That he [Siraj] must have been greatly incensed somehow or other is certain; he had proceeded as far as Rajamahall against the Purnea Nabob, who he must have looked on as a competitor for his sub- adarry, and yet he waived his resentment against him and marched back directly to attack the English. This does not appear like a pre-meditated design but rather a sudden gust of passion. What prevented you gentlemen [the Governor and the Fort William Council] from using proper means to mollify him while on his march I do not know….
হুগলির ডাচ কুঠিয়ালরাও জানাচ্ছে যে ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়ামের দুর্গকে দুর্ভেদ্য করার জন্য যে-সব নির্মাণকার্য করেছিল, সেগুলি ভেঙে দেবার জন্য নবাবের নির্দেশে তারা কর্ণপাত করেনি। এভাবে তাঁকে অগ্রাহ্য করার জন্যই নবাব কাশিমবাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করেন।৪৫
সিরাজদ্দৌল্লার ‘অর্থলিপ্সার’ কোনও প্রমাণ কিন্তু সমসাময়িক নথিপত্রে পাওয়া দুষ্কর, যদিও শুধু হিল সাহেব নন, এমনকী অধুনাও কোনও কোনও ঐতিহাসিক সোজাসুজি বা প্রচ্ছন্নভাবে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।৪৬ এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, সিরাজ যদি অর্থলোলুপ হতেন, তা হলে কাশিমবাজার কুঠির পতনের পর ইংরেজদের ওখানকার সব ধনসম্পত্তি তিনি অনায়াসে আত্মসাৎ করতে পারতেন। তিনি কিন্তু কিছুতে হাত দেননি, শুধু ইংরেজদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। তিনি তাদের কাছ থেকে কোনও অর্থও দাবি করেননি। তার চেয়েও বড় কথা, ওয়াটস যে-সব শর্তাবলীতে সই করেছিলেন, তাতেও অর্থের কোনও কথা ছিল না, যদিও এ রকম ক্ষেত্রে অর্থের দাবি করাটা প্রচলিত রীতি ছিল এবং বাংলার পূর্বেকার নবাবরা তা করেছিলেন। সিরাজদ্দৌল্লা যে ইংরেজদের সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর তথাকথিত ‘অর্থলিপ্সা’ যে তাতে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি, তা ওয়াটস ও কোলেটের চিঠি থেকে স্পষ্ট: ‘নবাব যে একটা আপস-মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন তার প্রমাণ তিনি কাশিমবাজারে যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম ছাড়া কোম্পানির অন্য কোনও জিনিসে হাত পর্যন্ত দেননি।’৪৭ পরে অবশ্য কলকাতা আসার পথে নবাবের দেওয়ান ও সেনাপতি দুর্লভরাম ওয়াটস ও কোলেটের কাছে অর্থের দাবি করেন—নবাব নন—তাও খুব একটা জোর দিয়ে নয়, অনেকটা তাদের যাচাই করার জন্য, অর্থের বিনিময়ে ইংরেজরা নবাবের কলকাতা অভিযান বন্ধ করতে রাজি কি না দেখতে হয়তো।৪৮ ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারীদের অনেকে অবশ্য ভেবেছিল কিছু টাকাপয়সা দিয়ে নবাবের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করা যেত কিন্তু ইংরেজদের প্রতি সিরাজদৌল্লার অসন্তোষ এত তীব্র হয়ে উঠেছিল যে শুধু অর্থ দিয়ে তা দূর করা সম্ভব ছিল না বলেই মনে হয়। অবশ্য এটা ঠিক যে, কলকাতা দখল করার পর মুর্শিদাবাদ ফেরার পথে তিনি ডাচদের কাছ থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ও ফরাসিদের থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নজরানা হিসেবে নিয়েছিলেন।৪৯ কলকাতার ইংরেজ কোষাগারে নবাব মাত্র চল্লিশ হাজার টাকার মতো পেয়েছিলেন। এখানে স্মর্তব্য, বাংলার সব নবাবই কোনও যুদ্ধজয়ের পর বা ওরকম উপলক্ষে বিদেশি বণিক ও দেশীয় সওদাগরদের কাছ থেকে প্রথাগত নজরানা আদায় করতেন—নজরানার পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রে বেশিও হত। তবু বেছে বেছে অর্থলিপ্সার অপবাদ সিরাজের ঘাড়ে চাপানো কেন?
সিরাজদ্দৌল্লার কলকাতা আক্রমণের সময় ইংরেজ কোম্পানির যে ক্ষয়ক্ষতি হয় (আনুমানিক বারো লক্ষ টাকার মত৫০) তা মূলত সংঘর্ষের সময় অগ্নিকাণ্ডের জন্যই। লুঠতরাজ অবশ্য হয়েছিল সন্দেহ নেই। ইংরেজ কোম্পানির সরকারি ঐতিহাসিক রবার্ট ওরমের (Robert Orme) মতে তার জন্য দায়ী ছিলেন রাজা মানিকচাঁদ, সিরাজ নন। পরে সিরাজ তাঁকে এজন্য কারাদণ্ড দেন এবং দশ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি শেষে মুক্তি পান।৫১ সিরাজদ্দৌল্লার বিরুদ্ধে অর্থলোলুপতার অভিযোগ যে কত অসার এবং তা যে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধের জন্য একেবারেই দায়ী নয় তা এক অজ্ঞাতনামা ইংরেজের লেখা [লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত] পাণ্ডুলিপি থেকে স্পষ্ট। ওই লেখক বলছেন: ‘বাংলার সুবাদার [সিরাজদ্দৌল্লা] যা চেয়েছিলেন তা মোটেই অর্থ নয়—অর্থের ব্যাপারটা ছিল নিতান্তই গৌণ। তিনি আসলে চেয়েছিলেন, ইউরোপীয়রা নিজেদের সুসংহত করার জন্য দুর্গগুলিকে যেভাবে দুর্ভেদ্য করে তুলছিল, তার সম্পূর্ণ অবসান।৫২ এমনকী যে হলওয়েল সিরাজের প্রতি মোটেই সদয় ছিলেন না, তাঁর ব্যাপারও প্রমাণ করে যে, সিরাজ মোটেই অর্থগৃধ্নু ছিলেন না। কলকাতার পতনের পর যখন হলওয়েলকে বন্দি হিসেবে নবাবের কাছে উপস্থিত করা হল, তখন তিনি নবাবকে জানান যে, যুদ্ধের ফলে তাঁর ব্যক্তিগত অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও নবাবকে ভাল পরিমাণ অর্থ দিয়েই তিনি তাঁর মুক্তি কিনতে চান। সিরাজ এর উত্তর দিয়েছিলেন: ‘হলওয়েলের টাকা থাকলে তাঁর নিজের কাছেই থাক। তাঁর অনেক যন্ত্রণাভোগ হয়েছে, তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক।’৫৩ এ থেকে একটা জিনিস সুস্পষ্ট যে সিরাজদ্দৌল্লা অর্থলোলুপ ছিলেন না এবং অন্তত কিছুটা মানবিকতাবোধও তাঁর মধ্যে ছিল। বেশির ভাগ ঐতিহাসিক তাঁকে যতটা ‘অমানুষ’ ভাবেন, ততটা ‘অমানুষ’ হয়তো তিনি ছিলেন না।