সামনে হাত বাড়িয়ে, অন্ধের মত হোঁচট খেতে খেতে এগোল শুভ। এদিকটাতে অন্ধকার। কিছু ঠাহর করা মুশকিল। হঠাৎ ডান হাতে শক্ত, ঠাণ্ডা কি যেন ঠেকল। বাম হাতটাও বাড়িয়ে দিল শুভ। দুহাতে ধরল এবার ঠাণ্ডা, শক্ত জিনিসটাকে। বার্চের ডাল হবে হয়তো। মনে মনে বলল শুভ। তারপর হ্যাঁচকা টান দিল। বিকট শব্দে ভেঙে জিনিসটা চলে এল শুভর হাতে। হঠাৎ কেন জানি খুব ভয় লেগে উঠল শুভর। শক্ত ডালটা বগলে চেপে ঘুরে দাঁড়াল ও। ছুটতে শুরু করল।
কোনদিকে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না শুভ। ও এখন মনেপ্রাণে গোরস্তান থেকে বেরিয়ে পড়তে চাইছে। সেই চাপা গোঙানির আওয়াজ ক্রমে বেড়ে চলেছে, সেই সাথে খসখসে শব্দটাও। ওটা যেন পিছু নিয়েছে ওর। অশুভ আশঙ্কায় বুক ধড়ফড় করে শুভর। অন্ধের মত ছুটছে ও। বার দুই ডিগবাজি খেয়ে পড়ল। কিন্তু বগলের নিচে চেপে রাখা বার্চের ডাল ছাড়ল না কিছুতেই। বন্ধুদেরকে দেখাতে হবে সে চ্যালেঞ্জ জিতেছে।
হঠাত্র গির্জার প্রকাণ্ড কাঠামোটা চোখের সামনে ফুটে উঠল। ওই তো লোহার বেড়া দেখা যাচ্ছে। বেড়া পার হতে পারলে আর কে পায় শুভকে। পিছিয়ে আসতে শুরু করল ও, এক দৌড়ে বেড়া পার হবে।
হঠাৎ কে যেন পেছনে থেকে খামচে ধরল জ্যাকেট। চিৎকার করে উঠল শুভ। জ্যাকেট ধরে ঝাড়া দিল। তারপর তাড়া খাওয়া খরগোশের মত ছুটল বেড়া লক্ষ্য। করে। এক লাফে বেড়ার ওপাশে।
বাড়ি না পৌঁছা পর্যন্ত দৌড় থামল না শুভর। এক ধাক্কায় দরজা খুলল ও, ছুটল চিলেকোঠার ঘরের দিকে। বার্চের ডালটা যথারীতি চেপে ধরে আছে বগলের নিচে।
বন্ধুরা অপেক্ষা করছিল ওর জন্যে চিলেকোঠার ঘরে। আমি পেরেছি, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল শুভ। এই দ্যাখ তোদের বাজির জিনিস নিয়ে এসেছি। বার্চের ডালটা মাথার ওপর উঁচু করে ধরল ও।
হঠাৎ চুপ হয়ে গেল সবাই। মন্টু, রুবেন বা দীপ কেউ কোন কথা বলছে না। ভয়ে রক্ত সরে গেছে সবার মুখ থেকে, বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছে শুভর মাথার দিকে। ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে শুভও তাকাল সেদিকে। এবং জমে গেল ভয়ে।
শুভ দেখল সে বার্চের ডাল মনে করে যে জিনিসিটা নিয়ে এসেছে সেটা ডাল নয়… সে উঁচু করে ধরে আছে কংকালের একটা হাত… শুকনো, খটখটে হাড়ের আঙুলগুলো শুভর মাথার ওপর মৃদু হাওয়ায় দুলছে, যেন ওকে খামচে দেবে।