৫ এ বলা হয়েছে এক একটি দিন আমাদের দিনের তুলনায় হাজার বছরের মত। আবার [ ৭০ : ৪ ] আয়াতে বলা হয়েছে ৫০,০০০ [ পঞ্চাশ ] হাজার বছরের সমান। এর থেকে এই সত্যকে বোঝানো হয়েছে যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ সময় ব্যপী এবং তা সৃষ্টি হয়েছে ছয়টি বিভিন্ন স্তরে বা যুগে যা সমর্থন করে আজকের বিজ্ঞান। আরও দেখুন [ ৪১ : ৯ -১২ ] আয়াত এবং টিকা।
৩৬৩৩। দেখুন আয়াত [ ১০ : ৩ ] এবং এর টিকা ১৩৮৬। আল্লাহ্ আকাশ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয়টি ধাপে। প্রাথমিক সৃষ্টির পরেও তিনি এ সকল কিছুরই সার্বভৌম কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুই তিনি পরিচালনা করেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ব্যাপারে তাঁর কোনও অংশীদার নাই। কাউকে তিনি তাঁর ক্ষমতা হস্তান্তর করেন নাই। এ ব্যাপারে তিনি কখনও ক্লান্তি অনুভব করেন না। আরও দেখুন আয়াত [ ৭ :৫৪]।
আয়াতঃ 032.005
তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।
He arranges (every) affair from the heavens to the earth, then it (affair) will go up to Him, in one Day, the space whereof is a thousand years of your reckoning (i.e. reckoning of our present world’s time).
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاء إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ
Yudabbiru al-amra mina alssama-i ila al-ardi thumma yaAAruju ilayhi fee yawmin kana miqdaruhu alfa sanatin mimma taAAuddoona
YUSUFALI: He rules (all) affairs from the heavens to the earth: in the end will (all affairs) go up to Him, on a Day, the space whereof will be (as) a thousand years of your reckoning.
PICKTHAL: He directeth the ordinance from the heaven unto the earth; then it ascendeth unto Him in a Day, whereof the measure is a thousand years of that ye reckon.
SHAKIR: He regulates the affair from the heaven to the earth; then shall it ascend to Him in a day the measure of which is a thousand years of what you count.
KHALIFA: All matters are controlled by Him from the heaven to the earth. To Him, the day is equivalent to one thousand of your years.
০৫। তিনি আকাশমন্ডলী থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন। সব শেষে [সকল বিষয়] তাঁর নিকট পৌঁছায় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় এক হাজার বৎসর হয় ৩৬৩৪।
৩৬৩৪। সময় একটি আপেক্ষিক ধারণা মাত্র। সময়ের এই বিশাল রহস্যকে আমাদের ধারণাতে অনুভবের জন্য এই আয়াতে সময়ের ধারণাকে আপেক্ষিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্র সৃষ্টির এক একটি দিন আমাদের ধারণার এক হাজার বা পঞ্চাশ হাজার দিনের সমান। সূদূর অতীতে স্রষ্টা সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু করেন যা আজও সমভাবে বর্তমান। তিনি সকল কিছু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। সৃষ্টির সকল কিছুই তার আইন মেনে চলতে বাধ্য। ভবিষ্যতে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুই তাঁর কাছে নীত হবে বিচারের জন্য। তিনি হবেন বিচারপতি। সেদিন তিনি সকল ভ্রান্তির অবসান ঘটাবেন, সকল কিছুরই প্রকৃত মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আর এসব কিছুই ঘটবে এক দিনের মধ্যে বা এক ঘন্টার মধ্যে বা এক মূহুর্তের মধ্যে বা চোখের পলকে। কিন্তু আমাদের ধারণায় তা মনে হবে হাজার বছরের সমান।
আয়াতঃ 032.006
তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু,
That is He, the AllKnower of the unseen and the seen, the AllMighty, the Most Merciful.
ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
Thalika AAalimu alghaybi waalshshahadati alAAazeezu alrraheemu
YUSUFALI: Such is He, the Knower of all things, hidden and open, the Exalted (in power), the Merciful;-
PICKTHAL: Such is the Knower of the Invisible and the Visible, the Mighty, the Merciful,
SHAKIR: This is the Knower of the unseen and the seen, the Mighty the Merciful,
KHALIFA: Knower of all secrets and declarations; the Almighty, Most Merciful.
০৬। তিনি এরূপই , যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত, [ ক্ষমতায় ] পরাক্রমশালী, এবং দয়ালু ৩৬৩৫।
৩৬৩৫। আল্লাহ্র প্রতি আরোপিত নাম সমূহকে সার সংক্ষেপ করা হয়েছে এই আয়াতে এবং তা হচ্ছে তিনি –
১) সর্বজ্ঞ,
২) অসীম ক্ষমতার অধিকারী, এবং
৩) পরম দয়ালু।
সর্বজ্ঞ : অর্থাৎ তিনি দৃশ্য অদৃশ্য সকল জ্ঞানের অধিকারী, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের কোনও কিছুই তাঁর অজ্ঞাত নয়। আল্লাহ্র পরিপূর্ণ ও সঠিক জ্ঞানের পটভূমিতে মানুষের জ্ঞান আংশিক, অকিঞ্চিতকর এবং অনিশ্চিত।
ক্ষমতা : আমাদের ক্ষমতা অনেক সময়েই আমাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। কারণ আমাদের ক্ষমতার পরিধি অত্যন্ত সীমিত। অনেক সময়েই ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করতে আমাদের সময় ও অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আল্লাহ্ হচ্ছেন মহা পরাক্রমশালী, তাঁর কারও সাহায্যের প্রয়োজন নাই। তাঁর ইচ্ছার বাস্তবায়নে তিনি একাই সক্ষম।
করুণা ও দয়া : আমাদের করুণা ও দয়া শর্ত সাপেক্ষ ; কারণ আমরা পাপী ও দুষ্কৃতিকারীকে করুণা করতে অপারগ। কিন্তু তাঁর করুণা ও দয়া শর্তহীন , অসীম। ধনী, দরিদ্র , পাপী ,পূণ্যাত্মা সকলেই তা সমভাবে লাভ করে থাকে। তিনি পরম দয়ালু।
আয়াতঃ 032.007
যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।
Who made everything He has created good, and He began the creation of man from clay.
الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ
Allathee ahsana kulla shay-in khalaqahu wabadaa khalqa al-insani min teenin
YUSUFALI: He Who has made everything which He has created most good: He began the creation of man with (nothing more than) clay,
PICKTHAL: Who made all things good which He created, and He began the creation of man from clay;
SHAKIR: Who made good everything that He has created, and He began the creation of man from dust.
KHALIFA: He is the One who perfected everything He created, and started the creation of the human from clay.
০৭। তিনিই প্রত্যেকটি সৃষ্ট বস্তুকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন ৩৬৩৬। এবং কাদা দ্বারা মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন ৩৬৩৭।
৩৬৩৬। আল্লাহ্র সৃষ্টির প্রতিটি জিনিষই “উত্তম ” : বিশ্বকর্মার প্রতিটি জিনিষই সুন্দর , যথাযথ, সুক্ষ এবং নির্দ্দিষ্ট কাজের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সৃষ্টিতে কোনও অসুন্দর নাই, কোন অসামঞ্জস্য বা বিশৃঙ্খলা নাই। পৃথিবীতে যা কিছু অসুন্দর ও বিশৃঙ্খলা সবই মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট। আর তার পিছনে থাকে মানুষকে দেয় স্রষ্টার “সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি।” আধ্যাত্মিক শিক্ষা মানুষের এই “সীমিত ইচ্ছাশক্তিকে” উপদেশ ও অনুশীলনের মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালিত এবং স্রষ্টার ইচ্ছার সাথে সমন্বিত করে।
৩৬৩৭। প্রথমতঃ মানুষ সৃষ্টির তুচ্ছ ও অকিঞ্চিতকর বিষয়গুলি সম্বন্ধে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। মানুষের শরীরকে [ আত্মা নয় ] গঠন করা হয়েছে তুচ্ছ কর্দ্দম থেকে, যা পৃথিবীর মূল উপাদান। সুতারাং মানুষের অস্তিত্বের প্রথম অংশ জড়িত থাকে তুচ্ছ জড় পদার্থের সাথে। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে জড় পদার্থও নিজে সৃষ্টি হতে পারে না। তা সবই আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট।
আয়াতঃ 032.008
অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।
Then He made his offspring from semen of worthless water (male and female sexual discharge).
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ
Thumma jaAAala naslahu min sulalatin min ma-in maheenin
YUSUFALI: And made his progeny from a quintessence of the nature of a fluid despised:
PICKTHAL: Then He made his seed from a draught of despised fluid;
SHAKIR: Then He made his progeny of an extract, of water held in light estimation.
KHALIFA: Then He continued his reproduction through a certain lowly liquid.
০৮। অতঃপর তিনি তার বংশ তৈরী করেন ঘৃণ্য তরল পদার্থের নির্যাস থেকে ৩৬৩৮।
৩৬৩৮। এর পরে উল্লেখ করা হয়েছে মানুষের বংশ বিস্তার সম্বন্ধে। যদিও মানুষের বংশ বিস্তার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শারীরিক, এবং জান্তব বা পশুপ্রকৃতি , তবুও তা প্রাণহীন বা জড় নয়। এভাবেই মানুষের বংশ বিস্তারকে জড় পদার্থ থেকে একধাপ উন্নত করা হয়েছে। মানুষের বংশ বিস্তার প্রক্রিয়া শুরু হয় ‘তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস’ বীর্য থেকে। যদিও তা তুচ্ছ, তবুও তা মানব দেহের কেন্দ্রীভূত বিশুদ্ধ সারাংশ। আর জীবদেহ গঠনকারী এই অতিরিক্ত অপরিহার্য অংশ থাকে শরীরের সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য স্থানে যেখান দিয়ে মুত্র নিঃসৃত হয়। সে কারণে বীর্য বা শুক্রকেও ঘৃণ্যভাবে অনুমান করা হয়। শুক্র বা বীর্য জীবন্ত জীবকোষ যার মাধ্যমে স্রষ্টা পূর্বপুরুষদের জীবন ইতিহাসকে বংশ পরস্পরায় প্রবাহিত করেন। দেখুন [ ২৩ : ১২ ] আয়াত এবং টিকা ২৮৭২।
আয়াতঃ 032.009
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
Then He fashioned him in due proportion, and breathed into him the soul (created by Allâh for that person), and He gave you hearing (ears), sight (eyes) and hearts. Little is the thanks you give!
ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
Thumma sawwahu wanafakha feehi min roohihi wajaAAala lakumu alssamAAa waal-absara waal-af-idata qaleelan ma tashkuroona
YUSUFALI: But He fashioned him in due proportion, and breathed into him something of His spirit. And He gave you (the faculties of) hearing and sight and feeling (and understanding): little thanks do ye give!
PICKTHAL: Then He fashioned him and breathed into him of His Spirit; and appointed for you hearing and sight and hearts. Small thanks give ye!
SHAKIR: Then He made him complete and breathed into him of His spirit, and made for you the ears and the eyes and the hearts; little is it that you give thanks.
KHALIFA: He shaped him and blew into him from His spirit. And He gave you the hearing, the eyesight, and the brains; rarely are you thankful.
০৯। কিন্তু তিনি উহাকে সঠিক অনুপাতে গঠন করেছেন এবং উহাতে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রূহু থেকে ৩৬৩৯। এবং তিনি তোমাদের দিয়েছেন শোনার, দেখার ও অনুভবের [ বুঝতে পারার ] ক্ষমতা ৩৬৪০। তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।
৩৬৩৯। এর পরে মানুষের সৃষ্টির তৃতীয় ধাপকে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্ মানুষের অবয়বকে সুঠাম, সৌন্দর্যমন্ডিত এবং যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। দেখুন আয়াত [ ১৫ : ২৯ ]। সৃষ্টির প্রাথমিক ক্রিয়ায় শুক্র ডিম্ব কোষকে নিষিক্ত করার ফলে প্রাণের অস্তিত্বের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই নিষিক্ত ডিম্ব ধীরে ধীরে মনুষ্য সৃষ্টির পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সৃষ্টি হয় , জীবনের বিকাশ আরম্ভ হয়। এই প্রক্রিয়ায় অভিজোযিত বস্তু শুধু যে প্রয়োজন মেটায় তাই-ই নয়, তা সৌন্দর্য বৃদ্ধিরও সহায়ক। এ পর্যন্ত মানব সৃষ্টির বর্ণনায় জান্তব বা পশুপ্রকৃতির দিকটি বর্ণনা করা হয়েছে। এ বারে বর্ণনা করা হয়েছে মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা যার কারণে মানব দেহে আল্লাহ্র “রূহ কে ফুঁকিয়া ” দেয়া হয়। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। মানুষ সাধারণ প্রাণীকূল থেকে আলাদা।
৩৬৪০। আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহের কারণে মানুষ বিশেষ মানসিক দক্ষতা প্রাপ্ত হয়। ইউসুফ আলী সাহেবের মতে প্রাণীদেহের পাচঁটি ইন্দ্রিয় লাভ হচ্ছে মানব গঠনের তৃতীয় ধাপ – যা মানুষ ও প্রাণী উভয়ের বেলাতে প্রযোজ্য। কিন্তু চতুর্থ ধাপে মানুষকে প্রাণীদের থেকে উর্দ্ধে উত্তোলন করা হয়েছে। সে কারণে তৃতীয় ধাপে সম্বোধনের ভাষা হচ্ছে ‘উহাকে’ যা তুচ্ছার্থে ব্যবহার করা হয়। এবং চতুর্থ ধাপে সম্বোধনের ভাষা হচ্ছে দ্বিতীয় পুরুষ “তোমাদিগকে” – এমন কি তৃতীয় পুরুষ ‘তাহাকে’ শব্দও ব্যবহার করা হয় নাই। কারণ আল্লাহ্র রূহ গ্রহণের ফলে তার মাঝে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার জন্মলাভ ঘটেছে। সে আল্লাহ্র বাণীর মর্মার্থ গ্রহণে সক্ষম। অর্থাৎ সে প্রকৃত সত্যের বাণী শুনতে পারে, তার শোনার ক্ষমতা থাকে। তার দেখার ক্ষমতা জন্মে , অর্থাৎ প্রকৃত সত্যকে সে দেখতে পারে, তার সে অন্তর্দৃষ্টি থাকে। তার মাঝে ভালোবাসার ক্ষমতা, সত্য ও সুন্দর কে অনুভব করার ক্ষমতা জন্মে। যে মানুষকে স্রষ্টা আকারে চেহারায়, অবয়বে, মানসিক দক্ষতায় , সৌন্দর্য্যে সুষম ও শ্রেষ্ঠ রূপে গড়েছেন , মানুষ কি তার জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ?
আয়াতঃ 032.010
তারা বলে, আমরা মৃত্তিকায় মিশ্রিত হয়ে গেলেও পুনরায় নতুন করে সৃজিত হব কি? বরং তারা তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে।
And they say: ”When we are (dead and become) lost in the earth, shall we indeed be recreated anew?” Nay, but they deny the Meeting with their Lord!
وَقَالُوا أَئِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ بَلْ هُم بِلِقَاء رَبِّهِمْ كَافِرُونَ (
Waqaloo a-itha dalalna fee al-ardi a-inna lafee khalqin jadeedin bal hum biliqa-i rabbihim kafiroona
YUSUFALI: And they say: “What! when we lie, hidden and lost, in the earth, shall we indeed be in a Creation renewed? Nay, they deny the Meeting with their Lord.
PICKTHAL: And they say: When we are lost in the earth, how can we then be re-created? Nay but they are disbelievers in the meeting with their Lord.
SHAKIR: And they say: What! when we have become lost in the earth, shall we then certainly be in a new creation? Nay! they are disbelievers in the meeting of their Lord.
KHALIFA: They wonder, “After we vanish into the earth, do we get created anew?” Thus, as regards meeting their Lord, they are disbelievers.
১০। এবং তারা বলে, ” সে কি ! যখন আমরা মাটির [ নীচে ] শুয়ে থাকবো, লুক্কায়িত থাকবো এবং হারিয়ে যাব, তখন আবার কি আমরা নূতন ভাবে সৃষ্টি হব ৩৬৪১?” বরং তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধেই অস্বীকার করে।
৩৬৪১। দেখুন আয়াত [১৩ : ৫ ]। ‘তারা ‘ শব্দটি দ্বারা তাদেরই বোঝানো হয়েছে যারা আল্লাহ্র অনুগ্রহের জন্য ‘সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” এরা হচ্ছে বস্তুবাদী এবং সন্দেহবাতিক – যারা পৃথিবীর জীবনশেষে মৃত্যু পরবর্তী আর কোনও জীবনই স্বীকার করতে চায় না। তারা তাদের জীবনের সীমানাকে পৃথিবীর জীবনের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী। এই আয়াতে তাদের বক্তব্য থেকে এই কথাই প্রমাণিত হয় যে, তাদের বিরুদ্ধে এই যুক্তির অবতারণা করা হয়েছিলো যে, যদি স্রষ্টা প্রথমে এত সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টিতে সক্ষম হন, তবে পরলোকে মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় বারেই বা তা করতে সক্ষম হবেন না কেন? বস্তুত পক্ষে এ সব লোক পরলোককে অস্বীকার করার প্রবণতা থেকেই এরূপ কথা বলে যে, ‘আমাদের আবার কি নূতন করে সৃষ্টি করা হবে ?’ প্রতিপালকের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করার ফলেই তাদের অন্তরে এরূপ ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্মে। অপরপক্ষে পরলোকের জীবন সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস এবং সেই জীবনের আশা আকাঙ্খার সাথে আল্লাহ্র প্রতি একান্ত নির্ভরশীলতাই হচ্ছে আমাদের ঈমানের বা বিশ্বাসের মজবুত ভিত্তি।
আয়াতঃ 032.011
বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
Say: ”The angel of death, who is set over you, will take your souls, then you shall be brought to your Lord.”
قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ
Qul yatawaffakum malaku almawti allathee wukkila bikum thumma ila rabbikum turjaAAoona
YUSUFALI: Say: “The Angel of Death, put in charge of you, will (duly) take your souls: then shall ye be brought back to your Lord.”
PICKTHAL: Say: The angel of death, who hath charge concerning you, will gather you, and afterward unto your Lord ye will be returned.
SHAKIR: Say: The angel of death who is given charge of you shall cause you to die, then to your Lord you shall be brought back.
KHALIFA: Say, “You will be put to death by the angel in whose charge you are placed, then to your Lord you will be returned.”
১১। বল : ” তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা [ ঠিক সময়ে ] তোমাদের আত্মাকে হরণ করবে ৩৬৪২। অতঃপর তোমাদের সকলকে তোমাদের প্রভুর নিকট ফিরিয়ে আনা হবে।”
৩৬৪২। কবি বলেছেন যে, ‘জন্মিলে মরিতে হয়’। পৃথিবীতে এর থেকে বড় সত্য আর কিছু নাই। যদি পরলোকের অনন্ত জীবন এবং সেই জীবনের সুখ শান্তির জন্য পৃথিবীর জীবনকে নির্ধারিত করা না হতো , তবে মানুষের জন্য পৃথিবীর জীবন অর্থহীন হয়ে যেতো। মৃত্যুর সাথে সাথে যে জীবন শেষ হয়ে যায় সে জীবন তো পশু তুল্য। পশুর ন্যায় সে জীবনের কোনও মহত্বর বা উচ্চতর পরিপূর্ণতার দিক নাই। কারণ পশুদের কোনও আত্মা নাই। এ বিশাল বিশ্বভূবনে একমাত্র মানুষেরই জীবনের সাথে আত্মার অস্তিত্ব বিদ্যমান। মৃত্যুর মাঝে মৃত্যুদূত সেই আত্মাকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং আমাদের আত্মাকে অন্য এক নূতন পৃথিবীতে নীত করে। যদি আমরা আত্মার অস্তিত্বকে স্বীকার করি, তাহলে আমাদের ধর্মকে স্বীকার করতে হয়। কারণ আত্মার অস্তিত্বই হচ্ছে ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল ভিত্তি স্বরূপ। আর ধর্মীয় বিশ্বাস হচ্ছে মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনের অস্তিত্বে বিশ্বাস। সুতারাং অবিনশ্বর আত্মার অস্তিত্বে অবিশ্বাস হচ্ছে নাস্তিকতার ভিত্তি।
আয়াতঃ 032.012
যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি।
And if you only could see when the Mujrimûn (criminals, disbelievers, polytheists, sinners, etc.) shall hang their heads before their Lord (saying): ”Our Lord! We have now seen and heard, so send us back (to the world), we will do righteous good deeds. Verily! We now believe with certainty.”
وَلَوْ تَرَى إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُؤُوسِهِمْ عِندَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ
Walaw tara ithi almujrimoona nakisoo ruoosihim AAinda rabbihim rabbana absarna wasamiAAna faarjiAAna naAAmal salihan inna mooqinoona
YUSUFALI: If only thou couldst see when the guilty ones will bend low their heads before their Lord, (saying:) “Our Lord! We have seen and we have heard: Now then send us back (to the world): we will work righteousness: for we do indeed (now) believe.”
PICKTHAL: Couldst thou but see when the guilty hang their heads before their Lord, (and say): Our Lord! We have now seen and heard, so send us back; we will do right, now we are sure.
SHAKIR: And could you but see when the guilty shall hang down their heads before their Lord: Our Lord! we have seen and we have heard, therefore send us back, we will do good; surely (now) we are certain.
KHALIFA: If only you could see the guilty when they bow down their heads before their Lord: “Our Lord, now we have seen and we have heard. Send us back and we will be righteous. Now we have attained certainty.”
রুকু – ২
১২। যদি তুমি দেখতে পেতে, যখন অপরাধীরা তাদের প্রভুর সামনে মাথা নীচু করে [ বলবে ] : ” হে আমাদের প্রভু ! আমরা দেখলাম এবং আমরা শুনলাম ৩৬৪৩; এখন তুমি আমাদের পুণরায় [ পৃথিবীতে ] প্রেরণ কর। আমরা সৎ কাজ করবো। কারণ [ এখন ] আমরা প্রকৃতই বিশ্বাস করি।”
৩৬৪৩। মৃত্যু পরবর্তী যে জীবন আরম্ভ হবে সে জীবনে প্রতারণা ও আত্ম প্রবঞ্চনার কোনও সুযোগ থাকবে না। মানুষের চিন্তা, ভাবনা, কাজের উদ্দেশ্য বা নিয়ত , কর্ম সকল কিছুই পাপীদের নিকট দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে। সত্য উজ্জ্বলভাবে প্রতিভাত হবে। সেদিন পাপীরা আল্লাহ্র ন্যায় বিচারের ভয়ে প্রকম্পিত হবে। তারা অনুতপ্ত চিত্তে পূণঃরায় পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। কিন্তু তাদের সে সময়ের অনুতাপ কোনও কাজে আসবে না, কারণ তা অনেক দেরী হয়ে যাবে। কারণ আমাদের চেনা জানা পৃথিবীর কোনও অস্তিত্বই থাকবে না। নূতন পৃথিবী সৃষ্টি হবে যেখানে পৃথিবীর জীবনের পুণরাবৃত্তি ঘটতে দেয়া হবে না।
আয়াতঃ 032.013
আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশ দিতাম; কিন্তু আমার এ উক্তি অবধারিত সত্য যে, আমি জিন ও মানব সকলকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।
And if We had willed, surely! We would have given every person his guidance, but the Word from Me took effect (about evildoers), that I will fill Hell with jinn and mankind together.
وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
Walaw shi-na laatayna kulla nafsin hudaha walakin haqqa alqawlu minnee laamlaanna jahannama mina aljinnati waalnnasi ajmaAAeena
YUSUFALI: If We had so willed, We could certainly have brought every soul its true guidance: but the Word from Me will come true, “I will fill Hell with Jinns and men all together.”
PICKTHAL: And if We had so willed, We could have given every soul its guidance, but the word from Me concerning evildoers took effect: that I will fill hell with the jinn and mankind together.
SHAKIR: And if We had pleased We would certainly have given to every soul its guidance, but the word (which had gone forth) from Me was just: I will certainly fill hell with the jinn and men together.
KHALIFA: Had we willed, we could have given every soul its guidance, but it is already predetermined that I will fill Hell with jinns and humans, all together.
১৩। যদি আমি ইচ্ছা করতাম ৩৬৪৪; তবে আমি প্রতিটি আত্মাকে সত্যপথে পরিচালিত করতে পারতাম। কিন্তু আমার পক্ষ থেকে এ কথা সাব্যস্ত হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আমি জ্বিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো। ৩৬৪৫
৩৬৪৪। পৃথিবী কি পাপী শূন্য হওয়া সম্ভব ছিলো ? অবশ্য আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন তা হতো। আমাদের এই চেনা জানা পৃথিবীতে উদ্ভিদ জগত ও প্রাণীজগতকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন প্রাণ দিয়ে, কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনও ইচ্ছাশক্তি নাই। সুতারাং তারা আল্লাহ্ কর্তৃক দেয় নির্দ্দিষ্ট সীমারেখা কখনই অতিক্রম করতে পারে না। তারা আল্লাহ্র হুকুম বা বিধান অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। সুতারাং তাদের কোনও পাপ নাই। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে মানুষকেও সেভাবেই সৃষ্টি করতে পারতেন। মানুষের কোন স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকতো না। ফলে তাদের কোন কাজেই পাপ বা পূণ্য বলে কিছু থাকতো না। কিন্তু আল্লাহ্র তা ইচ্ছা নয়। পৃথিবীতে মানুষকে আল্লাহ্ সীমিত আকারে ” স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি” দিয়ে প্রেরণ করেছেন। সে ইচ্ছা করলে ভালোকে গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করার ক্ষমতা রাখে। যা অন্য কোনও প্রাণীর মাঝে নাই। সে কারণেই তিনি মানুষের জন্য জীবন -বিধান দিয়েছেন, যুগে যুগে নবী রসুলদের প্রেরণ করেছেন যেন মানুষের ‘স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ পবিত্র থাকে এবং মানুষ ‘সরল পথের ‘ সন্ধান লাভ করে। যুগে যুগে নবী রসুলদের মাধ্যমে আল্লাহ্র সিদ্ধান্ত পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা আল্লাহ্র আইনকে লঙ্ঘন করবে পরলোকে তাদের শাস্তি অনিবার্য। পাপীদের শাস্তি হবেই কারণ আল্লাহ্র ‘কথা অবশ্যই সত্য।’
৩৬৪৫। দেখুন আয়াত [ ১১ : ১১৯ ] ও টিকা ১৬২৩ এবং আয়াত [৭ : ১৮ ] এবং উপরের টিকা। শয়তান মানুষকে পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে যারা শয়তানের প্ররোচনার কাছে আত্মসমর্পন করে তারাই পরলোকে আল্লাহ্র শাস্তি ভোগ করবে।
আয়াতঃ 032.014
অতএব এ দিবসকে ভূলে যাওয়ার কারণে তোমরা মজা আস্বাদন কর। আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে স্থায়ী আযাব ভোগ কর।
Then taste you (the torment of the Fire) because of your forgetting the Meeting of this Day of yours, (and) surely! We too will forget you, so taste you the abiding torment for what you used to do.
فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاء يَوْمِكُمْ هَذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
Fathooqoo bima naseetum liqaa yawmikum hatha inna naseenakum wathooqoo AAathaba alkhuldi bima kuntum taAAmaloona
YUSUFALI: “Taste ye then – for ye forgot the Meeting of this Day of yours, and We too will forget you – taste ye the Penalty of Eternity for your (evil) deeds!”
PICKTHAL: So taste (the evil of your deeds). Forasmuch as ye forgot the meeting of this your day, lo! We forget you. Taste the doom of immortality because of what ye used to do.
SHAKIR: So taste, because you neglected the meeting of this day of yours; surely We forsake you; and taste the abiding chastisement for what you did.
KHALIFA: Taste the consequences of your forgetting this day; now we forget you. You have incurred eternal retribution in return for your own works.
১৪। ” সুতারাং [ শাস্তি ] আস্বাদন কর – কারণ আজকের এই সাক্ষাতের কথা তোমরা বিস্মৃত হয়েছিলে, এবং আমিও তোমাদের কথা বিস্মৃত হব। তোমাদের [ মন্দ ] কাজের জন্য অনন্ত শাস্তির স্বাদ আস্বাদন কর।” ৩৬৪৬
৩৬৪৬। “বিস্মৃত হইয়াছিলে” শব্দটি আছে [ ৭ : ৫১ ] আয়াত ও টিকা ১০২৯। এই দুই আয়াতেই ‘বিস্মৃত হওয়া ‘ বা ভুলে যাওয়া শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ইচ্ছাকৃত ভাবে ও নিদারুণ ঘৃণা ও অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখান করা বোঝানোর জন্য। ” আমিও তোমাদিগকে বিস্মৃত হব ” – এই বাক্যটির অর্থ এই নয় যে জ্ঞানের অভাবে বা অজ্ঞতার জন্য বা স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার জন্য তা ঘটেছে। কারণ সূরা [ ২০ : ৫২ ] আয়াতে বলা হয়েছে : ” আল্লাহ্ ভ্রান্ত হন না, এবং বিস্মৃতও হন না।” আল্লাহ্র কাছে কোনও কিছুই হারিয়ে যায় না।
আয়াতঃ 032.015
কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যারা আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং অহংকারমুক্ত হয়ে তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে।
Only those believe in Our Ayât (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.), who, when they are reminded of them fall down prostrate, and glorify the Praises of their Lord, and they are not proud.
إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
Innama yu/minu bi-ayatina allatheena itha thukkiroo biha kharroo sujjadan wasabbahoo bihamdi rabbihim wahum la yastakbiroona
YUSUFALI: Only those believe in Our Signs, who, when they are recited to them, fall down in prostration, and celebrate the praises of their Lord, nor are they (ever) puffed up with pride.
PICKTHAL: Only those believe in Our revelations who, when they are reminded of them, fall down prostrate and hymn the praise of their Lord, and they are not scornful,
SHAKIR: Only they believe in Our communications who, when they are reminded of them, fall down in prostration and celebrate the praise of their Lord, and they are not proud.
KHALIFA: The only people who truly believe in our revelations are those who fall prostrate upon hearing them. They glorify and praise their Lord, without any arrogance.
১৫। কেবলমাত্র তারাই আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করে, যারা ইহার দ্বারা উপদেশ প্রাপ্ত হলে, ভক্তিভরে সেজ্দায় লুটিয়ে পড়ে ৩৬৪৭, এবং তাদের প্রভুর মহিমা প্রশংসার সাথে বর্ণনা করে এবং তারা [কখনও] অহংকারে স্ফীত হয় না।
৩৬৪৭। “Sujjadan” – সিজ্দা – সিজদা হচ্ছে দেহকে এক নির্দ্দিষ্ট ভঙ্গীতে বিন্যস্ত করা যার দ্বারা আল্লাহ্র প্রতি গভীর শ্রদ্ধা , ভালোবাসা ও বিনয় প্রকাশ করা হয়। সূরাটির নাম সিজ্দা হয়েছে এই আয়াতটির অনুসরণে। পৃথিবীতে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ চতুর্দ্দিকে ছড়ানো আছে, সৃষ্টির জন্য তাঁর সযত্ন তত্বাবধান আমাদের পৃথিবীর জীবনকে করেছে ঐশ্বর্যমন্ডিত সুখ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ। জীবনের প্রতি মুহূর্ত, প্রতিপল স্রষ্টার স্নেহময় অনুভবকে যে উপলব্ধি করতে পারে সেই তো কৃতজ্ঞ অন্তরে তাঁর প্রতি সেজদাতে লুণ্ঠিত হতে পারে। এই আয়াতটি পড়ার সময়ে সেজ্দা দান করা নিয়ম।
আয়াতঃ 032.016
তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।
Their sides forsake their beds, to invoke their Lord in fear and hope, and they spend (charity in Allâh’s Cause) out of what We have bestowed on them.
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
Tatajafa junoobuhum AAani almadajiAAi yadAAoona rabbahum khawfan watamaAAan wamimma razaqnahum yunfiqoona
YUSUFALI: Their limbs do forsake their beds of sleep, the while they call on their Lord, in Fear and Hope: and they spend (in charity) out of the sustenance which We have bestowed on them.
PICKTHAL: Who forsake their beds to cry unto their Lord in fear and hope, and spend of that We have bestowed on them.
SHAKIR: Their sides draw away from (their) beds, they call upon their Lord in fear and in hope, and they spend (benevolently) out of what We have given them.
KHALIFA: Their sides readily forsake their beds, in order to worship their Lord, out of reverence and hope, and from our provisions to them, they give.
১৬। তাদের অংগপ্রত্যঙ্গ [ আরামের ] নিদ্রা ত্যাগ করে ৩৬৪৮ তাদের প্রভুকে ডাকে, ভয় এবং আশার সাথে ৩৬৪৯। আমি তদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে তারা [ দানে ] ব্যয় করে।
৩৬৪৮। আল্লাহ্র প্রতি সশ্রদ্ধ ভক্তি জানানোর সর্বোচ্চ সময় হচ্ছে নিশুতি রাত। সে সময় বিশ্ব প্রকৃতি থাকে সুপ্তিতে নিমগ্ন। বিশ্ব চরাচর থাকে শব্দহীন। রাত্রির নৈশব্দ ভক্তের একগ্রতা বৃদ্ধি করে, আল্লাহ্র স্নেহময় স্পর্শ,নৈকট্য অনুভব করা হয় অনেক সহজ। এ কারণেই নারী ও পুরুষ নরম আরামদায়ক, সুখময় শয্যা, নিদ্রার বিলাস ত্যাগ করে আল্লাহ্র এবাদতে মগ্ন হয়। তাদের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গভীর অনুরাগে প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রতি ভক্তি নিবেদন করে নিশীত রাতের নির্জনতায়। তফসীরকারগণ এই সময়ের প্রার্থনার নাম দিয়েছেন তাহাজ্জুতের নামাজ – যা মধ্যরাতের পরে ফজরের নামাজের কিছু পূর্বে যে নামাজ পড়া হয়।
৩৬৪৯। ‘প্রতিপালককে ডাকে ভয় ও আশার সাথে।’ আশংকা এই কারণে যে , মোমেন বান্দার অন্তরে সর্বদা এই ভয় বিরাজ করে যে, হয়তো বা তাঁর এবাদত আল্লাহ্র প্রতি যোগ্য হচ্ছে না,হয়তো বা তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। আবার ‘আশা’ হচ্ছে এই জন্য যে আল্লাহ্ পরম করুণাময়, তিনি বান্দার দোষত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিচার করবেন। প্রকৃত মোমেন বান্দার মানসিক অবস্থাকে এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্র প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রার্থনার মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায় না তার বাস্তব প্রকাশ থাকতে হবে তাদের কাজের মাধ্যমে। মোমেন বান্দারা , আল্লাহ্ তাদের যাকে যে নেয়ামত দান করেছেন তাই থেকে আল্লাহ্র কাজে ব্যয় করে। আল্লাহ্র নেয়ামতসমূহের বিবরণের জন্য দেখুন টিকা ২৭।
আয়াতঃ 032.017
কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে।
No person knows what is kept hidden for them of joy as a reward for what they used to do.
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
Fala taAAlamu nafsun ma okhfiya lahum min qurrati aAAyunin jazaan bima kanoo yaAAmaloona
YUSUFALI: Now no person knows what delights of the eye are kept hidden (in reserve) for them – as a reward for their (good) deeds.
PICKTHAL: No soul knoweth what is kept hid for them of joy, as a reward for what they used to do.
SHAKIR: So no soul knows what is hidden for them of that which will refresh the eyes; a reward for what they did.
KHALIFA: You have no idea how much joy and happiness are waiting for you as a reward for your (righteous) works.
১৭। এখন কেহই জানে না তাদের জন্য নয়ন মুগ্ধকর কি জিনিষ লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের [ ভালো ] কাজের পুরষ্কার স্বরূপ ৩৬৫০।
৩৬৫০। ‘নয়ন মুগ্ধকর’ এটা একটা বাগ্ধারা যার দ্বারা বোঝানো হয় যে তৃপ্তিদায়ক, সুখকর ও আরামদায়ক পরিস্থিতি। বর্তমান জীবনে অবস্থান করে পারলৌকিক জীবনের সুখ ও শান্তি কল্পনা করাও মানুষের দুঃসাধ্য।
আয়াতঃ 032.018
ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়।
Is then he who is a believer like him who is Fâsiq (disbeliever and disobedient to Allâh)? Not equal are they.
أَفَمَن كَانَ مُؤْمِنًا كَمَن كَانَ فَاسِقًا لَّا يَسْتَوُونَ
Afaman kana mu/minan kaman kana fasiqan la yastawoona
YUSUFALI: Is then the man who believes no better than the man who is rebellious and wicked? Not equal are they.
PICKTHAL: Is he who is a believer like unto him who is an evil-liver? They are not alike.
SHAKIR: Is he then who is a believer like him who is a transgressor? They are not equal.
KHALIFA: Is one who is a believer the same as one who is wicked? They are not equal.
১৮। তাহলে কি যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে সে কি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে বিদ্রোহী ও দুষ্ট ৩৬৫১? তারা সমান নয়।
৩৬৫১। এখানে দু শ্রেণীর ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। এক শ্রেণী মুমিন ব্যক্তি , অন্য শ্রেণী পাপাচারী। এদের বর্ণনা আছে [ ১৯ – ২২ ] আয়াত পর্যন্ত।
আয়াতঃ 032.019
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত।
As for those who believe (in the Oneness of Allâh Islâmic Monotheism) and do righteous good deeds, for them are Gardens (Paradise) as an entertainment, for what they used to do.
أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَى نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
Amma allatheena amanoo waAAamiloo alssalihati falahum jannatu alma/wa nuzulan bima kanoo yaAAmaloona
YUSUFALI: For those who believe and do righteous deeds are Gardens as hospitable homes, for their (good) deeds.
PICKTHAL: But as for those who believe and do good works, for them are the Gardens of Retreat – a welcome (in reward) for what they used to do.
SHAKIR: As for those who believe and do good, the gardens are their abiding-place; an entertainment for what they did.
KHALIFA: As for those who believe and lead a righteous life, they have deserved the eternal Paradise. Such is their abode, in return for their works.
১৯। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, [ভালো ] কাজের জন্য তাদের আপ্যায়ন করা হবে চিরস্থায়ী বাসস্থান বেহেশতে ৩৬৫২।
৩৬৫২। ‘বাসস্থান’ – অর্থাৎ বাসভবন। গৃহ বা বাসভবন মানেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুখ ও শান্তির এক মনোরম ছবি যেখানে স্নেহ-ভালোবাসা , নিরাপত্তা , জীবনকে করে আরামদায়ক। যদি তার সাথে যুক্ত হয় সম্মান ও আদর আপ্যায়ন তাহলে তা সুখ ও শান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
আয়াতঃ 032.020
পক্ষান্তরে যারা অবাধ্য হয়, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। যখনই তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যা বলতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর।
And as for those who are Fâsiqûn (disbelievers and disobedient to Allâh), their abode will be the Fire, every time they wish to get away therefrom, they will be put back thereto, and it will be said to them: ”Taste you the torment of the Fire which you used to deny.”
وَأَمَّا الَّذِينَ فَسَقُوا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا أُعِيدُوا فِيهَا وَقِيلَ لَهُمْ ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّذِي كُنتُم بِهِ تُكَذِّبُونَ
Waamma allatheena fasaqoo fama/wahumu alnnaru kullama aradoo an yakhrujoo minha oAAeedoo feeha waqeela lahum thooqoo AAathaba alnnari allathee kuntum bihi tukaththiboona
YUSUFALI: As to those who are rebellious and wicked, their abode will be the Fire: every time they wish to get away therefrom, they will be forced thereinto, and it will be said to them: “Taste ye the Penalty of the Fire, the which ye were wont to reject as false.”
PICKTHAL: And as for those who do evil, their retreat is the Fire. Whenever they desire to issue forth from thence, they are brought back thither. Unto them it is said: Taste the torment of the Fire which ye used to deny.
SHAKIR: And as for those who transgress, their abode is the fire; whenever they desire to go forth from it they shall be brought back into it, and it will be said to them: Taste the chastisement of the fire which you called a lie.
KHALIFA: As for the wicked, their destiny is Hell. Every time they try to leave it, they will be forced back. They will be told, “Taste the agony of Hell which you used to disbelieve in.”
২০। এবং যারা বিদ্রোহী ও দুষ্ট তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদের জোরপূর্বক সেখানে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের বলা হবে, ” এখন আগুনের সেই শাস্তিকে আস্বাদন কর যাকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে। ” ৩৬৫৩
৩৬৫৩। দেখুন আয়াত [ ২২ : ২২ ]। মনোরম বাগান যেমন শান্তির প্রতীক, ঠিক সেরূপ আগুন হচ্ছে শাস্তি ও যন্ত্রণার প্রতীক। এই প্রতীকের মাধ্যমে বেহেশতের সুখশান্তি ও দোযখের শাস্তিকে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে পাপীদের দোযখের শাস্তি থেকে রেহাই নাই। যারা তাদের পাপের মাধ্যমে এই শাস্তি অর্জন করে থাকে তাদের মানসিক অবস্থা তখন কি হবে ? সে সময়ে তারা বলবে যে, “অনল উদ্গীরণকারী দোযখের শাস্তিকে আমরা মিথ্যা ও অলীক কল্পনা করেছিলাম, এখন তা সত্যে পরিণত হয়েছে।” পাপীরা সে অবস্থাকে কি ভাবে গ্রহণ করবে ?
আয়াতঃ 032.021
গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
And verily, We will make them taste of the near torment (i.e. the torment in the life of this world, i.e. disasters, calamities, etc.) prior to the supreme torment (in the Hereafter), in order that they may (repent and) return (i.e. accept Islâm).
وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
Walanutheeqannahum mina alAAathabi al-adna doona alAAathabi al-akbari laAAallahum yarjiAAoona
YUSUFALI: And indeed We will make them taste of the Penalty of this (life) prior to the supreme Penalty, in order that they may (repent and) return.
PICKTHAL: And verily We make them taste the lower punishment before the greater, that haply they may return.
SHAKIR: And most certainly We will make them taste of the nearer chastisement before the greater chastisement that haply they may turn.
KHALIFA: We let them taste the smaller retribution (of this world), before they incur the greater retribution (of the Hereafter), that they may (take a hint and) reform.
২১। মহাশাস্তির পূর্বে [ দুনিয়াতে ] ওদের আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যেনো ওরা [ অনুতপ্ত হয়ে ] ফিরে আসে ৩৬৫৪।
৩৬৫৪। পরলোকের শাস্তি হচ্ছে পাপীদের জীবনের শেষ পরিণতি। পাপের শেষ পরিণতি দোযখ – এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই। তবে শেষ পরিণতির পূর্বে করুণাময় আল্লাহ্ তাদের পৃথিবীতে ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস পান। পৃথিবীতে দুর্ভাগ্য , দুঘর্টনা , দুঃখ-দুর্দ্দশা, প্রভৃতি শাস্তির মাধ্যমে স্রষ্টা তাদের বিপথ থেকে ফিরিয়ে, স্রষ্টার নিকট আত্মসমর্পনের প্রয়াস পান। পৃথিবীর এই লঘু শাস্তির রকমফের আছে। হতে পারে তা আর্থিক বা বিবেকের দংশন বা গোপন দুঃখ যা হৃদয়কে রক্তাক্ত করে। যখন এ সব দুর্ঘটনা হৃদয়কে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পন করে থাকে। সুতারাং পৃথিবীর এ সব দুঃখ দুর্দ্দশা বান্দার জন্য শাস্তি স্বরূপ না হয়ে, প্রকৃত সুখ- ও শান্তির কারণ হতে পারে। কারণ এর ফলে হয়তো পাপীরা পাপ থেকে নিবৃত হয়ে অনুতাপের মাধ্যমে সঠিক পথে প্রত্যার্পন করবে। যার ফলে পরলোকের জীবনে সে দোযখের শাস্তির পরিবর্তে বেহেশতের সুখের আস্বাদন করতে সমর্থ হবে।
আয়াতঃ 032.022
যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।
And who does more wrong than he who is reminded of the Ayât (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.) of his Lord, then he turns aside therefrom? Verily, We shall exact retribution from the Mujrimûn (criminals, disbelievers, polytheists, sinners, etc.).
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ
Waman athlamu mimman thukkira bi-ayati rabbihi thumma aAArada AAanha inna mina almujrimeena muntaqimoona
YUSUFALI: And who does more wrong than one to whom are recited the Signs of his Lord, and who then turns away therefrom? Verily from those who transgress We shall exact (due) Retribution.
PICKTHAL: And who doth greater wrong than he who is reminded of the revelations of his Lord, then turneth from them. Lo! We shall requite the guilty.
SHAKIR: And who is more unjust than he who is reminded of the communications of his Lord, then he turns away from them? Surely We will give punishment to the guilty.
KHALIFA: Who is more evil than one who is reminded of these revelations of his Lord, then insists upon disregarding them? We will certainly punish the guilty.
২২। তার থেকে বেশী পাপ কে করে, যার নিকট তার প্রভুর আয়াতসমূহ আবৃত্তি করার পরেও, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ? ৩৬৫৫ যারা সীমালংঘন করে আমি অবশ্যই তাদের নিকট [ উপযুক্ত ] প্রতিশোধ দাবী করবো।
৩৬৫৫। সর্বাপেক্ষা মন্দ ও কঠিন হৃদয় বিশিষ্ট সেই পাপী যে আল্লাহ্র নিদর্শন বা আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যে আল্লাহ্র আয়াতের শিক্ষাকে প্রত্যাখান করে এবং পাপের পথে ধাওয়া করে। আল্লাহ্র শিক্ষা – হতে পারে তা কোরাণের বাণীর মাধ্যমে বা মহান শিক্ষকদের পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে, অথবা জাগতিক জীবনে ছোটখাট বিপদ বিপর্যয় ও দুঃখ দুর্দ্দশার মাধ্যমে। পাপে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে যাদের হৃদয় কঠিন হয়ে যায়, তারা আল্লাহ্র এসব শিক্ষা থেকে শিক্ষা লাভ না করে ঔদ্ধত্যতার সাথে মুখ ফিরিয়ে রাখে। অনেক সময়ে সর্বনাশা বিপদ তাদের সর্ব অস্তিত্বকে ঘিরে ধরে – এসব ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানচক্ষু উম্মীলিত হওয়া উচিত ছিলো যে, আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও রহমত তাদের জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন, ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহ্র শিক্ষাকে প্রত্যাখানের ফলে তাদের বিবেক মৃত হয়ে যায়। তারা লাভের পরিবর্তে লোকসান ক্রয় করে। তাদের অবধারিত শাস্তি তাদেরই কর্মের ফল।
আয়াতঃ 032.023
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, অতএব আপনি কোরআন প্রাপ্তির বিষয়ে কোন সন্দেহ করবেন না। আমি একে বনী ইসরাঈলের জন্যে পথ প্রদর্শক করেছিলাম।
And indeed We gave Mûsa (Moses) the Scripture [the Taurât (Torah)]. So be not you in doubt of meeting him [i.e.when you met Mûsa (Moses) during the night of AlIsra’ and AlMi’râj over the heavens]. And We made it [the Taurât (Torah)] a guide to the Children of Israel.
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُن فِي مِرْيَةٍ مِّن لِّقَائِهِ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ
Walaqad atayna moosa alkitaba fala takun fee miryatin min liqa-ihi wajaAAalnahu hudan libanee isra-eela
YUSUFALI: We did indeed aforetime give the Book to Moses: be not then in doubt of its reaching (thee): and We made it a guide to the Children of Israel.
PICKTHAL: We verily gave Moses the Scripture; so be not ye in doubt of his receiving it; and We appointed it a guidance for the Children of Israel.
SHAKIR: And certainly We gave the Book to Musa, so be not in doubt concerning the receiving of it, and We made it a guide for the children of Israel.
KHALIFA: We have given Moses the scripture – do not harbor any doubt about meeting Him – and we made it a guide for the Children of Israel.
রুকু – ৩
২৩। আমি তো পূর্বে মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ৩৬৫৬। সুতারাং [তোমার নিকট ] ইহার প্রাপ্তি সম্বন্ধে কোন সন্দেহের মধ্যে থেকো না ৩৬৫৭। বণী ইসরাঈলীদের জন্য আমি উহাকে পথ প্রদর্শক করেছিলাম।
৩৬৫৬। যুগে যুগে আল্লাহ্ মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী রসুলদের পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাদের কাছে পবিত্র গ্রন্থ প্রেরণ করেছেন। একমাত্র হযরত মুহম্মদের [সা] নিকট প্রেরিত গ্রন্থ ব্যতীত কোনও গ্রন্থই সম্পূর্ণ নয়। হযরত মুসার কিতাবে আছে শুধুমাত্র ‘সারিয়া’ আইন বা জীবন বিধান। এই আইন হচ্ছে জীবন ধারণের পথ নির্দ্দেশ। মুসার পরে হযরত ঈসা আল্লাহ্র নিকট থেকে ঐশি গ্রন্থ প্রাপ্ত হন। তাঁর প্রাপ্ত কিতাব ‘ইন্জিলে’ শুধুমাত্র নৈতিক নীতিমালার সাধারণ বর্ণনা আছে, কোন ‘সারিয়া’ আইন বা জীবন বিধানের বর্ণনা নাই। হযরত ঈসার পরে বিশ্ব নবীর [ সা ] আগমন। তাঁর কাছে ঐশি গ্রন্থ কোরাণ প্রেরণ করা হয়। কোরাণের বিশেষত্ব হচ্ছে কোরাণ একটি সম্পূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এখানে ‘সারিয়া’ আইন বা জীবন বিধান [ code of life ] ও নৈতিক নীতিমালার সমন্বয় ঘটেছে। একই সাথে এই সূরাটি মক্কান সূরা। মক্কান সূরাগুলির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে কোন জীবন বিধানের উল্লেখ নাই। জীবন বিধান বা ‘সারিয়া’ আইন সম্বলিত সূরা অবতীর্ণ হয় মদিনাতে। এই সূরাতে রসুলকে [সা] আশ্বাস দান করা হয়েছে যে রসুলকেও [সা ] মুসার ন্যায় অর্থাৎ সারিয়া আইন সমৃদ্ধ কিতাব প্রেরণ করা হবে। পরবর্তীতে মদিনায় প্রেরিত সূরাগুলির মাধ্যমে ‘সারিয়া ‘ আইন বা জীবন বিধান প্রেরণ করা হয়। নবীর [সা] নিকট প্রেরিত মুসলিম জীবন বিধানে পূর্ববর্তীদের হযরত মুসার নিকট প্রেরিত অনেক জীবন বিধানকে বাতিল করা হয় এবং যুগোপযোগী জীবন বিধানের অবতারণা করা হয়। এ ভাবেই কোরাণ হচ্ছে এক পূণার্ঙ্গ ঐশি গ্রন্থ বা প্রত্যাদেশ।
৩৬৫৭। এই আয়াতটি সম্বন্ধে মতদ্বৈত আছে। “Liqa-i-hi” – এই বাক্যটির অর্থ সম্বন্ধে অনুবাদকদের মতদ্বৈতের কারণ ঘটেছে। এখানে সর্বনাম ‘hi’ কেহ কেহ অনুবাদ করেছেন ‘ইহা’ শব্দ দ্বারা আবার কেহ কেহ ‘তাহার’ শব্দ দ্বারা। মওলানা ইউসুফ আলী অনুবাদ করেছেন ‘ইহা’ শব্দ দ্বারা। এখানে ‘ইহা’ অর্থাৎ ‘কোরাণ’ বা ঐশি গ্রন্থকে বোঝানো হয়েছে। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান প্রণীত মারেফুল কোরাণেও অনুবাদ করা হয়েছে এভাবে ” আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি, অতএব আপনি কোরাণ প্রাপ্তির বিষয়ে কোন সন্দেহ করবেন না। আমি একে বনী ইসরাঈলীদের জন্য পথ প্রদর্শক করেছিলাম।” অনুবাদে এই অর্থটিই অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। ‘hi’ শব্দটিকে ‘তাহার ‘ শব্দ দ্বারা অনুবাদ করলে অর্থ দাড়ায় হযরত মুসার সাথে সাক্ষাৎকারের ব্যাপার, যা পরবর্তী লাইন থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
আয়াতঃ 032.024
তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল।
And We made from among them (Children of Israel), leaders, giving guidance under Our Command, when they were patient and used to believe with certainty in Our Ayât (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.).
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ
WajaAAalna minhum a-immatan yahdoona bi-amrina lamma sabaroo wakanoo bi-ayatina yooqinoona
YUSUFALI: And We appointed, from among them, leaders, giving guidance under Our command, so long as they persevered with patience and continued to have faith in Our Signs.
PICKTHAL: And when they became steadfast and believed firmly in Our revelations, We appointed from among them leaders who guided by Our command.
SHAKIR: And We made of them Imams to guide by Our command when they were patient, and they were certain of Our communications.
KHALIFA: We appointed from among them imams who guided in accordance with our commandments, because they steadfastly persevered and attained certainty about our revelations.
২৪। এবং আমি তাদের মধ্যে থেকে বহু নেতা নিযুক্ত করেছিলাম যারা আমার আদেশ অনুযায়ী হেদায়েত করতো; ততদিন পর্যন্ত যতদিন তারা অধ্যাবসায়ের সাথে ধৈর্য অবলম্বন করতো এবং আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস রেখেছিলো ৩৬৫৮।
৩৬৫৮। বনী ইসরাঈলীদের মধ্যে আল্লাহ্ বহু নেতা, নবী এবং রাজা প্রেরণ করেন, যারা ইসরাঈলীদের সঠিক পথের নির্দ্দেশ দান করেন এবং সমাজ জীবনে আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহ্র এই বিশেষ অনুগ্রহ ততদিনই ইসরাঈলীরা ভোগ করে, যতদিন তারা ছিলো আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী এবং ধৈর্য্যশীল। অর্থাৎ তারা আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন বিধান মেনে চলতো এবং বিপদ বিপর্যয়ে আল্লাহ্র প্রতি নির্ভর করে ধৈর্যের সাথে বিপদকে মোকাবিলা করতো। যখন ইসরাঈলীদের মাঝে থেকে এই অবস্থা অন্তর্হিত হয়, তখন থেকে তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ বঞ্চিত হয়। ফলে জাতি হিসেবে তারা বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে, আত্মকলহে নিমগ্ন হয়, এবং কার্যতঃ তারা পৃথিবী থেকে উচ্ছেদের পর্যায়ে পড়ে যায়। তাদের জাতীয় বিপর্যয়, অপমান, অবমাননা , বিশ্বে সকলেই জ্ঞাত। এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে আল্লাহ্র নির্দ্দেশিত পথে যে ব্যক্তি বা জাতি তার জীবন পরিচালনা করে, তাদের জন্য আছে ঐশ্বর্যময় ভবিষ্যত – কারণ আল্লাহ্র অনুগ্রহ তাদের উপরে বর্ষিত হয়। তারা সুযোগ্য নেতা লাভে সক্ষম হয় জাতীয় জীবনে।
আয়াতঃ 032.025
তারা যে বিষয়ে মত বিরোধ করছে, আপনার পালনকর্তাই কেয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন।
Verily, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection, concerning that wherein they used to differ.
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
Inna rabbaka huwa yafsilu baynahum yawma alqiyamati feema kanoo feehi yakhtalifoona
YUSUFALI: Verily thy Lord will judge between them on the Day of Judgment, in the matters wherein they differ (among themselves)
PICKTHAL: Lo! thy Lord will judge between them on the Day of Resurrection concerning that wherein they used to differ.
SHAKIR: Surely your Lord will judge between them on the day of resurrection concerning that wherein they differ.
KHALIFA: Your Lord is the One who will judge them on the Day of Resurrection, regarding everything they disputed.
২৫। অবশ্যই তোমার প্রভু শেষ বিচারের দিনে, তারা [নিজেদের মধ্যে ] যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে সে বিষয়ে মীমাংসা করে দেবেন ৩৬৫৯।
৩৬৫৯। ইসরাঈলীদের নিজেদের মধ্যে যে তর্কবিতর্ক এবং ঝগড়াঝাটি বিদ্যমান তার ফয়সালা পৃথিবীতে সম্ভব নয়। তা চলতেই থাকবে, যতদিন না রোজকেয়ামত সংঘটিত হয়। ইতিমধ্যে পৃথিবীতে নূতন উম্মতের [ইসলাম] আভির্ভাব ঘটেছে যার আগমন বিশ্ব মানবতার শুভ সংবাদ। যারা বিশ্বকে একই ভাতৃবন্ধনে এই নূতন উম্মত আহ্বান করে।
আয়াতঃ 032.026
এতে কি তাদের চোখ খোলেনি যে, আমি তাদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাড়ী-ঘরে এরা বিচরণ করে। অবশ্যই এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তারা কি শোনে না?
Is it not a guidance for them, how many generations We have destroyed before them in whose dwellings they do walk about? Verily, therein indeed are signs. Would they not then listen?
أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ أَفَلَا يَسْمَعُونَ
Awa lam yahdi lahum kam ahlakna min qablihim mina alqurooni yamshoona fee masakinihim inna fee thalika laayatin afala yasmaAAoona
YUSUFALI: Does it not teach them a lesson, how many generations We destroyed before them, in whose dwellings they (now) go to and fro? Verily in that are Signs: Do they not then listen?
PICKTHAL: Is it not a guidance for them (to observe) how many generations We destroyed before them, amid whose dwelling places they do walk? Lo! therein verily are portents! Will they not then heed?
SHAKIR: Does it not point out to them the right way, how many of the generations, in whose abodes they go about, did We destroy before them? Most surely there are signs in this; will they not then hear?
KHALIFA: Does it ever occur to them how many generations we have annihilated before them? They now live and walk in their ancestors’ homes. This should provide sufficient proofs. Do they not hear?
২৬। আমি ইহাদের পূর্বে কত জাতিকে ধবংস করেছি, যাদের [ পরিত্যক্ত ] বাসভূমির মধ্য দিয়ে ওরা যাতায়াত করে, এ থেকেও কি তারা শিক্ষা নেয় না ? ৩৬৬০। অবশ্যই এর মাঝে রয়েছে [আল্লাহ্র ] নিদর্শনসমূহ। তবুও কি তারা শুনবে না ? ৩৬৬১
৩৬৬০। পৃথিবীতে যদি কোনও জাতি বিপথগামী হয়, তবে তাদের চৈতন্যদয় ঘটতে পারে অন্য ধবংসপ্রাপ্ত জাতির উদাহরণ দেখে। যুগে যুগে পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে পাপের পথ অবলম্বনের জন্য। পাপ ধ্বংসের পথ , পূণ্য সমৃদ্ধির পথ। প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত পৃথিবীতে এই সত্য বিদ্যমান। মোশরেক আরবদের মাঝে আদ ও সামুদ ইত্যাদি জাতির উদাহরণ থেকেও ইসরাঈলীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতো।
৩৬৬১। ‘শুনবে না ? ‘ – শোনা অর্থাৎ আল্লাহ্র সাবধান বাণী শোনা বা অনুধাবন করা। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে কি অপূর্ব স্বাভাবিকভাবে ইন্দ্রিয়গত ‘শোনা’ কে উপলব্ধি বা অনুধাবন ক্ষমতার সাথে সমন্বিত করা হয়েছে। উদাহরণ স্থাপন করা হয়েছে পৃথিবীর উত্থান পতনের ইতিহাসের সাথে। প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে পাপের পরিণতি অনুধাবনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে। জাগতিক বিষয় বস্তুকে আধ্যাত্মিক জগতের শিক্ষার সাথে সমন্বিত করা হয়েছে। এই আয়াতে শুনতে পারার মানসিক দক্ষতাকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে। পরর্বতী আয়াতে ‘দেখা’ বা ‘দেখতে পারা’ -মানসিক দক্ষতাকেও এভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আয়াতঃ 032.027
তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা কি দেখে না?
Have they not seen how We drive water (rain clouds) to the dry land without any vegetation, and therewith bring forth crops providing food for their cattle and themselves? Will they not then see?
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاء إِلَى الْأَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنفُسُهُمْ أَفَلَا يُبْصِرُونَ
Awa lam yaraw anna nasooqu almaa ila al-ardi aljuruzi fanukhriju bihi zarAAan ta-kulu minhu anAAamuhum waanfusuhum afala yubsiroona
YUSUFALI: And do they not see that We do drive rain to parched soil (bare of herbage), and produce therewith crops, providing food for their cattle and themselves? Have they not the vision?
PICKTHAL: Have they not seen how We lead the water to the barren land and therewith bring forth crops whereof their cattle eat, and they themselves? Will they not then see?
SHAKIR: Do they not see that We drive the water to a land having no herbage, then We bring forth thereby seed-produce of which their cattle and they themselves eat; will they not then see?
KHALIFA: Do they not realize that we drive the water to barren lands, and produce with it crops to feed their livestock, as well as themselves? Do they not see?
২৭। তারা কি লক্ষ্য করে না যে আমি বৃষ্টিকে তাড়িত করি শুষ্ক [ উদ্ভিদ শূন্য ] জমিতে ৩৬৬২, এবং তার ফলে শস্য উৎপন্ন করি, যা তাদের পশুদের এবং তাদের খাদ্য হয়? তাদের কি দূরদৃষ্টি নাই ? ৩৬৬৩
৩৬৬২। এই আয়াতেও পূর্বের আয়াতের মত জাগতিক বিষয় বস্তুকে আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তু অনুধাবনের উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কত সহজে এবং কত সুন্দরভাবে তা উত্থাপন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীন বায়ু ভূমিকে ঊষর এবং মরুভূমি সদৃশ্য করে তোলে। ফলে মাটিতে জীবনের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে মৃতের রূপ ধারণ করে। আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্বরূপ বৃষ্টিপাতের ফলে মরুসদৃশ্য ভূমি সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল ভূমিতে পরিণত হয়। এ সব উর্বর ভূমি তখন পশু এবং মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। ঠিক সেরূপ হচ্ছে মানুষের আধ্যাত্মিক ভূবনের অবস্থা। আধ্যাত্মিক দিক থেকে মৃত ব্যক্তি আল্লাহ্র করুণা লাভে আত্মিক ভাবে পুণঃর্জীবন লাভ করে। আর আল্লাহ্র করুণা লাভের প্রধান উপায় হচ্ছে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ অনুধাবনের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা। যদি সে তা পারে তবে সে ব্যক্তির উপমা হচ্ছে ঐ মরুভূমি সদৃশ্য শুষ্ক মাটির ন্যায় যা বৃষ্টি সঞ্জীবিত হয়ে সুজলা সুফলা রূপ ধারণ করে। সে ব্যক্তি তখন শুধু নিজের জন্যই সম্পদ নয়, সে তখন তার উপরে যারা নির্ভরশীল তাদের জন্যও এক বিরাট সম্পদরূপে পরিগণিত হবে। কারণ তাঁর চরিত্র মাধুর্য্য তাকে সাধারণ মানুষের উর্দ্ধে স্থাপন করবে।
৩৬৬৩। এই আয়াতটি [ ৩২ : ২৭ ] ইংরেজীতে অনুবাদের সময়ে প্রথমে শুরু করা হয়েছে “Do they not see ? [ A wa lam yarau ] ” বাক্যটি দ্বারা এবং শেষ করা হয়েছে “Have they not the vision ? [Afa La yubsirun ] “। বাংলা অনুবাদে উভয় স্থানে “লক্ষ্য করা ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু দেখা ও লক্ষ্য করার মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। দেখা শুধুমাত্র পার্থিব ইন্দ্রিয়গত ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু “লক্ষ্য করা ” চক্ষুর স্বাভাবিক ব্যবহারের বাইরেও মনোজগতে ঘটে থাকে। ‘Vision’ বা লক্ষ্য করা হচ্ছে স্বাভাবিক দৃষ্টির বাইরে অর্ন্তদৃষ্টি বা সচেতনতা। ইন্দ্রিয়গত জাগতিক দেখার মাধ্যমে ইন্দ্রিয় বর্হিভূত আধ্যাত্মিক জগতকে অনুধাবন করার ক্ষমতাকে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যেরূপ পূর্বের টিকা ৩৬৬১ এ বর্ণনা করা হয়েছে।
আয়াতঃ 032.028
তারা বলে তোমরা সত্যবাদী হলে বল; কবে হবে এই ফয়সালা?
They say: ”When will this AlFath (Decision) be (between us and you, i.e. the Day of Resurrection), if you are telling the truth?”
وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْفَتْحُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Wayaqooloona mata hatha alfathu in kuntum sadiqeena
YUSUFALI: They say: “When will this decision be, if ye are telling the truth?”
PICKTHAL: And they say: When cometh this victory (of yours) if ye are truthful?
SHAKIR: And they say: When will this judgment take place, If you are truthful?
KHALIFA: They challenge: “Where is that victory, if you are truthful?”
২৮। তারা বলে, : ” যদি তুমি সত্যি বলে থাক তবে কখন সে সিদ্ধান্ত হবে ? ” ৩৬৬৪
৩৬৬৪। অবিশ্বাসীরা জিজ্ঞাসা করে কখন সত্য মিথ্যার মধ্যে ফয়সালা করা হবে ? উত্তর হচ্ছে , ” যদি তোমরা মনে কর শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তোমরা অনুতাপ করা থেকে বিরত থাকবে এবং তখন তোমরা অনুতাপ করবে; তবে তা হবে মহা মূর্খের কাজ। কারণ শেষ বিচারের দিনের অনুতাপ গ্রহণযোগ্য হবে না। অনুতাপ করার জন্য তা অনেক দেরী হয়ে যাবে। সে সময়ে অনুতাপের জন্য কোনও সময় দেয়া হবে না। তোমাদের এখন সময় দেয়া হয়েছে এবং এ সুযোগ তোমরা গ্রহণ কর।”
আয়াতঃ 032.029
বলুন, ফয়সালার দিনে কাফেরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ ও দেয়া হবে না।
Say: ”On the Day of AlFath (Decision), no profit will it be to those who disbelieve if they (then) believe! Nor will they be granted a respite.”
قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنفَعُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِيمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ
Qul yawma alfathi la yanfaAAu allatheena kafaroo eemanuhum wala hum yuntharoona
YUSUFALI: Say: “On the Day of Decision, no profit will it be to Unbelievers if they (then) believe! nor will they be granted a respite.”
PICKTHAL: Say (unto them): On the day of the victory the faith of those who disbelieve (and who then will believe) will not avail them, neither will they be reprieved.
SHAKIR: Say: On the day of judgment the faith of those who (now) disbelieve will not profit them, nor will they be respited.
KHALIFA: Say, “The day such a victory comes, believing will not benefit those who did not believe before that, nor will they be given another chance.”
২৯। বল : ” [শেষ বিচারের ] সিদ্ধান্তের দিনে অবিশ্বাসীদের [ সে সময়ের ] ঈমান আনায়ন কোন উপকারেই আসবে না। তাদের কোন অবকাশও দেয়া হবে না।”
৩০। সুতারাং তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং অপেক্ষা কর; [ অবশ্য] তারাও অপেক্ষা করছে ৩৬৬৫।
৩৬৬৫। পড়ুন আয়াত [ ৬ : ১৫৮ ] এবং টিকা ৯৮৪ এই আয়াতের আলোচনা হিসেবে। সেখানে অবিশ্বাসীদের বলা হয়েছে : “Wait ye; we too are waiting” এই আয়াতে বিশ্বাসীদের সম্বোধন করা হয়েছে , “Wait [ then] they too are waiting.”এই আয়াতের ক্ষেত্রে সম্বোধন করা হয়েছে বিপরীত ভাবে। দেখুন আয়াত [ ৭ : ৭১ ]।
আয়াতঃ 032.030
অতএব আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন, তারাও অপেক্ষা করছে।
So turn aside from them (O Muhammad SAW) and await, verily they (too) are awaiting.
فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانتَظِرْ إِنَّهُم مُّنتَظِرُونَ
FaaAArid AAanhum waintathir innahum muntathiroona
YUSUFALI: So turn away from them, and wait: they too are waiting.
PICKTHAL: So withdraw from them (O Muhammad), and await (the event). Lo! they (also) are awaiting (it).
SHAKIR: Therefore turn away from them and wait, surely they too are waiting.
KHALIFA: Therefore, disregard them and wait, they too are waiting.
২৯। বল : ” [শেষ বিচারের ] সিদ্ধান্তের দিনে অবিশ্বাসীদের [ সে সময়ের ] ঈমান আনায়ন কোন উপকারেই আসবে না। তাদের কোন অবকাশও দেয়া হবে না।”
৩০। সুতারাং তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং অপেক্ষা কর; [ অবশ্য] তারাও অপেক্ষা করছে ৩৬৬৫।
৩৬৬৫। পড়ুন আয়াত [ ৬ : ১৫৮ ] এবং টিকা ৯৮৪ এই আয়াতের আলোচনা হিসেবে। সেখানে অবিশ্বাসীদের বলা হয়েছে : “Wait ye; we too are waiting” এই আয়াতে বিশ্বাসীদের সম্বোধন করা হয়েছে , “Wait [ then] they too are waiting.”এই আয়াতের ক্ষেত্রে সম্বোধন করা হয়েছে বিপরীত ভাবে। দেখুন আয়াত [ ৭ : ৭১ ]।