৪. J. N. Sarkar, ed., History of Bengal, vol. II, p. 410.
৫. S. Chaudhury, From Prosperity to Decline, pp. 15-16.
৬. Gholam Hossein Khan. Seir-ul-Mutaqherin, pt. I, p. 280: Gulam Husain Salim, Riyaz-us-Salatin, pp. 290-91.
৭. Minute of Sir John Shore in W. K. Firminger, ed., Fifth Report, vol. II, p. 9
৮. সিয়র থেকে উদ্ধৃত, K. K. Datta, Alivardi and His Times, p. 140.
৯. Calendar of Persian Correspondence, pt. II, quoted in K. K. Datta, Alivardi, p. 140.
১০. Quoted from Karam Ali, Muzaffarnama in K. K. Datta, Alivardi, p. 140.
১১. S. Chaudhury, From Prosperity to Decline, pp. 279-305.
১২. Grose, East Indies, p. 234
১৩. রিয়াজ, পৃ. ৪।
১৪. ঐ।
১৫. S. C. Hill, Bengal in 1756-57, vol. III, p. 390; Robert Orme, Military Transactions, vol. II, p. 4.
১৬. Bernier, Travels, p. 440.
১৭. Alexander Dow, Hindostan, vol. III, Ixii.
১৮. DB, vol. 106, f. 413, para 41, 31 January, 1735.
১৯. Alexander Dow, Hindostan, vol. III, Ixviii-ix.
২০. ঐ, পৃ. Ixvii.
২. সিরাজ চরিত-কথা
সিরাজদ্দৌল্লার চরিত্র সম্বন্ধে প্রায়-সমসাময়িক সব ঐতিহাসিক ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ঐকমত্য দেখা যায়। যে-সব তথ্যের ওপর নির্ভর করে এ-সব বক্তব্য, বর্তমান অধ্যায়ে সেগুলি আমরা বিশদভাবে আলোচনা করেছি। সিরাজ চরিত্রের সমর্থন আমাদের উদ্দেশ্য নয় এটা স্পষ্ট করে বলা দরকার। শুধু যে-সব তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজচরিত্র বর্ণনা করা হয়, তার সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রায়-সমসাময়িক সব ফারসি ইতিহাসে এবং ইউরোপীয় পর্যবেক্ষকদের লেখায় এটা পরিষ্কার যে তরুণ যুবক হিসেবে সিরাজদ্দৌল্লা এমনই নিষ্ঠুর, দুর্বিনীত, নির্দয় এবং দুশ্চরিত্র ছিলেন যে সবাই তাঁর নবাব হওয়ার সম্ভাবনায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাঁর ভীতিপ্রদ স্বভাবের জন্য শুধু সাধারণ মানুষই নয়, এমনকী উচ্চবর্গের শাসকশ্রেণীও তাঁর প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছিল। ফারসি ঐতিহাসিকদের মধ্যে সিয়রে-র লেখক গোলাম হোসেন খান সিরাজের দুশ্চরিত্রের নিন্দায় সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। সিরাজ সম্বন্ধে তিনি নানা কটূক্তি করেছেন—‘অজ্ঞ অর্বাচীন যুবক’, ‘যে পাপপুণ্যের বা ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য করে না’, ‘দয়ামায়াহীন উদ্ধত ব্যবহার’, ‘রূঢ়ভাষী ও হৃদয়হীন’, ‘অহংকার ও অজ্ঞতায় যার মাথা বিগড়েছে’, ‘যৌবন, ক্ষমতা ও আধিপত্যের নেশায় যে আত্মহারা’, ইত্যাদি১। রিয়াজে-র গ্রন্থকার গোলাম হোসেন সলিমও সিরাজ চরিত্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে সিরাজ ‘বদমেজাজি ও রূঢ়ভাষী’ ছিলেন এবং তিনি ‘সব অভিজাত ব্যক্তি ও সেনাপতিদের ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতেন।’২
শুধু ফারসি ঐতিহাসিকরা নন, তদানীন্তন প্রায় সব ইউরোপীয় পর্যবেক্ষকরাও সিরাজদ্দৌল্লার ব্যক্তিগত চরিত্রের অনুরূপ চিত্র দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম কাশিমবাজারের ফরাসি কুঠির প্রধান জাঁ ল’ (Jean Law)। তিনি সিরাজের ‘জঘন্যতম চরিত্র’ এবং ‘লম্পট ও নিষ্ঠুর স্বভাবের’ উল্লেখ করেছেন।৩ ইংরেজ কুঠিয়াল লিউক স্ক্র্যাফ্টনও (Luke Scrafton) লিখেছেন, সিরাজদ্দৌল্লা ‘সর্বদাই লাম্পট্য ও অতিরিক্ত মদ্যপানে ডুবে থাকেন, তাঁর ইয়ার দোস্তরাও অতি নিকৃষ্ট স্তরের মানুষ’। সিরাজ সম্বন্ধে তিনি এটাও বলেছেন যে, তাঁর ‘কথাবার্তা, আচরণ বদমেজাজি ও হিংস্র ধরনের এবং তিনি ছিলেন নির্দয়, লোভী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’৪ সমসাময়িক অন্য কয়েকটি ইউরোপীয় আখ্যানেও একই ধরনের চিত্র পাওয়া যায়।
সুতরাং তরুণ যুবক হিসেবে, বিশেষ করে নবাব হওয়ার আগে, সিরাজদ্দৌল্লা যে নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অসচ্চরিত্র ছিলেন তা তাঁর অন্ধ সমর্থকও অস্বীকার করতে পারবেন না। কারণ এ চিত্রটাই প্রায় সব ফারসি ইতিহাস ও ইউরোপীয়দের লেখায় দেখা যায়। তবে বিষয়টি বিচার-বিবেচনার আগে তাঁর ছোটবেলা থেকে নবাব হওয়া পর্যন্ত তাঁর জীবনটার প্রতি দৃষ্টিপাত করা দরকার। মির্জা মহম্মদ সিরাজদ্দৌল্লা ছিলেন নবাব আলিবর্দির তৃতীয় কন্যা আমিনা বেগম ও আলিবর্দির ভাই হাজি আহমেদের পুত্র জৈনুদ্দিন আহমেদের ঔরসে জাত পুত্র অর্থাৎ নবাব আলিবর্দির নাতি। আলিবর্দির প্রথম কন্যা মেহের উন্নিসার (ঘসেটি বেগম) বিয়ে হয়েছিল হাজি আহমেদের বড় ছেলে নওয়াজিস মহম্মদের সঙ্গে। দ্বিতীয় কন্যার স্বামী ছিলেন আলিবর্দির আরেক ভাইপো পুর্ণিয়ার নবাব সৈয়দ আহমেদ।৫
১৭৩৩ সালে আলিবর্দি বিহারের ছোট নবাব (deputy governor) পদে নিযুক্ত হওয়ার ক’দিন আগে সিরাজের জন্ম হয়। তাঁর জন্মের পরেই আলিবর্দি এত উচ্চপদে নিযুক্ত হওয়ায় তিনি তাঁর মাতামহের বিশেষ স্নেহ ও আদরের পাত্র হয়ে ওঠেন। গোলাম হোসেন খান লিখেছেন যে ‘আলিবর্দি তাঁর বাড়িতেই সিরাজের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।’ মুজাফ্ফরনামা,-র লেখক করম আলি জানাচ্ছেন:৬
আলিবর্দি সিরাজের জন্ম থেকেই তাঁর প্রতি এমন স্নেহান্ধ ছিলেন যে এক মুহূর্তের জন্যও তাঁকে কাছছাড়া করতেন না। তিনি তাঁকে রাষ্ট্রনীতি, শাসনকার্য ও শাসক-অভিজাত জীবনের নানা গুণাবলী শেখাতেন। সিরাজের প্রতি তাঁর স্নেহ এমনই অন্ধ ছিল যে সিরাজের সমস্ত অপকীর্তিকে তিনি যেন দেখেননি বা শোনেননি এমন ভাব করতেন।… সিরাজের চিন্তা ছাড়া তাঁর একটি মুহূর্তও কাটত না।