সুইচ টিপে বাতি জ্বালল নিতু। ওর সাড়া পেয়ে একটা ইঁদুর ফ্রিজের নিচে লুকিয়ে পড়ল। মাগো, কত্তবড় ইঁদুর! গায়ে কাঁটা দিল নিতুর। একটানে ফ্রিজের দরজা খুলল। ওপরের শেলফে একটা বোতল বোঝাই কালো রঙের জুস। দুধের বোতল খুলল নিতু। নেই। শেষে জুসের বোতল নিয়েই ছুটল সিঁড়ির দিকে। সিঁড়ি বাইছে নিতু, কলজে যেন গলায় এসে ঠেকেছে।
নিকোলাসের ঘরে ঢুকল নিতু। দোলনা ধরে দাঁড়িয়ে আছে বাচ্চা। মুখ হাঁ করে কাঁদছে। নিতুকে দেখে থেমে গেল কান্না। হাত বাড়াল বোতলের দিকে। বোতলটা ওর হাতে দিল নিতু। দেখল বোতল মুখে পুরে চুক চুক করে জুস খাচ্ছে নিকোলাস। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল নিতু। যাক, বাচ্চা ঠিকই আছে। স্রেফ খিদেয় কান্নাকাটি করছিল। ঘরে জিরো ওয়াটের লাল রঙের ডিম বাতি ছাড়া কিছুই জ্বলছে না। নিতু সুইচ খুঁজল অন্য বাতিগুলো জ্বেলে দেয়ার জন্য। আশ্চর্য! ডিম বাতি আর এয়ার কুলারের সুইচ ছাড়া আর কোনও সুইচ নেই ঘরে। এয়ারকুলার বন্ধ। তাই ভাপসা গরম লাগছে। এসি ছাড়ল নিতু। চলল না এয়ার কুলার। নষ্ট নাকি? নিতু জানালার দিকে এগিয়ে গেল। মনে পড়ে গেল মিসেস বারলফের সতর্কবাণী। তিনি জানালা খুলতে নিষেধ করেছেন। হয়তো বিদ্যুতের আলোয় ভয় পেয়ে জেগে যেতে পারে নিকোলাস, এ আশঙ্কায়। এখন তো জেগেই আছে বাচ্চা। জানালার পর্দা টেনে সরাল নিতু।
থেমে গেছে বৃষ্টি। আকাশের কালো মেঘ কেটে ভেসে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ। রূপোলি আলোর বন্যায় ভাসিয়ে দিল নিকোলাসের দোলনা। সে মুখে বোতল রেখে চোখ বড়বড় করে তাকাল চাঁদের দিকে।
জানালা খুলতে যাচ্ছে নিতু, থমকে গেল অদ্ভুত একটা শব্দ শুনে। বাচ্চার মাথার পেছনের জানালায় থ্যাচ করে একটা শব্দ হয়েছে। এগিয়ে গেল নিতু। কাঁচের গায়ে সেঁটে আছে একটা বাদুড়, তাকিয়ে রয়েছে বাচ্চার দিকে। ঘেন্নায় মুখ বাঁকাল নিতু, পিছিয়ে গেল এক কদম। আরেকটা বাদুড় এসে নামল জানালায়। নিকোলাস হাঁ করে তাকিয়ে আছে বিকট প্রাণীগুলোর দিকে। হঠাৎ হাত থেকে বোতলটা ছুঁড়ে ফেলে দিল সে মেঝেতে। ঝুঁকে গেল জানালার দিকে। মেঝে থেকে বোতলটা তুলে নিল নিতু। ঘন কয়েক ফোঁটা রস পড়েছে মেঝেতে। কালচে রক্তের মত দেখাচ্ছে। গা টা কেমন রি রি করে উঠল।
ঠিক তখন নিতুর দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাল নিকোলাস, লম্বা, একটানা সুরে কাঁদতে লাগল। ঊ্যা আত্ম-টা আ আ! হাত বাড়িয়ে দিল। কোলে নিতে বলছে। নিকোলাসের কান্নাটা ঠিক যেন মানুষের বাচ্চার মত নয়, প্রলম্বিত ভৌতিক একটা সুর। গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেল নিতুর। ওকে কোলে নেবে কি নেবে না দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে, চিৎকারের মাত্রা বেড়েই চলল বাচ্চার। শেষে বাধ্য হয়েই ওকে কোলে নিল নিতু। সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল কান্না। নিতুর ঘাড় জড়িয়ে ধরল নিকোলাস।
নিতুর পেছনে আবার থ্যাচ করে শব্দ হলো। বুঝতে পারল আরেকটা বাদুড় এসে বসেছে জানালায়। ওদের দিকে তাকিয়ে আছে নিকোলাস, চাঁদের আলোয় চকচকে করছে চোখ। ওকে কাঁধে তুলে নিল নিতু। আদর করে চাপড় দিতে লাগল পিঠে। ওর মাথাটা ঘাড়ের পাশে এলিয়ে দিল। ঘুম পাড়াবার চেষ্টা করছে। নিতু টের পেল নিকোলাসের শরীর হঠাৎ শক্ত হয়ে উঠেছে। অদ্ভুত হিস শব্দ বেরিয়ে এল মুখ থেকে। যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারল নিতু, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। চারটে ছোট দাঁত কামড়ে ধরল নিতুর ঘাড়, এক টানে ছিঁড়ে ফেলল জুগুলার ভেইন।