গ্রিন ঘাড় নেড়ে বলল, হুঁ! বেশ, এবার এসো আমার সঙ্গে, আমরা দুজনে ভালো করে ঘরটা খুঁজে দেখব। গ্রিন কিন্তু চেয়ার থেকে নড়ল না! শুধু। নিষ্ক্রিয়ভাবে বলল, আমি আগেই ওখানে খুঁজে এসেছি। আমি শব্দ শুনে ভেবেছিলাম যে তুমি। দরজা হাট করে খোলা ছিল, তাই ভেতরে ঢুকেছিলাম।
ম্যারিয়ট কোনো মন্তব্য না করে দরজাটা ঠেলে একেবারে খুলে দিল। দরজাটা খুলতেই নিশ্বাসের শব্দটা আরও জোরে এবং পরিষ্কারভাবে হতে লাগল। কেউ নিশ্চয়ই ওখানে আছে। চাপা স্বরে গ্রিন বলল।
কেউ ওখানে আছে, কিন্তু কোথায়? ম্যারিয়ট বিস্মিত হয়ে বলল। আবার তার সঙ্গে ঘরে ঢোকবার জন্য জেদ ধরল। গ্রিন রাজি হলো না। বলল সে একবার ঘরে ঢুকে ভালো করে খুঁজে দেখেছে, কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পায়নি। অতএব, সে আর ভেতরে যাবে না।
ওরা দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসার ঘরে ফিরে এল। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। ম্যারিয়ট বলল, সঠিক এবং যুক্তিসংগত একমাত্র যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তা হলো আমার হাতের ব্যথাটা। হাতটায় প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। কখন যে। চোট লেগেছিল কিছুই মনে করতে পারছি না।
গ্রিন বলল, দেখি তো তোমার হাত। ম্যারিয়ট কোটটা খুলে জামার হাতাটা গুটিয়ে ফেলল।
হায় ঈশ্বর! এ যে দেখছি রক্ত! সে চিৎকার করে উঠল। দেখো, দেখো, এটা কী?
হাতের কবজির কাছাকাছি একটা সরু লাল দাগ! তার ওপরে টাটকা রক্তের ফোঁটা। গ্রিন কাছে এগিয়ে এসে ঝুঁকে পড়ে বেশ কিছুক্ষণ সেটা খুঁটিয়ে দেখল। তারপর চেয়ারে বসে কৌতূহলী দৃষ্টিতে বন্ধুর মুখ দেখতে লাগল। মন্তব্য করল অজান্তেই তুমি নখের আঁচড় কেটেছ।
কোনো চিহ্ন নেই তো! নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণে আমার হাতে এমন ব্যথা হচ্ছে।
ম্যারিয়ট নিশ্চল বসে একদৃষ্টে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন সব রহস্যের সমাধান হাতের চামড়ার ওপর লেখা আছে।
কি ব্যাপার? একটা আঁচড়ে অদ্ভুত কিছু আমি দেখছি না- নিরুত্তাপ স্বরে গ্রিন বলল। আর ওটা হয়তো তোমার আস্তিনের বোতামের দাগ। গতরাতে উত্তেজনাবশত
ম্যারিয়টের ঠোঁট দুটো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। সে কথা বলার চেষ্টা করল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে। অবশেষে সে তার বন্ধুর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ল।
মৃদু কম্পিত অনুচ্চ স্বরে সে বলল, দেখো, ঐ লাল দাগটা দেখছ? হাতের নিচের দিকে, যাকে তুমি আঁচড় বলছ?
এবার গ্রিন স্বীকার করল, কিছু যেন দেখেছে। ম্যারিয়ট রুমাল দিয়ে সেটা মুছে ফেলে আবার তাকে ভালো করে লক্ষ করতে বলল।
হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এটা একটা পুরোনো ঘায়ের দাগ।
এটা একটা পুরোনো ঘা! ফিসফিস করে ম্যারিয়ট বলল। ঠোঁট দুটো তার কাঁপছে থরথর করে। এখন সবকিছু মনে পড়ছে।
সবকিছু কী? চেয়ারে বসে অস্থির হয়ে গ্রিন জিজ্ঞেস করল।
চুপ! আস্তে! আমি তোমাকে বলব। এ ক্ষত ফিল্ডেরই কীর্তি!
বিস্মিত হয়ে তারা পরস্পরের মুখের দিকে চেয়ে রইল। কারোর মুখে কোনো কথা নেই।
ঐ ক্ষত ফিল্ডেরই সৃষ্টি। অবশেষে ম্যারিয়ট একটু উঁচু গলায় পুনরাবৃত্তি করল।
ফিল্ড! তুমি বলছ-কাল রাতে?
না, কাল রাতে নয়–অনেক বছর আগে একটা ছুরি দিয়ে স্কুলে আমরা হাত কেটে একে অন্যের ক্ষতে রক্ত দিয়ে বদল করেছিলাম। সে এক ফোঁটা আমার হাতে ফেলেছিল, আমিও এক ফোঁটা তার–।
হায় ঈশ্বর, কিসের জন্য?
এটা একটা নিবিড় বন্ধুত্বের বন্ধন। আমরা পবিত্র অঙ্গীকার করেছিলাম, একটা চুক্তি। আমার এখন সব স্পষ্ট মনে পড়ছে। আমরা ভূতের গল্পের বই পড়তাম এবং শপথ করেছিলাম যে আগে মারা যাবে সে অন্যকে দেখা দেবে। আমার পরিষ্কার মনে আছে, আজ থেকে সাত বছর আগে, এক ভীষণ গরমের। দুপুরবেলায় খেলার মাঠে কাজটা আমরা করি এবং একজন শিক্ষকের হাতে ধরা খাই। তিনি ছুরিটি কেড়ে নেন–
তাহলে তুমি বলতে চাইছ–গ্রিন তোতলাচ্ছে।
ম্যারিয়ট কোনো উত্তর দিল না। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে সোফার ওপর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। দুহাতে ঢাকল মুখ।
গ্রিন নিজেও একটু হতবাক। সে একা একা সমস্ত ব্যাপারটা আবার চিন্তা করতে লাগল। একটা ধারণা তার মাথায় এল, সে ম্যারিয়টের কাছে গিয়ে তাকে সোফা থেকে তুলল। আমি বলি কি ম্যারিয়ট, এতে এত ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এটা অলীক কিছু হলে আমরা জানি কি করতে হবে। আর তা যদি না হয়, তবে আমরা বিষয়টিকে নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করতে পারি, তাই না?
ফ্যাকাসে মুখে গ্রিনের দিকে তাকিয়ে ম্যারিয়ট বলল, হয়তো তাই। কিন্তু আরেকটা কথা ভেবে আমি খুব ভয় পাচ্ছি। ঐ বেচারা আত্মা
ঐ লোকটা তার প্রতিজ্ঞা রেখেছে-ব্যস, ব্যাপারটা মিটে গেল তাই না? ম্যারিয়ট মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল।
গ্রিন বলল, আচ্ছা, একটা জিনিস কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না, তুমি কি নিশ্চিত যে সত্যিই সে খাওয়াদাওয়া করেছিল?
ম্যারিয়ট কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকে দেখে জানাল এতে তার কোনো সন্দেহ নেই। সে শান্তভাবে কথা বলছিল। বলল, আমাদের খাওয়া শেষ হলে আমি নিজের হাতে সেগুলো সরিয়ে রেখেছি। ঐ আলমারির তৃতীয় তাকে পাত্রগুলো রাখা আছে। চেয়ারে বসেই ম্যারিয়ট দেখাল। গ্রিন উঠে গিয়ে পাত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখে মন্তব্য করল, যা ভেবেছি! এটা নিছকই মনের কল্পনা। খাবারগুলো কেউ ছোঁয়নি। এদিকে এসো, নিজের চোখে দেখে যাও।