it was in the effervescence of these troubles that the English gave Siraj-uddaula reason for complaint against them. Always led away by the idea that he would not have sufficient influence to get himself recognised as subahdar they carried on a correspondence with the Begum (Ghaseti)…. It is even said that they had an understanding with the Nawab of Purnea (Shaukat Jung).
ইংরেজরা যে সিরাজদ্দৌল্লার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিল তা অন্য একটি ফরাসি সূত্র থেকেও জানা যায়। তাতে বলা হয়েছে যে, লেখকের বিশ্বাস, ইংরেজরা ঘসেটি বেগম ও শওকত জঙ্গের সঙ্গে সিরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তে যোগ দেয়।২৩ এখানে উল্লেখ্য, শওকত জঙ্গও ঘসেটি বেগমের মতো মসনদের দাবিদার হিসেবে সিরাজের প্রতিপক্ষ ছিলেন। হলওয়েল নিশ্চিত ছিলেন যে সিরাজের বিরুদ্ধে ঘসেটি বেগমের জেতার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।২৪ এমনকী ইংরেজ গভর্নর ড্রেকও যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে সিরাজদ্দৌল্লা ঘসেটি বেগমের বিরুদ্ধে সফল হতে এবং আদৌ নবাব হতে পারবেন কি না।২৫ সিয়র-উল-মুতাখারিনে-র লেখক ও শওকত জঙ্গের পরামর্শদাতা গোলাম হোসেন খান সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য শওকত জঙ্গকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন।২৬ কোম্পানির কর্মচারী রিচার্ড বেচার লিখেছেন যে ইংরেজরা সিরাজদ্দৌল্লাকে তাদের ওপর রেগে যাওয়ার যথেষ্ট ইন্ধন জুগিয়েছিল।২৭
ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজদ্দৌল্লার নির্দিষ্ট অভিযোগগুলি যথার্থ কি না তা বিচার করার আগে তাঁর আত্মম্ভরিতা ও অর্থলিপ্সা, যা সিরাজ-ইংরেজ সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়, তার দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক। সিরাজ যদি সত্যিই দাম্ভিক হতেন এবং তাঁর দাম্ভিকতাই যদি বিরোধের অন্যতম কারণ হয়ে থাকে, তা হলে তাঁর দুই প্রবল শত্রু ঘসেটি বেগম ও শওকত জঙ্গকে পরাভূত করার পরই তিনি ইংরেজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। মসনদে বসার ক’দিন পরে তিনি রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে তাঁর হাতে অর্পণ করার অনুরোধ জানিয়ে কলকাতায় চিঠি দেন। কৃষ্ণদাস ৫৩ লক্ষ টাকা মূল্যের ধনসম্পদ নিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেন। খুব সম্ভবত তাঁর পিতা রাজবল্লভ ইংরেজদের যোগসাজশে ওই ধনসম্পদ সমেত তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। রাজবল্লভ ঘসেটি বেগমের বিশ্বস্ত অনুচর—তাঁর মৃত স্বামী নওয়াজিস মহম্মদ ঢাকার নবাব থাকার সময় রাজবল্লভ প্রথমে একজন সহকারী ছিলেন, পরে তিনি ঢাকার রাজস্ববিভাগের দায়িত্ব পান। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিল এবং যখন এ-সব হিসেবপত্র পরীক্ষার কাজ চলছিল, তখন রাজবল্লভ ইংরেজদের কাছে তাঁর পুত্র কৃষ্ণদাস ও পরিবারের জন্য কলকাতায় আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কৃষ্ণদাস কলকাতা পৌঁছোন ১৩ মার্চ ১৭৫৬—আলিবর্দির মৃত্যুর প্রায় মাসখানেক আগে।২৮
কয়েক সপ্তাহ পরে, সিরাজদ্দৌল্লা নবাব হওয়ার পর ইংরেজদের লিখে পাঠান, ফোর্ট উইলিয়াম কেল্লাকে সুসংহত ও দুর্ভেদ্য করার জন্য যেন নতুন করে কিছু করা না হয় এবং ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়ামে যে প্রাচীর ও অপসারণীয় সেতু (draw bridge) সম্প্রতি বানিয়েছে তা যেন ভেঙে ফেলা হয়। ইংরেজ গভর্নর ড্রেক সিরাজের চিঠিকে শুধু উপেক্ষাই করেননি, পত্রবাহক মেদিনীপুরের ফৌজদার রাজারামের ভাই নারায়ণ সিংকে ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশকারী ও গুপ্তচর অপবাদ দিয়ে কলকাতা থেকে তাড়িয়ে দেন।২৯ অথচ তখনকার কলকাতার সবচেয়ে ধনী ও সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী উমিচাঁদই নারায়ণ সিংকে পরিচয়পত্র দিয়ে ড্রেকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সিরাজদ্দৌল্লার দ্বিতীয় চিঠির উত্তরে ড্রেক যা লিখেছিলেন তাতে ইউরোপের সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ যদি ভারতবর্যে বিস্তার লাভ করে, সেক্ষেত্রে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা নবাবের সাধ্যে কুলোবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।৩০ এ-চিঠি পেয়ে সিরাজের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল যে ইউরোপীয়রা, বিশেষ করে ইংরেজরা, দক্ষিণ ভারতে মাত্র কয়েক বছর আগে যেভাবে নিজেদের রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেছিল, বাংলায় তারা তার পুনরাবৃত্তি করতে পারে। নারায়ণ সিং-এর কলকাতা থেকে বহিষ্কারের খবর পেয়ে ওয়াটস শঙ্কিত হয়ে লিখেছেন: ‘যে মুহূর্তে আমি নারায়ণ সিং-এর ব্যাপারটি জানতে পারলাম, তখনই আমি নবাবের উচ্চপদাধিকারী এই কর্মচারীকে এভাবে অপমান করার ফল কী হতে পারে তা ভেবে আতঙ্কিত হলাম কারণ তরুণ নবাবকে ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যে কিঞ্চিৎ বেসামাল মনে হয় এবং তাঁর প্রত্যাশা তাঁর আদেশ লোকে বিনা দ্বিধায় মেনে নেবে।’৩১ জাঁ ল’-ও জানাচ্ছেন যে ‘ইংরেজরা নবাবের দূতকে অপমান করেছে এবং নবাবের চিঠির উত্তরে বেশ চড়া (offensive) জবাব দিয়েছে।’৩২ হুগলির ডাচ কুঠির কুঠিয়ালরাও লিখেছেন যে নবাবের মতো শক্তিশালী বিপক্ষকে ‘এমনভাবে সোজাসুজি অগ্রাহ্য করে [ইংরেজরা] হঠকারিতার পরিচয় দিয়েছে।’৩৩
বস্তুতপক্ষে পুর্ণিয়া রওনা হওয়ার (১৬ মে ১৭৫৬) আগে সিরাজদ্দৌল্লা ইংরেজদের মতো ফরাসিদেরও আলিবর্দির শেষ অসুস্থতার সুযোগে তাদের কেল্লার সংস্কার ও সংহত করার জন্য যে-সব নির্মাণকার্য করেছিল, সেগুলি ভেঙে ফেলতে বলেন। ফরাসিরা জাঁ ল’-র পরামর্শে, ইংরেজদের মতো ঔদ্ধত্য না দেখিয়ে, নবাবের পত্রবাহককে বেশ সৌজন্য দেখায় এবং তাকে দিয়ে রিপোর্ট করায় যে ফরাসিরা বেআইনি কিছু করেনি। নবাব ২০ মে নাগাদ রাজমহলে এ-খবর পেয়ে বেশ সন্তুষ্ট হন।৩৪ এদিকে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল বুঝতে পারে নারায়ণ সিংকে কলকাতা থেকে ওভাবে বহিষ্কার করার ফলে নবাবের সঙ্গে সম্পর্কে বেশ তিক্ততার সৃষ্টি হতে পারে। তাই কাশিমবাজারে ওয়াটসকে নির্দেশ দেওয়া হল, তা যেন না হয় তার জন্য আগে থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে। ওয়াটস তড়িঘড়ি দরবারে নবাবের ঘনিষ্ঠ লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।৩৫ কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, ড্রেকের চিঠিতে সম্ভাব্য ফরাসি আক্রমণের বিরুদ্ধে নবাব ইংরেজদের রক্ষা করতে পারবেন কি না তা নিয়ে নবাবের ক্ষমতার ওপর কটাক্ষপূর্ণ ইঙ্গিত ছিল এবং মনে হয় সিরাজ তাতে খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আবার এমন একটা সময় এ-সব ঘটনা ঘটল যখন সিরাজদ্দৌল্লা তাঁর এক প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, ঘসেটি বেগমকে, কাবু করে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী শওকত জঙ্গের সঙ্গে মোকাবিলা করতে যাচ্ছিলেন। ফলে, অন্য সময় এ-সব ঘটলে সিরাজের ওপর যা প্রতিক্রিয়া হত, সে-সব এ সময় ঘটায় তার প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি জোরালো হয়ে দেখা দিল।৩৬