কেউ যেন কোনো জিনিস দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
মুখুজ্যে মশাই ভাবলেন নিশ্চয়ই গুন্ডা দুটো নিজেদের মধ্যে মারামারি আরম্ভ করেছে গুপ্তধনের বখরা নিয়ে।
কিছুক্ষণ সব চুপচাপ।
মুখুজ্যে মশাই এগিয়ে লণ্ঠনের উঁকি মেরে দেখলেন। কিন্তু কিছুই ভালো করে চোখে পড়ল না।
আর একটু এগিয়ে লণ্ঠনের শিখাটা বাড়িয়ে দিতেই চোখ পড়ল, দুটি গুণ্ডাই কোনের ঘরের ঠিক সামনের বারান্দার মেঝের উপর পাশাপাশি শুয়ে আছে। রক্তে চারদিক যেন ভেসে যাচ্ছে।
ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলেন, দুজনের কারও দেহেই প্রাণের চিহ্ন নেই।
হঠাৎ তাঁর কানে এলো ঝনঝন খনখন শব্দ।
ঘরের মেঝেতে পরপর তিনটি ঘড়া বসানো। তিনটিই মোহর পূর্ণ। কতগুলো ইঁদুর আর ছুঁচো লাফিয়ে তার উপর পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে শব্দ উঠল ঝনঝন–
বলরাম মুখুজ্যের মনে খুব আনন্দ হলো। যাক, গুন্ডা দুটো নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরেছে। এবার মোহর তিনিই পাবেন।
হঠাৎ ঘরের মধ্যে দপ্ করে জ্বলে উঠল একটা আলো।
অদ্ভুত একটা ছায়ামূর্তি ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়াল।
মুখুজ্যে মশাই সেই বিকট ছায়ামূর্তি দিকে তাকিয়ে কোনো কথাই বলতে পারলেন না।
ঠিক যেন পাথরে কোঁদা বিরাট দেহ একজন ব্রাহ্মণ। খালি গা। গলায় ধবধবে সাদা পৈতা। কাঁধে একটা চাদর।
সাদা দাঁত বের করে হি হি করে অদ্ভুত হাসি হেসে তিনি বললেন, আমিই কেদার চাটুজ্যে। গত ৫০ বছর ধরে যক্ষ হয়ে এই গুপ্তধন আগলাচ্ছি। গুণ্ডা ব্যাটারা এই ধন নিতে এসেছিল। কিন্তু বদমাইশদের এই ধনের উপর হাত দেবার অধিকার নেই। আপনি গরিব ব্রাহ্মণ। তাই আপনাকে এই ধন দান করলে আমার আত্মার মুক্তি হবে। আপনি আমার পুর্বপুরুষ সঞ্চিত অর্থ তিন ঘড়া মোহর নিয়ে যান। আর দয়া করে গয়ায় আমাদের নামে পিণ্ড দিয়ে দেবেন।
এর পরের খবর আমরা যা জানি, গরিব মুখুজ্যে মশাই হঠাৎ রাতারাতি বড়োলোক হয়ে ওঠেন এবং সর্বদা ধর্মে মতি রাখতেন। গরিব-দুঃখীকে প্রচুর দান করতেন।
একমাস পরে তিনি যক্ষের অনুরোধ মতো গয়ায় গিয়ে পিণ্ডদান করে এসেছিলেন।
এরপর হানাবাড়িতে আর কখনও ভূতের উৎপাতের কথা শোনা যায়নি। গভীর রাতেও সে পথে চলতে আর কেউ ভয় পেত না।