লাফ মেরে নিজেদের ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বসলেন কেন ও অ্যালেন, দ্রুত বৈঠা মেরে এগোলেন তীরের দিকে। ভীত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন তাঁরা, তীরে পৌঁছেই।
চেলসি, কী হয়েছে? জিজ্ঞেস করলেন বাবা। তুমি ঠিক আছ তো?
কেঁদে ফেলল চেলসি। আমি ইয়ট থেকে ডিগবাজি খেয়ে পড়ে যাই … ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে চলল ও।…ডুবে যাচ্ছিলাম… মনে হচ্ছিল মরে যাব… এমন সময় বিশালদেহী একটা কুকুর এসে আমাকে উদ্ধার করে। বলে হুহু করে কাঁদতে লাগল ও। অনেকক্ষণ কান্নার পরে বুকটা হালকা হলো চেলসির, কিভাবে রক্ষা পেয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিল।
ঘটনাটা অদ্ভুত, সোনা, বললেন অ্যালেন। চেলসি লক্ষ্য করল বাবা-মা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন। বোঝাই যায় চেলসির গল্প বিশ্বাস করেন নি তারা।
আমার কথা বিশ্বাস হয়নি তোমাদের, না? জিজ্ঞেস করল চেলসি।
তুমি সুস্থ আছ সেটাই যথেষ্ট, বললেন কেন।
কুকুরটাকে দেখেছ তোমরা? জানতে চাইল ছোট্ট মেয়েটি। ওর ডাক শুনেছ?
না সোনা, শুনিনি, জবাব দিলেন অ্যালেন।
ওটা বড় একটা জার্মান শেফার্ড, বলল চেলসি। কালো, গায়ে গাঢ় বাদামী দাগ। কই যে গেল কুকুরটা!
বোটে চলল, বললেন মা।
সেদিন দুপুরে চেলসি নিচের ডেকে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে, শুনল বাবা-মা ওর সাগরে পড়ে যাবার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
আসলে কী ঘটেছিল বলে তোমার মনে হয়, কেন?
কোনো কুকুর যে ওকে উদ্ধার করেনি তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই, বললেন কেন। এদিকের উপকূলে অন্য কোনো বোট চোখে পড়েনি আমার। সাগর তীর খা খা করছে। যদিও দ্বীপের ওদিকটাতে একটা গ্রাম আছে। কিন্তু বালুতে আমি কোনো কুকুরের পায়ের ছাপ দেখতে পাইনি।
ঢেউয়ের কারণে পায়ের ছাপ মুছে যেতে পারে।
যদি সত্যি কুকুরটা পানির ধারে গিয়ে থাকে, তাহলে। সাগর সৈকত খুবই দীর্ঘ এবং খালি। কুকুরটাকে আমাদের চোখে পড়া উচিত ছিল-যদি না ওটা পানিতে সাঁতরে যায়। আর কোনো কুকুরই অমন কাজ করবে না।
কুকুরই যদি না ছিল তাহলে চেলসিকে রক্ষা করল কে?
আমার ধারণা চেলসি আতঙ্কিত হয়ে কুকুরের কথা ভেবেছে। ভেবেছে একটা কুকুর তাকে উদ্ধার করেছে। আসলে সে নিজের চেষ্টায় তীরে এসে পৌঁছেছে।
আর সহ্য হলো না চেলসির। সে দৌড়ে উঠে এল ওপরের ডেকে। গলা ফাটিয়ে বলল, তোমরা কে কী ভাবছ তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি জানি আসলে কী ঘটেছে। একটা জার্মান শেফার্ড রক্ষা করেছে আমার জীবন!
.
প্রায় আধা মাইল দূরে, ওয়াকার্স বের অপর প্রান্তে, ১২ বছরের র্যাচেল কাজ সাঁতার কাটার জন্যে বেরিয়ে পড়ল ওদের ভাড়া করা বীচ হাউজ থেকে। ওর পায়ে ফ্লিপার মাস্ক আর স্মরকেল। ছুটি শেষ হবার আর মাত্র একদিন বাকি। তারপর ওরা ফিরে যাবে নিজেদের বাড়িতে। র্যাচেল ছুটির শেষ সময়টুকু যতটা সম্ভব সাগরে সাঁতার কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নাস্তা খেতে ব্যস্ত, র্যাচেল নেমে পড়ল সাগরে। ও খুব ভালো সাঁতার জানে। তীর থেকে পঁচাত্তর গজের মতো দূরে, একটা কোরাল রীফের দিকে এগিয়ে চলল ও। উপুড় হয়ে সাঁতার কাটছে র্যাচেল। চোখে পড়ল একটা ষ্টার ফিশ। ছয় ইঞ্চি লম্বা বাহু দিয়ে একটা চিংড়ি মাছ ধরে আছে ওটা। ষ্টার ফিশটাকে ভালো করে দেখার জন্যে গভীর দম নিয়ে পানির নিচে ডুব দিল র্যাচেল। ষ্টার ফিশের কাছে এসেছে, একটা ছায়া দেখতে পেল ও সাগর তলে। আতঁকে উঠল র্যাচেল। মাই গড! ওটা নির্ঘাৎ হাঙর। কিন্তু পরক্ষণে ভুল ভেঙে গেল ওর। ভালো করে তাকাতে দেখল হাঙর নয়, ওটা একটা কুকুর।
পানির ওপরে উঠে এল র্যাচেল, খুলে ফেলল মাস্ক। দেখল ওর কাছ থেকে ত্রিশ গজ দূরে তামাটে রঙের, গায়ে গাঢ় বাদামী ফুটকিঅলা একটা জার্মান শেফার্ড দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটছে।
কুকুরটার পিছু পিছু সাঁতরাতে শুরু করল র্যাচেল। মনে পড়ে গেল বাবা-মাকে কথা দিয়েছে রীফ ছেড়ে অন্য কোথাও যাবে না ও। তাই পানিতে মাথা তুলে থাকা একখণ্ড পাথরের ওপরে উঠে বসল র্যাচেল।
কুকুরটা যাচ্ছে কোথায়? অবাক হয়ে ভাবল ও। উজ্জ্বল সূর্যালোকে চোখ ঝলসে যায়। র্যাচেল কপালের ওপর হাত রেখে ভুরু কুঁচকে তাকাল দিগন্তরেখার দিকে। আর কোনো ডাইভার বা সাঁতারু চোখে পড়ল না। আধখানা চাঁদের মতো বে-র ওধারে একটা ইয়ট ছাড়া অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে না র্যাচেল। লক্ষ্য করল একজন নারী আর একজন পুরুষ ইয়ট থেকে লাফিয়ে নামল একটা ডিঙিতে, তীরের দিকে এগোতে লাগল। ওখানে ছোট একটা মেয়ে ওদের দিকে হাত তুলে নাড়ছে। র্যাচেল অনুমান করল কুকুর এবং ওই মানুষগুলোর মধ্যে সম্ভবত কোনো সম্পর্ক নেই।
শিস দিল র্যাচেল। অ্যাই, কুকুর, এদিকে এসো। আবার শিস দিল ও, কিন্তু গতিপথ বদলাল না জার্মান শেফার্ড। একমনে সাঁতার কেটেই চলেছে।
হঠাৎ কুকুরটা ডেকে উঠল। পরপর তিনবার। খুশি খুশি গলা। যেন প্রভুকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখেছে তার পোষা জানোয়ার। তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল পানির নিচে।
কুকুরটা কই গেল? ওর কিছু হয়নি তো? কুকুরটার আবার দেখা মিলবে সে আশায় রইল র্যাচেল। কিন্তু এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট গেল, তবু দেখা নেই ওটার।
ওহ্, মাই গড! চিৎকার করে উঠল র্যাচেল। কুকুরটা নির্ঘাৎ ডুবে মরেছে!