.
সেই রাতে ফ্রবিশার দম্পতির কারোরই ঘুম হলো না। বিছানায় শুয়ে নিচু গলায় তারা কথা বলতে লাগল।
আমরা এখন কী করব, ফ্রেডেরিক? ওকে চলে যেতে বলব। ও আমাদেরকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আমাদেরকে বাড়ি ছাড়া করবে।
আমাকে বাড়ি ছাড়া করতে পারবে না।
কিন্তু ও তো একা নয়। ওই ভয়ংকর মহিলাও রয়েছে এখানে। ইসোবেলকে সে সাহায্য করছে। ইসোবেল কী বলল মনে নেই? বলেছে ওর দাদিমা নাকি ওকে এ বাড়িটি দিয়ে দেবে। সে আমাদের কাছ থেকে বাড়িটি কেড়ে নেবে।
অসম্ভব। এটি আমাদের বাড়ি। আমরা এটি কিনেছি। আর বৃদ্ধা মহিলা এখানে কী করে আসবে? সে তো মারা গেছে।
তাহলে আমাকে ব্যাখ্যা করো লাইব্রেরি ঘরে কেন তোমার মনে হয় ওখানে তুমি একা নও, সঙ্গে কেউ আছে? কে আছে তোমার সঙ্গে ওই ঘরে? আমি কীভাবে ছবিটি দেখেই চিনে ফেললাম?
কিন্তু, সেসিলি—
চুপ! শোনো!
ওরা শুনতে পেল লাইব্রেরি ঘরের দরজা খুলে গেছে। তারপর আবার বন্ধ হয়ে গেল। হলঘরে মৃদু পায়ের শব্দ। পদশব্দ ওদের বেডরুমের দরজা পার হয়ে গেল। তারপর ইসাবেলের শোবার ঘরের দরজা খোলা এবং বন্ধের আওয়াজ হলো। দূরের অন্ধকার থেকে ভেসে এল মানুষের গলা।
সেসিলি খামচে ধরল তার স্বামীর হাত। আমাকে কালকেই কোথাও নিয়ে চলো, ফ্রেডেরিক। আমি ভয় পাচ্ছি।
আমরা কাল সকালেই কোথাও চলে যাব, সোনা। তবে ইসোবেলকেও সঙ্গে নিয়ে যাব। ওকে একা বাড়িতে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।
.
সকাল হতেই ওরা রেডি হতে লাগল। ফ্রেডেরিক সেসিলিকে বলল, একটা সুটকেস গুছিয়ে নাও। আমরা দিন দুই কোনো হোটেলে থাকব। আমি যাই। ইসোবেলকে ঘুম থেকে তুলি গে। তারপর চা খেয়েই বেরিয়ে পড়ব।
তবে সেসিলি রেডি হওয়ার আগেই ফিরে এল ফ্রেডেরিক। জলদি! বলল সে। সুটকেসটা নাও। ইসোবেল তার ঘরে নেই।
ঘরে নেই! তাহলে কোথায় গেছে?
লাইব্রেরি ঘর বন্ধ। তালা মারা। আমি ঢুকতে পারছি না। ইসোবেল ভেতরে আছে। কার সঙ্গে যেন কথা বলছে।
সে সেসিলিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে। ওকে একটা হোটেলে নিয়ে তুলল।
তুমি এখানে নিরাপদেই থাকবে। আমি আসছি এক্ষুনি।
তুমি কোথায় যাচ্ছ, ফ্রেডেরিক?
পুলিশের কাছে। তারপর বাড়ি ফিরব-যদি সত্যি ওটা এখনো আমাদের বাড়ি হয়ে থাকে।
.
জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হবে আমাকে, বলল পুলিশ অফিসার। তালা ভাঙতে পারিনি। খুব শক্ত।
ফ্রেডেরিক শুধু পুলিশ নয়, সঙ্গে একজন ডাক্তারও নিয়ে এসেছে। তারা লাইব্রেরির সামনে অপেক্ষা করছিল। জানালার কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনতে পেল তারা। তারপর চাবি ঘোরানোর শব্দ এবং খুলে গেল দরজা।
আপনি ভেতরে আসুন, ডাক্তার। না, আপনাকে আসতে হবে না, মি. ফ্রবিশার। ভেতরের দৃশ্যটি আপনার জন্য খুব একটা সুখকর হবে না।
ফ্রেডেরিকের বুক ধড়ফড় করছে। লাইব্রেরিতে সে কিছু নড়ানোর শব্দ পেল। তারপর পুলিশ কর্মকর্তার কণ্ঠ। একটি চেয়ার নড়ানোর আওয়াজ। ডাক্তার কী যেন বললেন। মিনিটগুলো ঘণ্টার মতো লাগছে।
আবার খুলে গেল লাইব্রেরির দরজা। বেরিয়ে এলেন ডাক্তার। তিনি ফ্রেডেরিকের হাত ধরে ওকে হলঘরের শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়ে একখানা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।
সে মারা গেছে, মি. ফ্রবিশার। লেখার বড় চেয়ারটিতে বসে আছে। ওর বয়স যেন কত বললেন?
ষোলো বছর, ডাক্তার।
ষোলো বছর! কিন্তু ওর চেহারায় যা ঘটেছে তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া মুশকিল। তার সমস্ত চুল পেকে সাদা এবং মুখখানা হয়ে গেছে বুড়ি মানুষের মতো!