.
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
১. সিয়র, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯৯, ১০১, ১২১-২২, ১৮৭-৮৯, ২২০।
২. রিয়াজ, পৃ. ৩৬৩।
৩. Jean Law’s Memoir, Hill, vol. 3, p. 162.
৪. Luke Scrafton, Reflections, pp. 53, 55, 103.
৫. K. K. Datta, Sirajuddaullah, p.1.
৬. সিয়র, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৮৩; মুজাফ্ফরনামা, পৃ. ৪৩(খ), কে. কে. দত্ত-র সিরাজদ্দৌল্লা-তে উদ্ধৃত।
৭. ঐ, পৃ. ১-২।
৮. ঐ, পৃ. ৩-৪।
৯. অধুনা অনেক লেখাতেও সিরাজদ্দৌল্লাকে ‘ভিলেন’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেমন রজতকান্ত রায়, পলাশীর ষড়যন্ত্র ‘Colonial Penetration’ in Indian Historical Review, 12 (July 1985-Jan. 1986); পিটার মার্শাল (East Indian Fortunes; Bengal: the British Bridgehead)। অবশ্য মার্শাল সিরাজকে ঠিক ‘ভিলেন’ হিসেবে দেখাননি এবং তিনি সিরাজের প্রতি রজতকান্ত রায়ের চেয়ে অনেক বেশি সহানুভূতিসম্পন্ন ও সংবেদনশীল। তবে তিনিও সিরাজের কিছুটা দোষ ধরেছেন যখন বলছেন যে (অযৌক্তিকভাবে) ‘সিরাজের কলকাতা আক্রমণের ফলেই কোম্পানির সঙ্গে নবাবের সম্পর্কে ধস [avalanche] নামে।’ East Indian Fortunes, p. 256.
১০. J. N. Sarkar, ed., Bengal Nawabs, PP. 10-11, 70-71,91.
১১. সিয়র, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৬৩ এবং এই বইয়ের ৪র্থ অধ্যায়।
১২. সিয়র, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৫; J. N. Sarkar, ed., Bengal Nawabs , p. 64.
১৩. সিয়র, ২য় খণ্ড, পৃ. ২০৪।
১৪. ঐ, পৃ. ১৮৮।
১৫. ঐ, পৃ. ১৮৮-৮৯; মুজাফ্ফরনামা, পৃ. ৬৩-৬৪।
১৬.সিয়র, ২য় খণ্ড, পৃ. ২২১।
১৭. ঐ, পৃ. ২২৯।
১৮. ঐ, পৃ. ২১৫।
১৯. ঐ, পৃ. ২১৭।
২০. ঐ, পৃ. ২২৫।
২১. রিয়াজ, পৃ. ৩৬৪, পাদটীকা ২।
২২. ঐ, পৃ. ৪১৪।
২৩. করম আলি, মুজাফ্ফরনামা, পৃ. ১০, ৬০, ৭০, ৭৩।
২৪. Hill, Bengal, III, p. 172.
২৫. ঐ, পৃ. ১৭৩।
২৬. ঐ।
২৭. ঐ, পৃ. ১৭৪।
২৮. ঐ, পৃ. ১৭৭।
২৯. ঐ, পৃ. ১৭৮।
৩০. ঐ, পৃ. ১৮৩।
৩১. ঐ, পৃ. ১৯০।
৩২. Luke Scrafton, Reflections, p. 102. এ-প্রসঙ্গে এই বইয়ের পঞ্চম অধ্যায় দ্রষ্টব্য।
৩৩. হাজি আহমেদের পুত্র, ঘসেটি বেগমের স্বামী, ঢাকার নবাব।
৩৪. Jean Law’s Memoir, Hill, III, pp. 162-64.
৩৫. ইউসুফ আলি খান, তারিখ-ই-বাংগালা-ই-মহবৎজঙ্গী, পৃ. ১১৮।
৩৬. Brijen K. Gupta, Sirajuddaullah, p. 57.
৩৭. Luke Scrafton, Reflections, p. 55.
৩. ইউরোপীয় কোম্পানি ও এশীয় বণিক সম্প্রদায়
পলাশির ষড়যন্ত্র ও বিপ্লবের প্রেক্ষিত সম্যক অনুধাবন করতে হলে প্রাক্-পলাশি বাংলার শিল্পবাণিজ্য, বিশেষ করে বহির্বাণিজ্যের বিস্তারিত বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় ইউরোপীয় বাণিজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলায় এশীয় বণিকদের এ সময় কী ভূমিকা তাও জানা দরকার। প্রথমটি সম্বন্ধে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকলেও, দ্বিতীয়টি সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান এতদিন অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, যে-কারণে ঐতিহাসিক মহলে প্রচলিত ধারণা ছিল যে, ওই সময় বাংলা থেকে রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এশীয় বণিকদের ভূমিকা ছিল নিতান্তই গৌণ। কিন্তু এখন আমাদের হাতে এমন তথ্যপ্রমাণ এসেছে যা দিয়ে উক্ত বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করা অনেকটা সহজসাধ্য হবে।
প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলায় ইউরোপীয়দের উপস্থিতি এবং তাদের বাণিজ্য বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে বেশ বড় রকমের পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে ইংরেজদের পক্ষে বাংলা বিজয় অনেক সহজসাধ্য হয়ে যায়। তাই ‘বণিকের মানদণ্ড’ কী ভাবে ‘রাজদণ্ডরূপে’ দেখা দিল তা সম্যক উপলব্ধি করতে হলে বাংলায় ইউরোপীয় বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতির হিসেবনিকেশ করা প্রয়োজন।১ সঙ্গে সঙ্গে এ সময় বাংলায় এশীয় বণিকদের ভূমিকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তাও বিচার করে দেখা দরকার। এভাবে প্রাক্-পলাশি যুগের বাণিজ্যের জগতে বাংলার বাণিজ্যের ভূমিকা নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
এটা মোটামুটিভাবে এখন সবার জানা যে পঞ্চদশ শতকের শেষে ভাস্কো ডা গামা (Vasco da Gama) উত্তমাশা অন্তরীপ (Cape of Good Hope) হয়ে ইউরোপ থেকে এশিয়া/ভারতবর্ষে আসার সোজা সমুদ্রপথ আবিষ্কার করার ফলে ইউরোপ ও ভারতবর্ষের মধ্যে সোজাসুজি সমুদ্রবাণিজ্য সম্ভব হল। বলা বাহুল্য, এ-বিষয়ে পর্তুগিজরাই পথ প্রদর্শক এবং তারাই প্রথম এশিয়া/ভারতবর্ষ থেকে সোজা ইউরোপে মশলাপাতি রফতানি করতে শুরু করে। যোড়শ শতক ও সপ্তদশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত এশিয়া থেকে ইউরোপে মশলাপাতি রফতানির বাণিজ্যে পতুর্গিজদেরই ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। ইউরোপে মশলার যে বিরাট বাজার এবং পতুর্গিজরা এশিয়া থেকে মশলা রফতানি করে যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছিল তাতে প্রলুব্ধ হয়ে ইংরেজ ও ওলন্দাজরা (Dutch) এশিয়াতে বাণিজ্য করার জন্য কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করে। এইভাবে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পত্তন হয় ১৬০০ সালে, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১৬০২ সালে। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি এই দুটি কোম্পানি এশীয় বাণিজ্যে পর্তুগিজদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় এবং ক্রমে ক্রমে পতুর্গিজ বাণিজ্য তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় ইংরেজ ও ডাচরা বাংলায় কুঠি স্থাপন করে বাণিজ্য শুরু করে— ইংরেজরা হুগলিতে, ডাচরা চুঁচুড়াতে। হুগলি ছিল ষোড়শ শতকের শেষদিক থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলার সবচেয়ে বড় বন্দর।২ ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পত্তন হয় পরে। এই কোম্পানি বাংলায় বাণিজ্য শুরু করে ১৬৮০-এর দশকে। অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির মধ্যে অস্টেন্ড এবং ডেনিস কোম্পানি বাংলায় বাণিজ্য শুরু করে অষ্টাদশ শতকের প্রথমদিকে কিন্তু তাদের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল খুবই নগণ্য।