মাংসের কাউন্টারে গিয়ে সিঙ্কে হাত ধুয়ে নিল হেনরি।
আমি গায়ে কোট চাপালাম, গলায় মাফলার বেঁধে নিলাম। গাড়ি নিয়ে লাভ হবে না, তুষার ঠেলে যেতে পারব না। রিচি কার্ভ স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং-এ থাকে। এখানে থেকে হাঁটা পথের দূরত্ব।
আমরা বেরুচ্ছি, বিল পেলহ্যাম বলল, সাবধানে যেয়ো। হেনরি শুধু মাথা ঝাঁকাল। হ্যাঁরোসের বিয়ারের কেস ছোটো একটি হ্যান্ডকার্টে রেখেছে, দরজার ধারে। আমরা বেরিয়ে পড়লাম।
দুই
করাতের ব্লেডের মতো বাতাস যেন পোচ দিল গায়ে। মাফলারটা দিয়ে মাথা ঢেকেঢুকে নিলাম আমি। বার্টি দ্রুত মোজা পরে নিল।
আমি তোমাদেরকে ভয় দেখাতে চাই না, বলল হেনরি, মুখে অদ্ভুত হাসি। তবে যেতে যেতে বলব ছেলেটার গল্প… কারণ ঘটনাটা তোমাদের জানা দরকার।
কোটের পকেট থেকে ৪৫ ক্যালিবারের একটা পিস্তল বের করল হেনরি। ১৯৫৮ সাল থেকে দিন-রাত চব্বিশঘণ্টা গুলি ভরা পিস্তলটা প্রস্তুত থাকে কাউন্টারের নিচে। একবার এক লোক মাস্তানি করতে এসেছিল হেনরির সঙ্গে। লোকটাকে পিস্তল তুলে দেখানো মাত্র কেটে পড়েছিল সুড়সুড় করে। আরেকবার এক কলেজে পড়া ছোকরা চাঁদা চাইতে এসেছিল। তারপর এমন ভাবে সে ছুটে পালায়, যেন ভূতে তাড়া করেছে।
প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে বেরিয়ে পড়েছি তিনজন। কার্ট ঠেলতে ঠেলতে ছেলেটার গল্প বলল হেনরি। ছেলেটা বলেছে ঘটনার সূত্রপাত নিশ্চয়ই কোনো বিয়ারের ক্যান থেকে। কিছু কিছু বিয়ার খুব বাজে স্বাদের হয়। একবার এক লোক আমাকে বলেছিল বিয়ারের কৌটায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকলেও তা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে দ্রুত সব কাণ্ড ঘটাতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া বিয়ার খেয়ে বেঁচে থাকে।
যা হোক, ছেলেটা বলল অক্টোবরের এক রাতে রিচি গোল্ডেন লাইটের এক কেস বিয়ার কিনে বাসায় ফেরে। সে বিয়ার খাচ্ছিল আর টিমি ব্যস্ত ছিল স্কুলে হোমওয়াক নিয়ে।
টিমি ঘুমাতে যাবে, এমন সময় শুনতে পেল তার বাবা বলছে, ক্রাইস্ট জেসাস, জিনিসটা ভালো না।
টিমি জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে, বাবা?
ওই বিয়ার। বলল রিচি। ঈশ্বর, এরকম বাজে স্বাদের বিয়ার জীবনেও খাইনি আমি।
রিচির মতো বিয়ারখেকো মানুষ দ্বিতীয়টি দেখিনি। একবার বিকেলে ওয়ালি স্পাতে ওকে দেখেছি বাজি ধরে বিয়ার খেতে। সে এক লোকের সঙ্গে বাজি ধরেছিল এক মিনিটে বাইশ গ্লাস বিয়ার সাবাড় করবে। স্থানীয় কেউ ওর সঙ্গে বাজি ধরার সাহস পায় না। কিন্তু এ লোকটা এসেছিল মন্টপেলিয়ের থেকে। সে কুড়ি ডলার বাজি ধরে। রিচি তিপ্পান্ন সেকেন্ডে কুড়িটি বিয়ার সাবড়ে দেয়। তারপরও বার ছেড়ে যাওয়ার সময় ওকে বিন্দুমাত্র টলতে দেখিনি।
আমার বমি আসছে, বলল রিচি। সাবধান!
টিমি বলল, সে বিয়ারের ক্যানের গন্ধ খুঁকেছে। মনে হয়েছে ভিতরে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। তারপর আর ওটার কোনও সাড়াশব্দ নেই। ক্যানের মাথায় ধূসর রঙের একটা বুদ্বুদ দেখেছে সে।
দিন দুই পরে ছেলেটা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখে রিচি টিভি দেখছে। অবাক হলো সে। কারণ তার বাবা নটার আগে কখনও বাড়ি ফেরে না।
কী ব্যাপার? জিজ্ঞেস করল টিমি।
ব্যাপার কিছু না। টিভি দেখছি, জবাব দিল রিচি। আজ আর বেরুতে ইচ্ছে করল না।
সিঙ্কের বাতি জ্বালিয়েছে টিমি, খেঁকিয়ে উঠল রিচি। বাতি নেভা!
টিমি বাতি নেভাল, জানতে চাইল না বাতি ছাড়া অন্ধকারে সে হোমওয়াক করবে কীভাবে। রিচির মেজাজ খারাপ হলে তার সঙ্গে কথা বলা যায় না।
দোকান থেকে আমার জন্য একটা বিয়ার কিনে নিয়ে আয়, হুকুম করল রিচি। টাকা টেবিলের উপর রাখা আছে।
ছেলেটা বিয়ার নিয়ে ফিরে এসে দেখে বাবা তখনও বসে রয়েছে অন্ধকারে। টিভি অফ কর। গা ছমছম করে ওঠে ছেলেটার। অবশ্য অন্ধকারে ফ্ল্যাটে বড়োসড় একটা পিণ্ডের মতো বাবাকে ঘরের কোণে বসে থাকতে দেখলে কে না ভয় পাবে?
টিমি টেবিলের উপর বিয়ারের ক্যান রাখল। বাবার সামনে আসা মাত্র ভ করে পচা একটা গন্ধ নাকে ধাক্কা মারল তার। পচা চিজের বিটকেলে গন্ধ। কিন্তু বাবাকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পেল না টিমি। দরজা বন্ধ করে হোমওয়ার্ক নিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর শুনল টিভি চালু হয়েছে সেই সাথে বিয়ারের ক্যান খুলছে রিচি।
সপ্তাহ দুই এরকমই চলল। ছেলেটা সকালে উঠে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখে তার বাবা টিভির সামনে বসে ব আছে, টেবিলের উপর বিয়ার কেনার টাকা।
একদিন বিকেল চারটা নাগাদ বাসায় ফিরেছে টিমি–ততক্ষণে বাইরে কালো হয়ে এসেছে। রিচি হুকুম করল, আলো জ্বেলে দে। সিঙ্কের বাতি জ্বালল টিমি। দেখল বাবা কম্বল মুড়ি দিয়ে বসা।
দেখ, বলে কম্বলের নিচে থেকে একটা হাত বের করে আনল রিচি। তবে ওটা হাত নয়। ধূসর রঙের একটা মাংসপিণ্ড। আঁতকে উঠল টিমি। জিজ্ঞেস করল, বাবা, তোমার কী হয়েছে?
রিচি জবাব দিল, জানি না। তবে ব্যথা লাগছে না বরং…ভালই লাগছে।
টিমি বলল, আমি ডাক্তার ওয়েস্টফেলকে ডেকে আনি। তখন কম্বলটা ভয়ানক কাঁপতে শুরু করল, যেন ওটার নিচে প্রবল বেগে কিছু ঝাঁকি খাচ্ছে। রিচি বলল, খবরদার, ডাক্তারের কাছে যাবি না। সে চেষ্টা করলে তোকে আমি ধরে ফেলব। তারপর তোর দশা হবে এরকম। বলে মুখের উপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে ফেলল রিচি।