বাবার সঙ্গে মায়ের খিটিমিটি ক্রমেই বাড়তে থাকে৷ মায়ের উন্মাদদশা ক্রমে বেড়েই চলেছিল৷ মাঝে মাঝেই মা অজানা ভাষায় বিলাপ করতেন, কাঁদতেন৷ কাদের যেন অভিসম্পাত দিতেন৷ ছাদে উঠে বিড়বিড় করতে করতে কী সব আউড়ে যেতেন৷
এই করতে করতেই অঘটনটা ঘটে গেল একদিন৷
রাতের খাওয়ার টেবিলে মা সেদিন খুব বেশি পাগলামো করছিলেন৷ আমরা কেউ সামলাতে পারছিলাম না৷ বাবা শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে সারাজীবন যা করেননি তাই করলেন, মাকে সজোরে একটা থাপ্পড় মারলেন৷
সেই মুহূর্তটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে৷ সেকেন্ডের মধ্যে মায়ের মুখটা রাগে টকটকে লাল হয়ে গেল৷ ঠোঁটের কোনা দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে৷ চুলগুলো উড়ছে ডাইনির চুলের মতো৷ মা রাগে কাঁপতে কাঁপতে সাপের হিসহিসানির স্বরে বাবাকে বললেন, ‘আমার গায়ে হাত তুললি তুই? বড়দেওরির গায়ে হাত তুললি? এত সাহস হয়েছে তোর? খাব রে শয়তান, খাব৷ আজই তোকে খাব৷’
সেই রাতে প্রচণ্ড ঝড় আসে৷ মনে হচ্ছিল সারা পৃথিবী উথালপাতাল হয়ে যাবে৷ দিদি ভয়ে আমার কাছে ঘেঁষে আসে৷ আমি সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে দিদিকে জড়িয়ে ধরেছি, আমার হাত দিদির বুকে, এমন সময় একটা অদ্ভুত আওয়াজ কানে আসে আমাদের৷ মনে হল ছাদ থেকে কে যেন একতলায় নেমে যাচ্ছে৷ ঝড়ের ওই প্রবল মত্ততার মধ্যেও শুনতে পাই, আমাদের দরজার বাইরে মেঝে থেকে আওয়াজ উঠে আসছে, ক্রররর…ক্ররররর…
আমি আর দিদি উঠে দরজাটা অল্প ফাঁক করে উঁকি মারি৷
প্রথমে মনে হয় কোথাও কিছু নেই, সবই মনের ভুল৷ কিন্তু যে ক্ররররর আওয়াজটা সিঁড়ি ভেঙে নীচের দিকে নামছিল, সেটায় কোনো ভুল ছিল না৷
এমন সময় বিদ্যুতের আলো ঝলসে ওঠে৷ জানলার শার্সি থেকে ছিটকে আসা আলোয় দেখি এক ভয়াবহ মূর্তি বাবার ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে৷ লোকটার বলিষ্ঠ শরীর, মাথাটা ন্যাড়া, ঠোঁটটা অদ্ভুতরকমের লম্বা আর বাঁকানো৷ আর লোকটার সারা গায়ে চামড়া নেই, যেটা আছে সেটা পাখির পালক! কুচকুচে কালো রঙের পালক!
আমি আর দিদি প্রবল ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ি৷ দিদি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে৷ আমিও দিদিকে প্রবলভাবে জড়িয়ে ধরি৷
সেই রাতেই আমাদের প্রথম যৌন মিলন৷
আর পরের দিন সকালে উঠে আবিষ্কার করি বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন!
এরপর অনুশোচনা, হতাশা সব মিলিয়ে মা পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে যান৷ আমি আর দিদি কী করে সব সামলাব বুঝতে পারছিলাম না৷ এখানে আমাদের চেনা-পরিচিত আত্মীয়স্বজন বিশেষ নেই, খুব দূর সম্পর্কের এক মামা ছাড়া৷ তিনিই বেগতিক বুঝে তাড়াতাড়ি দিদির বিয়ে দিয়ে দেন৷ মায়ের জন্য একজন আয়া রাখা হয়৷
কিন্তু তাতে আমার সঙ্গে দিদির শারীরিক সম্পর্কে কোনো ছেদ পড়েনি৷ মাকে দেখতে আসার অছিলায় দিদি মাঝেমধ্যেই এ বাড়ি আসত৷ তখন আমরা মিলিত হতাম৷ দিদির বিয়ে হওয়ার পর মায়ের পাগলামি কিন্তু অনেকটা কমে যায়৷ মা বোধহয় শেষদিকে বুঝতে পেরেছিলেন আমার আর দিদির ব্যাপারটা৷ দিদি এ বাড়িতে এলে মুখ ঘুরিয়ে থাকতেন, কথা বলতেন না৷
যে বছর আমার মা মারা যান, সেই বছরই দিদিও বিধবা হয়—তারপর আর কী৷ আমাকে দেখাশোনার অছিলায় দিদি এ বাড়িতে পার্মানেন্টলি এসে থাকতে শুরু করে৷
এদিকে আমি হাঁপিয়ে উঠছিলাম, এই অস্বাভাবিক সম্পর্ক থেকে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছিলাম৷ আমার আর এসব ভালো লাগছিল না৷ কিন্তু দিদি ছাড়তে চাইত না৷ এসব বন্ধ করার কথা বললেই হিংস্র হয়ে উঠত৷ উন্মাদের মতো আচরণ করত৷ মায়ের কথা ভেবে আমি ভয় পেয়ে যেতাম, কিছু বলতাম না৷
তবে শুধু রাগারাগি নয়৷ দিদি আরও একটা জিনিস করতে শুরু করল৷
আগেই বলেছি, দিদিও প্রতি মাসে কয়েকদিন মায়ের মতো হারিয়ে যেত৷ এবার দিদি সেখান থেকে ফিরে আসার পর চুপিচুপি কিছু একটা ওষুধ খাওয়ানো শুরু করল আমাকে, কোনো ভেষজ ওষুধ৷ তাতে আমার মাথাটা কেমন যেন ঘেঁটে যেত, স্বাভাবিক বোধ, অনুভূতিগুলো নষ্ট হয়ে যেত৷ তার বদলে চাগাড় দিয়ে উঠত উদ্দাম, প্রবল যৌন প্রবৃত্তি, আদিম খিদে৷ আমি ওই দিনগুলোতে বুনো মোষের মতো বল পেতাম শরীরে৷ বিছানায় ওকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেতাম৷ আর তারপর থেকেই দিদির ওপর নির্ভরশীলতা আরও বেড়ে যেত৷ মনে হত আমাকে কোনো অদৃশ্য সুতোর টানে নাচাচ্ছে দিদি৷ প্রায় পাঁচ থেকে ছ’দিনের জন্য আমি কেমন যেন দিদির পুতুল মতো হয়ে থাকতাম৷
এইভাবেই চলে যেত, যদি না একদিন মাধুরীর সঙ্গে আমার আলাপ হত৷
বাকিটা তো আপনারা বোধহয় এখন জানেন৷ স্বাভাবিকভাবেই দিদি প্রথমে রাজি হয়নি এই বিয়েতে৷ তখন বাধ্য হয়েই আমাকে বলতে হয়েছিল যে এই বিয়ে করতে না দিলে আমি সুইসাইড করব৷ তখন ও নিমরাজি হয়৷ কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি যে ও এই সর্বনাশা খেলায় মাতবে৷
আমার ভুল হয়েছে প্রথমেই মাধুরীকে সবটা খুলে না বলা৷ ভেবেছিলাম বিয়ের পর হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কিন্তু ব্যাপার যে এতদূর এসে পৌঁছোবে, সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল৷
কাল যখন পরাগ এসে আপনার কথা বলল, মনে হল আপনিই পারবেন এই সংকট থেকে আমাকে উদ্ধার করতে৷ বিশ্বাস করুন, এই দুনিয়ায় আমি মাধুরীর থেকে বেশি ভালো আর কাউকে বাসি না৷ আমি এসব থেকে মুক্তি চাই দাদা, আমি বাঁচতে চাই৷ যে-কোনো মূল্যে আমি মাধুরীকে ফেরত পেতে চাই৷’’