প্রত্যেকে তার বাযারে চাপ দিল, প্রথম জন বলল, ব্যাটল অভ ইঙ্কারম্যানের হিরো ছিলেন তিনি।
গর্বে বুক ফুলে গেল রোজমেরির। আমাকে আর কেউ ভীতু বলতে পারবে না, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে। আমি ক্যাপ্টেন হ্যাঁসকসের নাম রক্ষা করব।
.
মাকে বইটি দেখানোর জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠল রোজমেরি, ছুটল বাড়ির দিকে। মা সাধারণত দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন তার জন্যে। আজ তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। কলিংবেল টিপল রোজমেরি, অপেক্ষা করছে। অনেকক্ষণ পরেও কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে ভয় লাগল ওর। মা কি কোথাও গেছেন? ফেরার পথে অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন? নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?
হঠাৎ ঝড়াং করে খুলে গেল দরজা, চৌকাঠে এসে দাঁড়াল কুৎসিত দর্শন, বিশালদেহী এক লোক।
এতক্ষণে স্কুল থেকে ফেরার সময় হলো, খুকি! বলল সে বিশ্রী হেসে।
এক পা পিছিয়ে গেল লোকটা, ভেতরে ঢুকতে দিল রোজমেরিকে। মাকে এই সময় দেখতে পেল সে। ম্লান, বিবর্ণ, থরথর করে কাঁপছেন ভয়াল দর্শন লোকটার পেছনে দাঁড়িয়ে।
ওহ্, রোজি, আমার সোনা, প্রায় ডুকরে উঠলেন তিনি, তারপর লোকটাকে বললেন, এবার তুমি চলে যাও, প্লিজ। বললামই তো আমাদের এখানে তোমার কোনো কাজ নেই। দয়া করে চলে যাও!
রোজি, বলল লোকটা। বেশ সুন্দর নাম। লোকটার গলায় এমন কিছু ছিল, ভয় পেয়ে গেল রোজমেরি, তুমি দেখতেও ভারী সুন্দর। ঘুরে দাঁড়াল সে মিসেস হার্টের দিকে। আপনি নিশ্চয়ই চান না আপনার মেয়ের কোনো ক্ষতি হোক? ধরুন, ওর সুন্দর মুখখানায় যদি একটা খুরের পোচ দিই? ঘোঁতঘোঁত করে উঠল লোকটা শেষের দিকে। দেব নাকি?
রোজমেরির কানে কানে কে যেন ফিসফিস করে বলল, সাহস রাখো। মনে মনে জবাব দিল সে। সাহস রাখছি। গ্রেগরি। অবশ্যই সাহস হারাব না।
গলায় জোর এনে রোজমেরি লোকটাকে বলল, তুমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাও। নইলে আমি পুলিশ ডাকব।
খ্যাক খ্যাক হেসে উঠল লোকটা। কীভাবে ডাকবে, খুকি? ফোনের লাইন কেটে দিয়েছি। শোনো, ফ্যাচফ্যাচ কোরো না। আমার কিছু টাকা দরকার। দিয়ে দাও। সুবোধ বালকের মতো চলে যাব।
শিরদাঁড়া টানটান করে লোকটার মুখোমুখি দাঁড়াল রোজমেরি। তুমি খামোখাই তর্ক করছ। আজকাল বাড়িতে কেউ টাকা-পয়সা রাখে না-লোকে চেক ব্যবহার করে।
মিসেস হার্টের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচালো লোকটা। খুব চালাক মেয়ে বানিয়েছেন তো!
রোজমেরি মায়ের দিকে তাকাল। বসে আছেন তিনি চেয়ারে, ভয়ে সাদা মুখ। ভয় পেয়ো না, মাম্মি, শান্ত গলায় বলল সে। ড্যাডি এক্ষুনি চলে আসবে।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল লোকটা। তুমি সত্যি খুব চালাক, রোজি। তোমার বাবা মারা গেছে অনেক আগে, সেকথা জানি না ভেবেছ? সব খবর নিয়েই এসেছি।
হঠাৎ চেহারা বদলে গেল লোকটার, থমথমে হয়ে উঠল। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, বেশ বুঝতে পারছি, হিসহিস করে বলল সে। দেখাচ্ছি মজা!
এক লাফে পৌঁছে গেল মিসেস হার্টের পেছনে, পেছন দিয়ে চেপে ধরল গলা। রোজমেরি স্থির দাঁড়িয়ে রইল, আপনাআপনি শক্ত হয়ে গেল মুঠো। লোকটাকে থামাতে হবে। কিন্তু কীভাবে? কীভাবে? আগে তোমার মাকে শেষ করব তারপর তোমাকে, বিচ্ছু মেয়ে, শুয়োরের মতো ঘোঁতঘোঁত করছে সে, মিসেস হার্টের গলায়। শক্ত আঙুলগুলো চেপে বসল।
গ্রেগরি, গ্রেগরি, ওকে থামাও। মৃগীরোগীর মতো চেঁচিয়ে উঠল রোজমেরি ।
হতভম্ব দেখাল লোকটাকে, মিসেস হার্টের গলা ছেড়ে দিল। কী বললে তুমি? খেঁকিয়ে উঠল সে। গ্রেগরি আবার কে?
রোজমেরিই প্রথমে দেখতে পেল গ্রেগরিকে। মায়ের চেয়ারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। পরনে ক্যাপ্টেনের ইউনিফর্ম, হাতে ব্যাটেল অভ ইঙ্কারম্যানের সেই ভারী তরবারি যা দিয়ে বহু শত্রু ঘায়েল করেছেন তিনি। ক্যাপ্টেনকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে রোজমেরি, মা বা লোকটা কি দেখতে পাচ্ছে না?
শিউরে উঠলেন মিসেস হার্ট। খুব ঠান্ডা লাগছে। রোজমেরি বুঝতে পারল গ্রেগরির উপস্থিতি টের পেয়েছেন মা। কিন্তু লোকটা? রোজমেরির চিৎকার শুনেই কি সে ওভাবে দমে গেল?
হঠাৎ লোকটার গোটা শরীর ঝাঁকি খেল, হাত মুঠো করল সে, ঘনঘন ঢোক গিলল, কাউকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে। হঠাৎ দুলে উঠল শরীর, ধপ করে বসে পড়ল চেয়ারে।
ওহ্, মাই গড, আমার হার্ট, গুঙিয়ে উঠল সে। আমার বোধহয় হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।
মুখ আর শরীর কুঁকড়ে গেল তার, অনবরত গোঙাচ্ছে, চাপ দিয়ে ধরছে বুক।
বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও! আর্তনাদ করে উঠল লোকটা। মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ছুরি মেরেছে। সিধে হলো সে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে, পরক্ষণে দড়াম করে পড়ে গেল মেঝেতে।
.
কিছুক্ষণ পর পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স এল রোজমেরিদের বাড়িতে, শয়তান লোকটার লাশ নিয়ে গেল। হইচই কমলে দোতলায় উঠে এল রোজমেরি, দাঁড়াল পোর্ট্রেটের সামনে।
ওহ্, গ্রেগরি, তুমি সত্যি দারুণ। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। চোখে জল নিয়ে বলল ও। গ্রেগরি তাকিয়ে আছেন ওর দিকে, মুখে হাসি। চোখ মুছে রোজমেরিও হাসল। ফিসফিস করে বলল, ব্যাপারটা শুধু আমরা দুজনেই জানি, তাই না?
এমন সময় বাতাস এসে নাড়িয়ে দিল পর্দা। আর ছবিটি সত্যি সত্যি চোখ পিটপিট করে উঠল রোজমেরির দিকে তাকিয়ে।
বানরের প্রতিশোধ – রাসকিন বন্ড
আমি ঠিক নিশ্চিত নই গতরাতে সত্যি কুকুরের ডাক শুনেছি, নাকি ওটা স্বপ্ন ছিল। আমার কটেজের নিচে, পাহাড়ে ঘেউ ঘেউ করছিল কুকুরগুলো। একটা সোনালি ককার, একটা রিট্রিভার, একটা কালো ল্যাব্রাডর, একটা ডুশন্ড এবং আরও দুটো অচেনা জাতের কুকুর। মাঝরাতের পরে ওদের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় আমার। এমন জোরে ডাকাডাকি করছিল, বাধ্য হয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে আসি আমি। তাকাই ভোলা জানালা দিয়ে। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম ওগুলোকে। পাঁচ-ছটা কুকুর। লম্বা ঘাসের মধ্যে ছোটাছুটি করছিল।