পাথরখণ্ড থেকে লাফিয়ে পানিতে নেমে পড়ল ও, ফিরে এল তীরে। তারপর এক ছুটে বাড়িতে। মা! বাবা! আমি বিরাট একটা কুকুর দেখেছি-জার্মান শেফার্ড-সাগরে সাঁতার কাটছিল। তারপর হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেল পানির নিচে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু ওটাকে আর ভেসে উঠতে দেখলাম না। কুকুরটা ডুবেই গেল কি না! খোঁজ নিয়ে দেখব একবার?
দেখো। বললেন ওর বাবা। তবে জেট স্কি ব্যবহার কোরো।
কিছুক্ষণ পরে র্যাচেলের সঙ্গে বাবাও বেরিয়ে পড়লাম। যেখানে কুকুরটাকে শেষ মুহূর্তে দেখা গেছে, সে জায়গায় খোঁজাখুঁজি চালালেন। কিন্তু কোনো চিহ্ন নেই জার্মান শেফার্ডের। তীরে ফিরে এলেন ওরা। র্যাচেল অবাক হয়ে ভাবতে লাগল কুকুর সাগরে সাঁতার কাটতে যাবে কেন?
.
সেদিন সন্ধ্যায় দ্বীপের ওধারের শহুরেবাসীরা তাদের গ্রামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি বীচ পার্টির আয়োজন করল। খোলা আকাশের নিচে তৈরি করা হলো উনুন, আগুনে ঝলসাতে লাগল শামুক আর মাছের কাবাব। একটি ব্যাণ্ড দল বাজাচ্ছে রেগে সঙ্গীত, আর সব বয়সের মানুষ বাজনার তালে তালে নাচছে।
ওই পার্টিতে চেলসির সাথে পরিচয় হলো র্যাচেলের। এক বাহামিয়ান মহিলা র্যাচেলের কালো চুলে চমৎকার বিনুনি করে দিয়েছিল। ওটা দেখে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেল চেলসি।
তোমার চুলের বিনুনি খুব সুন্দর হয়েছে, চেলসি বলল র্যাচেলকে। বিশেষ করে রঙিন পুঁতির কারণে আরো বেশি ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ, বলল র্যাচেল। বাহামায় আজকেই আমার শেষ রাত। তাই অন্যরকম একটু সাজলাম আর কি। এরপর মেয়ে দুটি গল্পে মেতে উঠল। কে কিভাবে ছুটি কাটিয়েছে, কী রকম মজা করেছে এসব আর কি।
চেলসি তার নতুন বন্ধুর কাছে গল্প করছে দ্বীপের কোন্ কোন্ জায়গায় সে ঘুরেছে, র্যাচেলের চোখ আটকে গেল একটা জার্মান শেফার্ডের ওপর-তামাটে রঙের, গায়ে বেগুনি দাগ-ভিড়ের মাঝখানে দ্রুত পায়ে হাঁটছে।
সাগরে যে কুকুরটাকে আজ দেখেছি ওটা কি সেটা? ভাবছে র্যাচেল। চেহারা তো সেরকমই মনে হচ্ছে। যাক, ওটা সুস্থ আছে জেনে ভালো লাগছে। যাই, ভালো করে দেখে আসি কুকুরটার কী অবস্থা।
একটু উঠব, চেলসি, বলল র্যাচেল, ওই কুকুরটাকে দেখে আসি।
র্যাচেলের চোখ অনুসরণ করে চেলসিও দেখতে পেল জার্মান শেফার্ডকে। আরে ওই তো সে-ই! সেই কুকুরটা!
কুকুরটাকে দেখেছ আগে?
হ্যাঁ। সে এক লম্বা গল্প। আজ সকালে ও-ই আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে। চলো তো যাই।
ছুটল ওরা। কুকুরটার পিছু নিল। ওটা একটা গলিতে বাঁক নিল। দাঁড়াল ঝকঝকে সবুজ রঙের একটা বাড়ির সামনে। বাড়িটির জানালাগুলো নীল। কুকুরটা এক লাফে সামনের বারান্দায় উঠল, শুয়ে পড়ল ওখানে।
সাবধানে কুকুরটার দিকে পা বাড়াল ওরা। লেজ নাড়ছে কুকুর। ওরা হাত বুলিয়ে দিল গায়ে। কিছু বলল না জার্মান শেফার্ড। চুপচাপ আদর খেতে লাগল। এটাই সেই কুকুর কি না ঠিক বুঝতে পারছি না, বলল চেলসি।
মানে?
চেলসি তখন গল্পটা খুলে বলল র্যাচেলকে। জানাল কীভাবে সেইল বোট থেকে পড়ে গিয়েছিল ও। ডুবে মারা যাচ্ছিল, একটা জার্মান শেফার্ড কুকুর ওকে জামা ধরে টেনে তীরে পৌঁছে দেয়। তারপর অদৃশ্য হয়ে যায় ওটা।
আশ্চর্য তো! চেঁচিয়ে উঠল র্যাচেল। আমি ওই একই রকম তামাটে বর্ণের, গায়ে বাদামী ফুটকিঅলা একটা কুকুরকে দেখেছি। সাগরে সাঁতার কাটছিল। তারপর ঘেউ ঘেউ করতে করতে ওটা পানির নিচে চলে যায়। আর দেখিনি ওটাকে। জার্মান শেফার্ডকে ভালো করে দেখল র্যাচেল। তবে এটা সেই কুকুরটা নাও হতে পারে। এটাকে ওটার চেয়ে আকারে ছোট লাগছে দেখতে। আর গায়ের রঙও বেশি গাঢ়।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে লাফিয়ে উঠল দুই কিশোরী। লাফ মেরে সিধে হলো কুকুর, শুরু করে দিল ঘেউ ঘেউ। বিশাল শরীরের এক বাহামিয়ান মহিলা, মাথায় গোলাপ রঙের স্ট্র হ্যাট এবং একই রঙা ফুলতোলা কাপড় পরা, পা রাখল বারান্দায়।
হ্যালো, মেয়েরা, কুকুরটার দিকে ফিরল মহিলা, মিস মলি, তুমি কি এই সুন্দর মেয়েদুটিকে এখানে নিয়ে এসেছ?
একরকম তাই, বলল চেলসি ওর পিছু নিয়ে এসেছি আমরা। আজ সকালে পানিতে ডুবে মরার হাত থেকে একটা কুকুর প্রাণ বাঁচিয়েছে আমার। অনেকটা এটার মতো দেখতে।
র্যাচেল বলল, সকাল বেলায় সাগরে সাঁতার কাটার সময় আমিও এরকম একটা কুকুর দেখতে পাই। হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায় সে। ভেবেছিলাম ডুবে গেছে। আপনার কুকুরটাকেই বোধহয় দেখেছিলাম।
আচ্ছা! অবাক বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে গেল মহিলার চোখ। ভারী অদ্ভুত তো! বারান্দায় বসতে বলল সে ওদেরকে। তোমাদের রহস্যের একটা সমাধান হয়তো দিতে পারব। তবে বিশ্বাস করা না করা তোমাদের ইচ্ছে।
কাঠের রকিং চেয়ারে বসল মহিলা। তার প্রকাণ্ড শরীরের ওজনে কাঁচক্যাচ করে আর্তনাদ ছাড়ল চেয়ার। আগে পরিচয় পর্বটা সেরে নিই। আমি জ্যানেল। তোমরা?
চেলসি ইমারসন।
র্যাচেল কাৎজ।
তাহলে, চেলসি, আজ সকালে তোমাকে একটা জার্মান শেফার্ড প্রাণ বাঁচিয়েছে আর র্যাচেল তুমি একই কুকুরকে দেখেছ সাগরে সাঁতার কাটতে? চেয়ারে দুলতে দুলতে প্রশ্ন করল মহিলা। তারপর আপন মনে বলল, সেদিন হয়তো এসে হাজির হয়েছে। হ্যাঁ, এতদিন পরে অবশেষে মুক্তি ঘটতে পারে তার।
আপনি কী বলছেন? জিজ্ঞেস করল র্যাচেল।