‘‘কাজের জায়গায় খোঁজ নেননি?’’
‘‘নিয়েছিলাম৷ সেটাও ভুয়ো৷ শুধু একবার কথায় কথায় বলেছিলেন ওঁদের আদি বাড়ি নাকি নবদ্বীপে৷ সেখানে গিয়ে অবশ্য আর খোঁজ নেওয়া হয়নি৷ ও হ্যাঁ, বাজারে ওঁর লেখা একটা বইও নাকি আছে, তন্ত্রমন্ত্রের ওপরে৷ তার নামটাও ছাই খেয়াল নেই আর৷’’
কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এল বিশু, ‘‘কাকার নামটা কী বললেন যেন?’’
‘‘বলেছি হে, গল্পের মধ্যেই বলেছি একবার৷ তোমরা বোধহয় খেয়াল করোনি৷ উনি নিজের নাম বলতেন কে. এন. ভট্টাচার্য৷ কৌলিক উপাধি অবশ্য মৈত্র৷ পুরো নাম কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য মৈত্র৷ একবার ঠাট্টা করতে করতে বলেছিলেন, আগমমতে তন্ত্রসাধনা করেন বলে লোকে নাকি ওঁকে উপাধিও দিয়েছে একটা, আগমবাগীশ৷’’
বিশু শুনে ভুরু কুঁচকে রইল৷
রঘুর খটকা কিন্তু তখনও যায়নি৷ প্রশ্ন করল সে, ‘‘আচ্ছা চাটুজ্জেমশাই, একটা কথার জবাব দিন তো৷ আপনার কাকার নাহয় তন্ত্রের বিশেষ ক্ষমতা ছিল বলে বিনা বাধায় ওই মন্দিরের ওখানে যেতে পেরেছিলেন৷ পরাগ ওরফে মগলহানজামার কথা ছেড়েই দিলাম৷ কিন্তু যেখানে আড়াইশো বছরে কেউ যেতে পারেনি, বা গেলেও বেঁচে ফিরে আসতে পারেনি, সেখানে আপনি প্রথমবার ঢুকে পড়লেন কী করে? তাও সম্পূর্ণ বিনা বাধায়?’’
চাটুজ্জেমশাই কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে রইলেন৷ তারপর বরাভয় দেওয়ার ভঙ্গিতে ডান হাতের চেটোটা তুলে ধরলেন সবার চোখের সামনে৷
সবাই ঘিরে ধরল চাটুজ্জেমশাইকে, কিন্তু বুঝল না কিছুই৷ একমাত্র বিশুই শুধু ওর ডানহাতের তর্জনীটা চাটুজ্জেমশাইয়ের হাতের তেলোর ওপর রেখে অস্ফুটে বলতে লাগল, ‘‘বৃহস্পতির স্থান উচ্চ, একটি রিং চিহ্নও দেখা যাচ্ছে বর্তমান সেখানে…সেইসঙ্গে শনির স্থানও অতি উচ্চ, উমমমখ সেখানে একটা ত্রিশূলের চিহ্ন—তার ওপর…কেতু থেকে বৃহস্পতি অবধি একটি রেখা প্রসারিত…’’
চাটুজ্জেমশাইয়ের নিজের বলা কথাটাই মনে পড়ে গেল সবার, এ অতি উঁচু দরের আধ্যাত্মিক হাত, লাখে একটা মেলে!
উঠে পড়ছিলেন চাটুজ্জেমশাই৷ এরপর ওঁকে গিয়ে রান্না চাপাতে হবে৷ বেরোবার আগে হঠাৎ করে প্রশ্ন করল বংশী, ‘‘আচ্ছা, মাধুরীর শেষমেশ কী হল সেটা বললেন না তো চাটুজ্জেমশাই?’’
বেরিয়ে যেতে যেতে থমকে গেলেন ভদ্রলোক, তারপর পিছনে না ফিরেই বললেন, ‘‘এরপর আবার বিয়ে করে সে৷ তারপর দীর্ঘ তিরিশ বছর সুখে-দুঃখে কাটিয়ে শ্রীমতী মাধুরী চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন, বছর দুয়েক হল৷’’
.
চাটুজ্জেমশাই বেরিয়ে গেলেন৷ বাকিরা স্তব্ধ!
সমাপ্ত