৬১। অন্ধের জন্য দোষ নাই, খোড়ার জন্য দোষ নাই, রুগীর জন্য দোষ নাই, ৩০৪২ তোমাদের নিজেদের জন্য দোষ নাই , আহার গ্রহণ করা তোমাদের গৃহে, অথবা তোমাদের বাবা-মা, ভাই-বোনদের ঘরে বা চাচা-ফুপুদের , মামাদের কিংবা খালাদের ঘরে অথবা সেই সব ঘরে যে সব ঘরের চাবি তোমাদের দখলে আছে অথবা তোমাদের বিশ্বস্ত বন্ধুর ঘরে। ইহাতেও কোন দোষ নাই যে, তোমরা একত্রে খাও কিংবা পৃথকভাবে একা আহার কর। কিণ্তু যখন তোমরা কোন গৃহে প্রবেশ করবে পরস্পরকে অভিবাদন করবে – সম্ভাষণ হবে আল্লাহ্র নিকট থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র ৩০৪৩। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দ্দেশ বিশদভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার ৩০৪৪।
৩০৪২। ইসলামের আবির্ভাবের সময়ে আরব সমাজে বহুধরণের কুসংস্কারের প্রচলন ছিলো। তার মাঝে একটি ছিলো এই যে , তারা মনে করতো যারা শারীরিক ভাবে ত্রুটিযুক্ত অথবা রুগ্ন তারা দেবতার অভিশাপ গ্রস্থ। সুতারাং তাদের সংস্রব থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। এ কারণেই তাদের সাথে তারা একত্রে আহার করতো না। আবার “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না ” [ ২ : ১৮৮ ]। এই আয়াতটি প্রাপ্তির পর সাহাবীগণ অন্যের এমনকি নিকট আত্নীয়ের গৃহেও খাদ্য গ্রহণ করা হতে বিরত থাকতে শুরু করেন। এ সবের প্রেক্ষিতেই এই আয়াতটি নাজেল করা হয়। ১) অন্ধ, খঞ্জ, বা রুগ্ন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে আমাদের এ ধারণা করা অন্যায় যে তারা স্বর্গীয় অভিশাপ গ্রস্থ এবং সে কারণেই তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা। বরং তাদের প্রতি আমাদের সর্বাত্মক সহানুভূতি থাকা প্রয়োজন। ২) নিকট আত্নীয় স্বজনের গৃহে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে এত অধিক সর্তকতা অবলম্বন না করলেও দোষ নাই। অনেকের ধারণা হয়েছিলো এক সাথে আহারে বসলে যৌথ খাদ্যদ্রব্য সকলের জন্য সমভাবে বন্টিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী থাকে। যৌথ খাদ্য দ্রব্য সকলের মাঝে সমভাবে বন্টিত হওয়া উচিত। এই আয়াতে এ ধরণের সুক্ষদর্শিতা ও লৌকিকতা থেকে তাদেরকে মুক্ত করা হয়। ৩) সায়ীদ ইবনে মুসাইয়ের বলেন, মুসলমানগণ জেহাদে যাওয়ার সময়ে নিজ নিজ গৃহের চাবি বিকলাঙ্গদের হাতে সোর্পদ করে যেতেন, এবং বলে যেতেন যে গৃহে যা কিছু আছে তা তোমরা পানাহার করতে পার। কিণ্তু তারা সাবধানতাবশতঃ তাদের গৃহ থেকে কিছুই খেত না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতের বক্তব্য। ৪) “তোমাদিগের বন্ধুদিগের গৃহে” এই বাক্যটি দ্বারা চেনা জানা বন্ধুস্থানীয় সকলকেই অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। শুধুমাত্র অকৃত্রিম ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুই নয়। ৫) কেউ যেনো নিজস্ব ধারণার বশবর্তী হয়ে সর্বদা পৃথকভাবে আহার গ্রহণ না করে অথবা সর্বদা একত্রে আহার গ্রহণ না করে। মানুষের প্রয়োজন ও পরিবেশ অনুযায়ী মানুষ তার নিজস্ব জীবনকে পরিচালিত করতে পারবে। এই আয়াতের বক্তব্যে এ কথাই অনুধাবন যোগ্য যে, কোনও অন্ধ আনুষ্ঠানিকতাকে আল্লাহ্ অনুমোদন করেন না। যা জীবনকে সুন্দর , সুস্থ ও মার্জিত করে, যা জীবনকে বিকশিত করে, যে জীবন ব্যবস্থা প্রতিটি মানুষের জীবনকে , সে অন্ধই হোক বা পঙ্গুই হোক, সম্মানের সাথে বাঁচার অঙ্গীকার করে তাই -ই ইসলাম অনুমোদন করে।
৩০৪৩। “Salam” শব্দটি আয়াত [ ১৯ : ৬২ ] এ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ টিকা ২৫১২তে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে সামাজিক জীবনে পরস্পরের প্রতি আতিথেয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্কের প্রতি কর্তব্য সম্বন্ধে। এবারে নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে এই সর্ম্পকে প্রাণবন্ত ও উৎসাহিত করার যে চেতনা ও তার উপায় সম্বন্ধে। বন্ধু ও আত্নীয় পরিজনদের আতিথেয়তার যে আনন্দ তা শুধুমাত্র আত্মতৃপ্তি বা জাগতিক বিষয়ের মাঝে আবদ্ধ না রেখে তা বৃহত্তর পরিসরে পরিব্যপ্ত করা হয়। আল্লাহ্র চোখে তা পবিত্র হোক কল্যাণময় হোক এই কামনা করে গৃহে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।
৩০৪৪। দেখুন টিকা ৩০৩৯ এবং ৩০৪১। গানের ধূয়াতে যেরূপ একটি বিশেষ পংক্তি বারে বারে গাওয়া হয়, এখানেও ঠিক সেরূপ কোরাণের আয়াতের সমাপ্তি করা হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে।
আয়াতঃ 024.062
মুমিন তো তারাই; যারা আল্লাহর ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং রসূলের সাথে কোন সমষ্টিগত কাজে শরীক হলে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত চলে যায় না। যারা আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। অতএব তারা আপনার কাছে তাদের কোন কাজের জন্যে অনুমতি চাইলে আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুমতি দিন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।
The true believers are only those, who believe in (the Oneness of) Allâh and His Messenger (Muhammad SAW), and when they are with him on some common matter, they go not away until they have asked his permission. Verily! Those who ask your permission, those are they who (really) believe in Allâh and His Messenger. So if they ask your permission for some affairs of theirs, give permission to whom you will of them, and ask Allâh for their forgiveness. Truly, Allâh is Oft-Forgiving, Most Merciful.