০৫। হে মানবকূল ! পুণরুত্থান সম্বন্ধে তোমাদের যদি সন্দেহের অবকাশ থাকে তবে গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখ, ২৭৭৩ আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি ধূলো কণা থেকে , তারপরে শুক্র থেকে , তারপরে ঝুলন্ত রক্তপিন্ড থেকে , তারপর পূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট অথবা অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশ্তপিন্ড থেকে ২৭৭৪ যেনো আমি আমার [ক্ষমতা ] তোমাদের নিকট প্রকাশ করতে পারি। এবং আমি যাকে ইচ্ছা তাকে মাতৃগর্ভে নির্দ্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত রাখি ২৭৭৫, তারপর আমি তোমাদের শিশুরূপে বের করে আনি , তারপর [ লালন পালন করি ] যেনো তোমরা পরিণত বয়সে উপণীত হও। তোমাদের মধ্য কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয়, আবার কাউকে কাউকে নিয়ে যাওয়া হয় অতিদুর্বল বৃদ্ধ বয়েসে, যেনো [ অনেক কিছু ] জানার পরে তারা আর সজ্ঞানে থাকে না ২৭৭৬। এবং [ আরও ] দেখ, যে ভূমি নিষ্ফলা ও নির্জিব থাকে, কিন্তু যখন আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তা তখন [ জীবন স্পন্দনে ] জেগে ওঠে, তা ষ্ফীত হয় এবং উৎপন্ন করে [ জোড়ায় জোড়ায় ] সুন্দর সুন্দর উদ্ভিদ সমূহ ২৭৭৭।
২৭৭৩। এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টি রহস্যের বর্ণনা আছে যা অনেক তফসীরকার তফসীরের প্রধান বক্তব্য হিসেবে উত্থাপন করেছেন। এই বর্ণনা হচ্ছে বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। আমরা এখানে আল্লাহ্র বক্তব্যের মর্মার্থ উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। সন্দেহ বাতিকেরা যদি পুণরুত্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে, তবে স্রষ্টা এই আয়াতে পৃথিবীর অতি সাধারণ কয়েকটি ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যা আমরা প্রতি নিয়ত আমাদের চারিদিকে দেখতে পাই। মানুষ কি নিজের জন্ম রহস্যের দিকে দৃষ্টিপাত করে না ? প্রাণহীন মাটি থেকে অর্থাৎ বিভিন্ন মৌলিক উপাদান , যা প্রাণহীন , থেকে শুরু , তারপর বীজ বা শুক্র, তারপর নিষিক্ত ডিম্ব, তারপরে ভ্রুণ এভাবেই পূর্ণাঙ্গ মানব শিশু। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এর পরে পৃথিবীর জীবনের পরিক্রমায় শৈশব, কৈশর, যৌবন অতিক্রম করে একদিন বার্দ্ধক্যে উপণীত হয় এবং শেষ পরিণতি ঘটে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। যিনি পৃথিবীতে এক জীবনের এতগুলি পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হন , তবে মানুষ কিভাবে অবিশ্বাস করে যে, সেই মহান স্রষ্টা পৃথিবীর এই জীবন শেষে পরলোকে অন্য জীবনের শুরু করতে অক্ষম ? বিবর্তনের ধারাতে পৃথিবী ও মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, যিনি তা পারেন তিনি অবশ্যই মৃত্যুর পরে পুণরুত্থানে সক্ষম। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য আর এক সত্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে আমাদের চারিদিকে দৃষ্টিপাত করতে। উষর মরুভূমি, যেখানে তৃণলতার চিহ্নমাত্র নাই যদি সেখানে আল্লাহ্র করুণারূপ বৃষ্টি নিয়মিত হয়, তবে অতি অল্পদিনেই মরুভূমি শস্যশ্যামল ভূমিতে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। মৃত জমি জীবন্তরূপ ধারণ করে। যে স্রষ্টা মৃত জমিকে এক সমারোহপূর্ণ প্রদর্শনীতে পরিণত করতে পারেন , তিনি অবশ্যই মৃত্যুর পরে নূতন অন্য পৃথিবী সৃষ্টিতে সক্ষম।
২৭৭৪। মানুষের সৃষ্টির বর্ণনায় প্রাণহীন পদার্থ [ এমিনো এসিড ] থেকে শুরু করে তার পূর্ণ জীবন চক্রের বর্ণনা করা হয়েছে। এই বর্ণনার নির্ভুলতা, সৌন্দর্য, খুঁটিনাটি যে ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা বিজ্ঞানের বিষয় বস্তু। যারা প্রাণীবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত আশা করা যায় চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে নাজেল হওয়া কোর-আনে তারা বর্তমান বিজ্ঞানের যোগসূত্র খুঁজে পাবেন। মানুষের মাতৃগর্ভে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে আত্মিক পরিবর্তনের কথাটিও চিন্তা করতে হবে। মহান শিল্পী আল্লাহ্ এ ভাবেই আত্মার বাহন শরীরের পূর্ণতার মাধ্যমে আত্মাকে করেন সমৃদ্ধ, পরিপূর্ণ ও বিকশিত।
২৭৭৫। “আমি যাকে ইচ্ছা করি ” অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে সন্তান, সুন্দর বা কুৎসিত , ফর্সা বা কালো, বুদ্ধিমান বা সাধারণ, ভালো বা মন্দ ইত্যাদি শিশু। মানব শিশু অনন্ত সম্ভাবনাময়। জীবনের বিভিন্ন দিকে তাঁর বিকাশ লাভের সম্ভাবনা আল্লাহ্ তার চরিত্রের মাঝে ডি, এন , এ’র মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট করে দেন। তিনি নির্দ্দিষ্ট করে দেন বংশগতিধারা – এ সকলেই মহান আল্লাহ্র ইচ্ছা।
২৭৭৬। দেখুন [ ১৬ : ৭০ ]। এই আয়াতে জীবনের রহস্যের মাধ্যমে আল্লাহ্র করুণা ও অনুগ্রহকে তুলে ধরা হয়েছে। এই আয়াতে মানুষের জীবন মৃত্যুর রহস্যকে তুলে ধরার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা পরকালের জীবনের প্রতি , যে জীবন সৃষ্টি আল্লাহ্র ক্ষমতারই স্বাক্ষর ও প্রতিজ্ঞা। এখানে উপমা ব্যবহার করা হয়েছে মানুষের জীবনচক্রের।
জীবন শক্তিতে পরিপূর্ণ শিশু যৌবনে, শৈর্যে বীর্যে, জ্ঞানে গরিমায়, উদ্দীপ্ত হয়, আবার সেই মানুষই বার্দ্ধক্যে সকল ক্ষমতা ও জ্ঞানশুন্য হয়ে শিশুর মত হয়ে যায়। ” যেনো অনেক কিছু জানার পরে তারা আর স্বজ্ঞানে থাকে না।” মানুষের জীবন চক্র সেতো স্রষ্টারই ক্ষমতার প্রকাশ মাত্র।
২৭৭৭। এই আয়াতটি ভাষা ও উপমা ও বর্ণনার মাধুর্যে এক অপূর্ব ও অমূল্য নীতিগর্ভমূলক উপদেশ। সামান্য কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে যে সত্যকে প্রকাশ করা হয়েছে তার যাদুকর প্রভাব যে কোন আল্লাহ্ প্রেমিকের মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করতে সক্ষম।