আমার কথা বুঝতে পেরেছিস? পাশের ঘর থেকে পুনরাবৃত্তি করল কাকাতুয়া।
আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস, রোজালিন। চিলেকোঠার দরজা ভুলেও খুলবি না। খুললে পস্তাবি।
খুললে পস্তাবি, ক্যাকক্যাক করে উঠল পলি।
শিরশির করে উঠল রোজালিনের গা। বুঝতে পেরেছি, ফুপু।
রোজালিন একা একাই ঘুরে দেখল বাড়ি। পুরোনো বইয়ের অভাব নেই বাড়িতে। সেসব উল্টে পাল্টে দেখল। রাতে ফুপুর সঙ্গে বাগানে বসে চা খেল। রোজালিনের বাবার সম্পর্কে নানান প্রশ্ন করলেন ফুপু। রোজালিন যখনই হারম্যান সম্পর্কে কিছু জানতে চেয়েছে, প্রসঙ্গান্তরে চলে গেছেন হ্যারিয়েট ফুপু।
এ বাড়িতে বেড়াতে আসার চতুর্থ দিনে ফুপু জানালেন তিনি আজ বিকালে বাসায় থাকছেন না। এক বান্ধবীর বাড়িতে চায়ের দাওয়াত আছে, সেখানে যাবেন। রোজালিনের মন চাইলে যেতে পারে।
কিন্তু রোজালিন যেতে চাইল না। বুড়ো মানুষদের আড্ডা তার ভাল্লাগে না। ফুপুকে জানাল সে বাড়িতেই থাকবে। বাগানে বসে বই পড়ে কাটাবে সময়।
ফুপু চলে যাওয়ার পরে নিজের ঘরে ঢুকল রোজালিন। সঙ্গে নিয়ে আসা একটা হরর বই পড়ার চেষ্টা করল। কিন্তু ভ্যাম্পায়ারের কাহিনি তাকে আকৃষ্ট করতে পারল না। কিছুক্ষণ পরে বই বন্ধ করে ফেলল রোজালিন। সিধে হলো। বেরিয়ে এল হলঘরে। কী করা যায় ভাবছে। কিন্তু করার মতো কোনো কাজ নেই। ফুপুর বাড়িতে গরমের ছুটিটা কাটছে খুবই বিরক্তিকরভাবে। রোজালিন আসতে চায়নি। কিন্তু বাবা একরকম জোর করে পাঠিয়েছেন ওকে। তিনি ব্যবসার কাজে অস্ট্রেলিয়া যাবেন। নরফোকের বাড়িতে রোজালিন একা থাকবে, ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না তাঁর। ওদিকে তাঁর বড়ো বোন হ্যারিয়েট মাঝে মাঝেই ফোন করে হুকুম দিয়েছেন এবারের ছুটিতে রোজালিনকে যেন তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
দুলাভাইকে পছন্দ না করলেও বড়ো বোনকে ভয় পান রোজালিনের বাবা। তাই তাঁর আদেশ অমান্য করতে পারেননি। রোজালিনকে পাঠিয়ে দিয়েছেন ফুপুর বাড়ি। কিন্তু এত বড়ো বাড়িতে সঙ্গীহীন যোড়শী রোজালিনের মন হাঁপিয়ে উঠছে।
হলঘর ধরে হাঁটছে রোজালিন, চোখ চলে গেল চিলেকোঠার দরজায়। দরজার সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়াল সে। হ্যারিয়েট ওকে পই পই করে মানা করেছেন চিলেকোঠার ধারে কাছেও যেন না যায় রোজালিন। এর মধ্যে কী রহস্য আছে… রোজালিনের খুব কৌতূহল হলো রহস্য ভেদ করবে। ফুপুর সাবধান বাণী জোর করে মাথা থেকে দূর করে দিল। দরজার নবে হাত রাখল। মোচড় দিল। মোচড় খেল নব। তার মানে তালা মারা নেই। কিন্তু রোজালিন ডোরনব থেকে সরিয়ে নিল হাত। দ্বিধায় ভুগছে। ফুপু বলেছেন এ ঘরে না যেতে।
চলে যাচ্ছিল রোজালিন। কিন্তু কৌতূহলের জয় হলো। হ্যারিয়েট ফুপু পাগলাটে স্বভাবের মানুষ, রোজালিনের বাবা আগেই ওকে সাবধান করে দিয়েছেন, পাগল মানুষ কত উদ্ভট কথাই তো বলে। তাদের সব কথা বিশ্বাস করা বোকামি।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল রোজালিন। ডোরনবে আবার হাত রাখল ও, মোচড় দিল জোরে। তারপর ধাক্কা মেরে খুলে ফেলল দরজা। কতগুলো সিঁড়ি উঠে গেছে চিলেকোঠায়। রোজালিন ধীর পায়ে বাইতে লাগল সিঁড়ি। চিলেকোঠার মেঝের সমান্তরালে ও এসেছে, একটা দৃশ্য দেখে জমে গেল। ও বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একটা অর্ধ মানব, অর্ধ জানোয়ারের দিকে। ভয়ঙ্কর প্রাণীটা কটমট করে চেয়ে আছে রোজালিনের দিকে। মুখ দিয়ে আর্তচিৎকার বেরুল রোজালিনের। হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করল সিঁড়ি দিয়ে।
অসুস্থ বোধ করছে রোজালিন। যা দেখেছে বিশ্বাস করতে চাইছে না। মন। কী ভয়ঙ্কর দানব! চিলেকোঠার দরজা খুলে সিঁড়ির দিকে দৌড়াল রোজালিন। তারপর শুনতে পেল সেই শব্দ যার ভয় পাচ্ছিল এতক্ষণ। থপ থপ থপ। চিলেকোঠার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে ওটা–পিছু নিয়েছে রোজালিনের।
রোজালিনের মনে হলো হাঁটু ভেঙে পড়ে যাবে। হলো ল্যাণ্ডিং-এ সৃষ্টি ছাড়া জীবটাকে দেখতে পেল ও। দৌড়াবার চেষ্টা করল। পারল না। কুৎসিত প্রাণীটা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। কালো, ঘন লোমে বোঝাই একটা হাত বাড়িয়ে দিল। ছুটল রোজালিন।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে আরেকটু হলে আছাড় খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল ও। পিশাচটা ওর পেছন পেছন আসছে। ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে ওটা। পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে রোজালিন। ও একছুটে ঢুকে পড়ল লিভিংরুমে।
এক সেকেণ্ডের মধ্যেই বুঝে ফেলল রোজালিন এ ঘর থেকে বেরুবার রাস্তা নেই। আবার দরজা লক্ষ্য করে ছুটল। থাবা চালাল জানোয়ার। অল্পের জন্য মিস হলো টার্গেট। বাউলি কেটে বেরিয়ে এল রোজালিন।
হলঘর ধরে কিচেনের দিকে ছুটল রোজালিন। কদাকার অন্ধকারের প্রাণীটা টলতে টলতে ওর দিকেই আসছে। ওটার মুখ মনের পর্দা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করল রোজালিন। ওটার চেহারা অনেকটা মানুষের মতো–এজন্যই অস্বস্তি বেশি লাগছে ওর। রান্নাঘরের খিড়কির দরজা খুলে বারান্দায় চলে এল রোজালিন। কিন্তু যখন বুঝতে পারল বাগান থেকে বেরুবার রাস্তা নেই, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
বাগানের পাথুরে দেয়ালে পিঠ চেপে ধরল রোজালিন। খিড়কির দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল বীভৎস প্রাণীটা, এগোচ্ছে রোজালিনের দিকে। কুৎসিত মুখে নোংরা হাসি। আবার থাবা চালাল ওটা। আরেকবার বাউলি কেটে টার্গেট মিস করে দিল রোজালিন।