১২. নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃ. ১০০; P. C. Majumdar, Musnad of Murshidabad, pp. 188-89;
১৩. P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, p. 206; নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃ. ১০৫.
১৪. A. H. Dani, Muslim Architecture in Bengal, pp. 277-78.
১৫. নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃ. ১০৭-১০৮; P. C. Majumdar, Musnud, pp. 207-208; A. H. Dani, Muslim Architecture in Bengal, pp. 277-78.
১৬. A. C. Campbell, Glimpses of Bengal, pp. 333-34; J. H. T. Walsh, A History of Murshidabad District, pp. 44-45; P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, pp. 118-19.
১৭. রিয়াজ, পৃ. ২৮-২৯।
১৮. P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, pp. 120-21.
১৯. নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃ. ১৪৩-৫০; P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, pp. 198-99; A. H. Dani, Muslim Architecture in Begal, p. 277.
২০. রিয়াজ, পৃ. ২৯০-৯১, তারিখ-ই-বংগালা, পৃ. ৭৫-৭৬।
২১. P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, p. 199; নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃ. ২৫-২৮।
২২. A. H. Dani, Muslim Architecture in Bengal, p. 277; নিখিলনাথ রায়, মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃ. ১৫৩-৫৪।
২৩. P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, p. 153: S. Chaudhury, From Prosperity to Decline, pp. 119-20.
২৪. J. H. T. Walsh, A History of Murshidabad District, p. 75; P. C. Majumdar, Musnud of Murshidabad, pp. 208, 233.
২৫. A. H. Dani, Muslim Architecture in Bengal, p. 273.
১০. উপসংহার / নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি
স্বাধীন নবাবি আমল মুর্শিদাবাদের স্বর্ণযুগ, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কী ঐশ্বর্যে, আঁকজমকে, রাজনৈতিক স্থিরতায়, শিল্পবাণিজ্যের অগ্রগতিতে, শান্তিশৃঙ্খলায়, সাংস্কৃতিক বিকাশে মুর্শিদাবাদ এইসময় উন্নতির চরম শীর্ষে পৌঁছেছিল। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে যখন অস্তমান মুঘল সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চলই রাজনৈতিক অরাজকতা ও অস্থিরতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ে বিপর্যস্ত, তখন কিন্তু এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাংলা তথা রাজধানী মুর্শিদাবাদ। এই সময় বাংলার নবাবদের পরিচালনায় একটি সুস্থ শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছিল এবং সব নবাবই— মুর্শিদকুলি থেকে আলিবর্দি পর্যন্ত সবাই— সেটি যথাযথভাবে রূপায়িত করেন। ফলে বাংলা তথা মুর্শিদাবাদে শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল, কোনও অস্থিরতা ছিল না, অরাজকতাও নয়। মুর্শিদাবাদের নবাবরা এমন রাজনৈতিক ও আর্থিক নীতি অনুসরণ করেন যাতে শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়, রাজনৈতিক স্থিরতা বজায় থাকে ও আর্থিক অগ্রগতি হয়। এই উন্নতিতে অবশ্য মুর্শিদাবাদের নবাবদের সঙ্গে হাত মেলায় শাসক শ্রেণির ওপরতলার একটি গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে নবাবদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। বস্তুতপক্ষে বাংলার পূর্বতন রাজধানী ঢাকা বা এমনকী প্রাচীন রাজধানী গৌড়েও বোধহয় নবাবি আমলের মুর্শিদাবাদের মতো সব স্তরে এতটা শ্রীবৃদ্ধি দেখা যায়নি।
অষ্টাদশ শতকের একেবারে গোড়াতেই মুঘল সম্রাট ঔরংজেব মহম্মদ হাদি নামক তাঁর এক বিশ্বস্ত ও দক্ষ কর্মচারীকে, যিনি তখন হায়দরাবাদের দেওয়ান ছিলেন, দেওয়ান করে ও করতলব খাঁ উপাধি দিয়ে বাংলায় পাঠান। উদ্দেশ্য, করতলব বাংলার রাজস্ব বিভাগকে সুবিন্যস্ত করে বাংলা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করবেন এবং তা নিয়মিত ঔরংজেবকে দাক্ষিণাত্যে পাঠাবেন। বৃদ্ধ সম্রাট তখন দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে কুড়ি বছর ধরে জর্জরিত ও আর্থিক অনটনে ব্যতিব্যস্ত। বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই তাঁকে রাজস্ব পাঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অসহায় ঔরংজেবের একমাত্র ভরসা করতলব খাঁ ও বাংলার রাজস্ব। করতলব সম্রাটকে নিরাশ করেননি। তিনি বাংলার রাজস্ব বিভাগের সম্পূর্ণ সংস্কার করে মুঘল সম্রাটকে নিয়মিত রাজস্ব পাঠিয়ে গেছেন। কিন্তু করতলব রাজধানী ঢাকায় এসে দেখলেন, তখনকার সুবাদার ঔরংজেবের পৌত্র শাহজাদা আজিম-উস-শান নতুন দেওয়ানের প্রতি মোটেই সন্তুষ্ট নন কারণ এতদিন তিনি একচ্ছত্রভাবে বাংলার ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা ভোগ করছিলেন। করতলব এসে তাতে বাধার সৃষ্টি করবে। করতলবের প্রতি তাঁর অনীহা প্রায় শত্রুতায় পর্যবসিত হয়। এমনকী তিনি করতলবের প্রাণনাশের চেষ্টাও করেন যদিও তা ব্যর্থ হয়।
করতলব বুঝতে পারেন যে ঢাকায় তিনি নিরাপদ নন। সর্বোপরি, ঢাকায় সুবাদার আজিম-উস-শানের উপস্থিতিতে তিনি তাঁর অভীষ্ট সিদ্ধ করতে পারবেন না, স্বাধীনভাবে কাজ করা তো দূরের কথা। তাই তিনি দেওয়ানি কার্যালয় ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত করলেন মখসুদাবাদে। এজন্য তিনি আজিম-উস-শানের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি কারণ তিনি জানতেন সম্রাট ঔরংজেব তাঁর ওপর খুবই সন্তুষ্ট, বিশেষ করে বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার করে তিনি সম্রাটকে নিয়মিত অর্থ পাঠাতেন, এজন্য। করতলবের পক্ষে মখসুদাবাদকে বেছে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এটিকে তাঁর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান মনে করার কারণ এটি বাংলার প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ফলে এখান থেকে বাংলার প্রায় সব অংশের ওপরই সুষ্ঠুভাবে নজর রাখা যাবে, যা জাহাঙ্গিরনগর (ঢাকা) থেকে সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া যেহেতু তিনি মখসুদাবাদের ফৌজদারের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেজন্য তিনি ওখানে অনেক বেশি নিরাপদ। তিনি হয়তো এটাও ভেবেছিলেন যে গঙ্গা তীরবর্তী মখসুদাবাদ থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির ওপর ভালভাবে নজরদারি করা যাবে কারণ এই সময় তারা গঙ্গার তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিল। ১৭০৪ সালে মখসুদাবাদে দেওয়ানি স্থানান্তরিত করে তিনি দাক্ষিণাত্যে সম্রাট ঔরংজেবের কাছে বাংলার রাজস্ব ও নজরানা নিয়ে হাজির হলেন। সম্রাট সানন্দে এতে অনুমতি দিলেন। তাঁকে মুর্শিদকুলি খান উপাধি দিয়ে তাঁর নামানুসারে মখসুদাবাদের নতুন নামকরণ, মুর্শিদাবাদ, করতে দিতে সাগ্রহে রাজি হলেন। এভাবেই মুর্শিদাবাদের উৎপত্তি।