চেঁচিয়ে আমাকে বলল, নেমে আসুন বলছি, আমার ভাড়া মিটিয়ে যান। তবু আমি চুপচাপ রয়ে গেলাম দেখে মোমবাতিটা অন্ধের হাতে দিয়ে বেয়ে উঠতে শুরু করল।
এক মুহূর্ত দেরি না করে কনুই দিয়ে কাঁচ ভেঙে ফেললাম। বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এমন সময় মহিলাটিও উঠে এল। হিংস্র বাঘিনীর মতো এগিয়ে আসছে সে।
ঠিক তখনই আমি পা পিছলে পড়ে গেলাম। হাতে আর পায়ে নরম পদার্থের ছোঁয়া পেলাম। তাকালাম নিচে। আতংকের উপর আতংক। একরাশ গলিত মৃতদেহের উপর আমি পড়ে গেছি। নারী আর পুরুষের অসংখ্য লাশ সেখানে। কোনোটা কাটা গলার, কোনোটা আবার তখনো সেই অবস্থায় পৌঁছায়নি। বুঝলাম এরা সবাই সরাইখানার আতিথ্য গ্রহণ করেছিল।
কোনোরকম সেখান থেকে উঠে ছাদের ঢালু টালির উপরে নামলাম। ফিরে দেখি, মহিলাটিও অত্যন্ত ক্রুদ্ধভাবে সেই স্কাইলাইট দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এ । জায়গায় একটা গাছের ডাল চোখে পড়ল। যা ধরে নিষ্কৃতি মিলতে পারে। ডালটা প্রায় ধরেছি এমন সময় আমার পা পিছলে গেল। আরেকটু হলেই সর্বনাশ হতো। আমি প্রাণপণে ডালটা চেপে ধরে ঝুলতে থাকি। এখন যদি পড়ে যাই হাত পা ভাঙবে, ধরাও পড়ব। ধরা পড়া মানেই মৃত্যু।
একটু পরেই লক্ষ করলাম মহিলাটি উল্লসিত চিৎকার করে উঠল। মহা আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ করলাম সে কুড়ালটা দোলাচ্ছে। পরমুহূর্তেই ডান হাতে একটা ভয়ংকর আঘাত অনুভব করলাম। বুঝতে পারলাম আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি। যাই হোক, এই অবস্থাতেও কোনো মতে উঠে দৌড়ে পালাতে লাগলাম।
রাতের আঁধারে কতক্ষণ দৌড়েছি জানি না। শেষ পর্যন্ত যখন পেছন ফিরে দেখলাম কেউ তেড়ে আসছে কিনা, দেখলাম যেখানে সরাইটা ছিল পুরো জায়গাটা জুড়ে ওখানে জ্বলছে আগুন। সেই আগুনে অন্ধকার আকাশ আলোকিত।
মেথুয়েনের কাহিনি শেষ হলো। তার কপালে ঘামের বড় বড় বিন্দু ফুটে উঠেছে। যেন কাহিনির বর্ণনা করতে যে সে আবার ঘটনাস্থলে চলে গেছে।
ডাক্তার বললেন, অত্যন্ত ভয়ংকর কাহিনি। শেষ পর্যন্ত সরাইখানায় আগুন লেগে গেল। কিন্তু কিভাবে?
আমার ধারণা মহিলা যখন অন্ধ লোকটাকে মোমবাতি ধরতে দিয়েছিল তখন সেই আগুন কোনো দাহ্য পদার্থে লেগে যায়। তারপর সেই আগুন সবখানে ছড়িয়ে পড়ে, বলল মেথুয়েন।
আপনি দিব্যি সব বুঝিয়ে দিতে পারেন দেখছি। ঠাট্টার সুরে বললেন ডাক্তার।
মেথুয়েন উঠে চেয়ারটার পেছনে গেল। তার মুখ অত্যন্ত ফ্যাকাশে। ডাক্তারের দিকে ফেরার আগে সে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য চেয়ারের হাতলটা বাঁ হাতে চেপে ধরল। তারপর বলল, তাহলে আপনি ভাবছেন আমি পাগল? তাই যদি হয়, তাহলে এটার কী ব্যাখ্যা দেবেন? এই বলে সে চট করে পকেট থেকে কাটা ডান হাতটা বের করল। সে হাতের চারটে আঙুল নেই। শরীরের সাথে। হাতের কাটা বাকি অংশে ব্যান্ডেজ করা। চটচটে রক্তে মাখা সেই ব্যান্ডেজ। মেথুয়েন ভারসাম্য না রাখতে পেরে পড়ে যাচ্ছিল, ডাক্তার সাটন ধরে ফেললেন তাকে।