জানি সুসান তোমার প্রিয় বান্ধবী। ওকে আমিও পছন্দ করি। কিন্তু ওর স্বামীটাকে আমার পছন্দ নয়। খুবই বাজে লোক। ওকে আমি বিশ্বাস করি না। নাকেমুখে মিথ্যা কথা বলে।
ওকে আমিও দেখতে পারি না। বিশ্বাস করার তো প্রশ্নই নেই। কিন্তু টেরেন্স ব্লেক এখানে থাকতে আসছে না। সুসানও নয়। থাকতে আসছে ইসোবেল, ওদের মেয়ে। দয়া করে চিঠিটি পড়ো, ফ্রেডেরিক। তাহলেই সমস্ত ব্যাপারটা বুঝতে পারবে। এবং ওরা আসার ব্যাপারে আশা করি আমার সঙ্গে একমত হবে।
ফ্রেডেরিক ফ্রবিশার পড়তে শুরু করল সুসান ব্লেকের চিঠি। দীর্ঘপত্র হলেও সে বেশ মনোযোগেই পড়ল। সে তার স্ত্রীকে সাহায্য করতে চায়, যদি সম্ভব হয়।
সুসান পরিষ্কার ভাষায় তার সমস্যার কথা ব্যক্ত করেছে। তার স্বামী টেরেন্স কানাডায় একটি চাকরি পেয়েছে। ভালো বেতনের চাকরি। আর টাকাটা ওদের। দরকার। টেরেন্স ইতোমধ্যে কানাডা চলে গেছে। সুসান যত দ্রুত সম্ভব তার স্বামীর সঙ্গে যোগ দিতে চায়। কিন্তু ইসোবেল এখনো স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ওর বয়স মাত্র ষোলো। ওর মা চায় মেয়ে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত ইংল্যান্ডেই থাকুক। তারপর সে কানাডায় বাবা-মার কাছে চলে যাবে। সুসানের ইচ্ছে ইসোবেল তার স্কুলজীবন শেষ করার আগ পর্যন্ত ফ্রবিশার দম্পতির সঙ্গে থাকবে। সুসান এবং সেবিলের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। সুসান অত্যন্ত খুশি হবে যদি সেসিলি আগামী বছর দুই ইসোবেলকে তাদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনার সুযোগ দেয়। সেসিলি রাজি না হলে সুসানের পক্ষে আর কানাডা যাওয়া সম্ভব হবে না। আর প্রকৃত বন্ধু বলতে সুসানের শুধু ফ্রবিশাররাই রয়েছে। ইসোবেলের দাদা দাদি মারা গেছেন। কাজেই ইসোবেলের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।
ফ্রেডেরিক ফ্রবিশার চিঠিটি ফিরিয়ে দিল তার স্ত্রীকে। ওর জন্য খারাপই লাগছে আমার, বলল সে।
আমারও, ফ্রেডেরিক। টেরেন্সের কাছে ওর যত দ্রুত সম্ভব চলে যাওয়া উচিত। টেরেন্স এই প্রথম একটা ভালো চাকরি পেয়েছে।
আর সুসান যদি টেরেন্সের কাছে না যায় টেরেন্স হয়তো তাহলে উল্টোপাল্টা কিছু একটা করে বসবে। ও চাকরিটা হারাবে, বলে দিলাম। ওর ওপর কোনো ভরসা নেই। ওর বউও ওকে বিশ্বাস করে না।
সেজন্য সুসান দায়ী নয়, বলল সেসিলি। ওই লোকটাকে বিশ্বাস করলে সুসানই ঠকবে! রাগত গলায় বলল ফ্রেডেরিক। আমাদের কাছে এ বাড়িটি বিক্রির সময় সে খুব একটা সতোর পরিচয় দেয়নি।
সে দশ বছর আগের কথা, স্বামীকে মনে করিয়ে দিল সেসিলি। আর আমরা এখানে ভালোই আছি।
ফ্রেডেরিক হাসল স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে। আমরা সবসময়ই ভালো ছিলাম, মাই ডিয়ার। আমরা যেকটি বাড়িতে ছিলাম কোথাও অসুখী ছিলাম না। এ বাড়িটি তো খুবই চমৎকার। কিন্তু টেরেন্স ব্লেক এ বাড়ি সম্পর্কে আমাদের কাছে একগাদা মিথ্যে বলে অনেকগুলো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
হয়তো ওর মন খারাপ ছিল। হয়তো এ বাড়িটি সে বিক্রি করতেই চায়নি। এ বাড়িতে তার পরিবার বহু বছর থেকেছে। তার বাবা-মা-ইসোবেলের দাদা দাদি-এখানেই থাকতেন। ব্লেক পরিবার এ বাড়িতে একশো বছরের বেশি সময় ধরে বাস করেছে। কাজেই বাড়িটি সে বিক্রি করতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক।
দোষটা তার। সংসারের প্রতি মনোযোগ ছিল না তার। বোকার মতো সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলেছে। তাই বাধ্য হয়েছে এ বাড়ি বিক্রি করতে। এখানে থাকার এত সামর্থ্যই তার ছিল না।
সেসিলি চেয়ার ছাড়ল। স্বামীর কাছে এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখল।
টেরেন্স প্রসঙ্গ বাদ দাও। তুমি ওর ব্যাপারে যা বলেছ ঠিকই বলেছ। কিন্তু সুসানকে আমরা কী বলব সেটা বলো?
এক মুহূর্ত নিশ্চুপ রইল ফ্রেডেরিক ফ্রবিশার। তারপর ধীরে ধীরে বলল, তোমাকে তো বললামই, সেসিলি। সুসানের জন্য আমার খারাপ লাগছে। ওর জন্য আমি কিছু করতে চাই।
তাহলে কি চিঠি লিখে ওকে বলে দেব ইসোবেলকে এখানে পাঠিয়ে দিতে?
ঘড়ি দেখল ফ্রেডেরিক। দেরি হয়ে গেল, বলল সে। আধঘণ্টা আগেই কাজে বসার কথা ছিল। ঘুরল তার স্ত্রীর দিকে।
তুমি চাও মেয়েটা এখানে আসুক, তাই না? জিজ্ঞেস করল সে।
মাথা ঝাঁকাল সেসিলি। হ্যাঁ, ফ্রেডেরিক। ইসোবেলকে দেখি না বহুদিন। মেয়েটি ভারি মিষ্টি ছিল। ও এলে মজাই হবে। শত হলেও ও আমাদের পারিবারিক বন্ধু।
হাসল ফ্রেড্রেরিক। তাহলে আজকেই চিঠি লিখে ফেলো, সেসিলি। ওকে আসতে বলে দাও। চেষ্টা করব ও যেন এখানে ভালো থাকে।
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে পেছনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে। হলঘরে ওর পায়ের আওয়াজ পেল সেসিলি। তারপর লাইব্রেরি ঘরের দরজা খোলা এবং বন্ধ হওয়ার শব্দ। ও ওর নতুন বই লিখতে শুরু করেছে। লাঞ্চের আগে আর ওই ঘর থেকে বেরুচ্ছে না।
আশা করি ইসোবেল এলে ওর কাজকর্মে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না, আপন মনে বলল সেসিলি। বাড়িটি অনেক বড়, আমাদের সবার জন্যই এখানে প্রচুর জায়গা রয়েছে।
মাসখানেক বাদে, ডিসেম্বরের এক রাতে সেসিলি ফ্রবিশার তাদের হলঘরে একা দাঁড়িয়েছিল। তার স্বামী গাড়ি নিয়ে গেছে রেলস্টেশনে ইসোবেলকে নিয়ে আসতে। হলঘরের চারপাশে একবার চোখ বুলাল সেসিলি। ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে। ঘরের সবকটা বাতি জ্বালানো। ইসোবেলকে স্বাগত জানাতে এ ব্যবস্থা। সে দোতলায় গেল দেখতে মেয়েটির বেডরুম ঠিকঠাক সাজানো রয়েছে কিনা।