৭৮। এবং আল্লাহ্র রাস্তায় সংগ্রাম কর , যে ভাবে সংগ্রাম করা উচিত [আন্তরিক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে ] ২৮৬১। তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই ২৮৬২। ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ। পূর্বে এবং এই [ প্রত্যাদেশে ] এই উভয় ক্ষেত্রে তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন “মুসলিম ” [ সদা অনুগত ] ২৮৬৩; যেনো রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী হতে পারে ও তোমরা মানব সম্প্রদায়ের জন্য সাক্ষী হতে পার ২৮৬৪। অতএব, তোমরা নিয়মিত সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, এবং আল্লাহ্কে শক্ত করে ধরো; তিনি তোমাদের রক্ষাকর্তা এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকর্তা এবং সর্বোত্তম সাহায্যকারী।
২৮৬১। আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম বা জেহাদ সম্পর্কে পড়ুন টিকা ২০৪ ও আয়াত [ ২ : ১৯০ ] এবং টিকা ২০৫ ও আয়াত [ ২ : ১৯১]।
২৮৬২। ইসলাম কোনও নূতন ধর্ম নয়। হযরত ইব্রাহীমের প্রচারিত ধর্মই হচ্ছে ইসলাম এবং আল্লাহ্ ইসলাম অনুসারীদের “মুসলমান” নামে সম্বোধন করেছেন। সুতারাং ইসলাম ও মুসলিম কোনও নূতন শব্দ নয় বা নূতন মিল্লাত বা সম্প্রদায় নয়। কিন্তু পরবর্তীতে কঠোর হৃদয় ইহুদীদের জন্য ধর্মীয় রীতিনীতি কঠোর করা হয়। ফলে ইহুদীরা সাম্প্রদায়িকতায় পর্যবসিত হয়। অপর পক্ষে খৃষ্টান ধর্ম সাধারণ মানুষের ধর্ম নয়। যারা শুধুমাত্র সাধু ও সন্ন্যাসী যারা জাগতিক বিষয়বস্তু ত্যাগ করতে পারবে তারাই প্রকৃত খৃষ্টধর্মে দীক্ষা নিতে পারে। তাদের ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি থেকেই এ কথার সত্যতা মেলে,”Sell Whatsoever thou hast” [ Mark X : 21 ]; “Take no thought for the morrow” [ Matt vi 34 ] . এই উদ্ধৃতিগুলিই প্রমাণ করে যে সাধারণ মানুষ যারা স্ত্রীপুত্র পরিজন নিয়ে ঘোর সংসারী তাদের পক্ষে এই ধর্মকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। অপর পক্ষে ইসলামের বিধি বিধান সাধারণ মানুষের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের পথকে স্বাভাবিক ও উম্মুক্ত করে দেয়। ইসলামের মূল বিষয়গুলির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে মানুষের যা স্বাভাবিক প্রবণতা তা ইসলামে অস্বীকার করা হয় নাই। তবে মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাকে আল্লাহ্র বিধান বা নির্দ্দেশ অনুযায়ী পরিচালনার হুকুম করা হয়েছে। মানুষের সকল মানসিক দক্ষতা ও প্রবণতাকে আল্লাহ্র বিধানের মাঝে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ্ প্রদত্ত স্বাভাবিক প্রবণতাকে ত্যাগ করে বা অবদমিত করে মানুষের পক্ষে পৃথিবীর দীর্ঘ পথকে অতিক্রম করা সম্ভব হতো না। ফলে মানুষের সভ্যতার অগ্রযাত্রা হতো ব্যহত। ইসলাম হচ্ছে বিশ্ব জনীন ধর্ম। ইসলামের পৃথিবীতে আগমন হযরত আদমের ধরাধামে আগমনের সাথে সাথে ঘটে। এই আয়াতে পিতা ইব্রাহীমের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই জন্য যে পূর্ববর্তী উম্মত সমূহ যাদের মাঝে প্রথম ইসলাম প্রচার করা হয় [ ইহুদী , খৃষ্টান এবং আরব ] তিনি ছিলেন তাদের আদি পিতা।
২৮৬৩। ” পূর্বে” অর্থাৎ আগের যুগে। দেখুন হযরত ইব্রাহীমের প্রার্থনা আয়াত [ ২: ১২৮]। ” এই প্রত্যাদেশে” অর্থাৎ এই আয়াত এবং কোরাণের বিভিন্ন স্থানে।
২৮৬৪। দেখুন আয়াত [ ২ : ১৪৩ ] ও টিকা ১৩ এবং ১৪৪। রাসুল (সা) যেরূপ মূসলমানদের পথ প্রদর্শক এবং উদাহরণ। ঠিক সেরূপ প্রকৃত মুসলিম সম্প্রদায় সারা বিশ্বের জন্য হবে অনুকরণীয় এবং উদাহরণ। কারণ সত্যকে তাদের চরিত্রে ধারণ করার ফলে তারা হবে আল্লাহ্র বিধানসমূহ বা সত্যের জ্বলন্ত উদাহরণ। যারা হবে সারা বিশ্বের জন্য ন্যায় ও সত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মন্তব্য : বর্তমান বিশ্বে যারা নিজেদের মুসলিম উম্মত রূপ পরিচয় দান করে তারা শুধু মাত্র নাম সর্বস্ব মুসলমান। ন্যায় ও সত্যের পথকে তারা জীবন থেকে বিসর্জন দিয়েছে। ফলে বিশ্ব সভায় মুসলমানদের আজ এত দুর্ভোগ এত অসম্মান। সম্পদ ও সুযোগ থাকা সত্বেও তারা তার সদ্ব্যবহার করতে অপারগ।