দেখতে পাচ্ছি না বটে, তবে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম মাধুরী কাঁদছে৷
‘‘আহ…বড় মায়া…বড় কষ্ট…ওরে আমার ঈশ্বর যে আমার ভৈরবীচক্র তোর বুকেও এঁকে দিয়েছেন রে মেয়ে…তুই যে আমারও অংশ…তোর বিপদ দেখে আর ঠিক থাকতে পারি?…আহা…বড় মায়া রে মেয়ে…বড় মায়া…আহ…’’
বুঝতে পারছিলাম যে যিনি এসেছেন তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে থাকতে৷ মোমবাতির শিখাদুটো এখন একদম নিভে গেছে৷
‘‘শোন রে মেয়ে…কাল অমাবস্যার রাতে ওই নাগিনী তোর প্রাণের মানুষকে নিয়ে বসবে যক্ষিণীচক্রে৷ যে করেই হোক সেই চক্রসাধন আটকা…নইলে তোর মহাসর্বনাশ হবে রে মেয়ে…চিরকালের জন্য হারাবি তোর সবকিছু…’’
‘‘কীভাবে মা? কী করে? কোন পথে আটকাব এই অনর্থ?’’
‘‘কর্মের ফল সবাইকেই ভুগতে হয় বাবা’’, আওয়াজটা ক্রমেই মিলিয়ে আসছিল, ‘‘ওই শয়তানি যে মহাবিষ মিশিয়েছে আমার বাছার সিঁদুরে, সেই বিষই তার কাল হবে…’’
‘‘কোথায় মা…কোথায় হবে এই যক্ষিণীচক্র?’’
সেই অলৌকিক স্বর নিভে এসেছে প্রায়, ‘‘মন্দিরে যাস বাবা…বিলের ধারে গভীর জঙ্গলের মধ্যে আছে ওই নাগজাতির আরাধ্যা দেবীর মন্দির, সেখানে যাস…সেখানেই হবে ওই যক্ষিণীচক্র৷’’
আমি শোনামাত্র স্তম্ভিত হয়ে গেলাম৷ কাউরীবুড়ির মন্দিরে? কেন? ওইখানে কেন?
এবার কাকাও মনে হল একটু বিচলিত হলেন এই উত্তর শুনে, ‘‘কিন্তু… কিন্তু…মা…ওখানে কেন? ওই মন্দিরের সঙ্গে কী সম্পর্ক এই কালনাগিনীর? আর ওই শয়তানি অমন জটিল চক্রসাধন করার মতো এমন অলৌকিক শক্তি পেলই বা কোথা থেকে?’’
অনেক দূর থেকে ভেসে আসতে আসতে মিলিয়ে গেল সেই স্বর, ‘‘ওর রক্তে আদিম নাগজাতির উপাসনার উত্তরাধিকার বইছে যে বাবা…অনেক হাজার বছরের উত্তরাধিকার…ও যে পাতরগোঁয়্যাদের বড়দেওরি…’’
* * * *