Among the Gentoo merchants established in Calcutta, was one named Omichand, a man of great sagacity and understanding, which he had employed for forty years with unceasing diligence to increase his for- tune…he was become the most opulent inhabitant of the colony [Calcutta]. The extent of his habitation, divided into various parts, the number of his servants continually employed in various occupations and a retinue of armed men in constant pay, resembled more the state of a prince than the condition of a merchant.
কলকাতায় উমিচাঁদের আস্তানা হলেও ১৭৪০র দশক থেকে তিনি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন মুর্শিদাবাদে যাতে নবাব ও তাঁর দরবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা সুদৃঢ় হয়। কারণ চতুর ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি জানতেন তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের সাফল্যের জন্য নবাব ও তাঁর দরবারের দাক্ষিণ্য একান্ত প্রয়োজনীয়। পলাশি চক্রান্তের সময় দেখা যাচ্ছে তিনি প্রায় সর্বদাই মুর্শিদাবাদে। আমরা পরে দেখব, তাঁর মাধ্যমেই ইংরেজরা মুর্শিদাবাদে ইয়ার লতিফ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর থেকে পলাশির যুদ্ধের মাত্র ক’দিন আগে পর্যন্ত তিনি মুর্শিদাবাদেই ছিলেন। তাই তাঁকে বাদ দিলে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বাংলা তথা মুর্শিদাবাদের আরেক বণিকরাজা ছিলেন আর্মানি বণিক খোজা ওয়াজিদ। সপ্তদশ শতক থেকেই আর্মানিরা বাংলায় বিদেশি বণিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম। তারা যে-সব পণ্য নিয়ে বাণিজ্য করত, তার মধ্যে অন্যতম বস্ত্র ও কাঁচা রেশম। তাই কাশিমবাজার-মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি অন্তত মধ্য-সপ্তদশ শতক থেকেই। মুর্শিদাবাদের সৈয়দাবাদে এদের প্রধান ঘাঁটি ছিল কারণ এরাও জানত যে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সাফল্যের জন্য মুর্শিদাবাদ দরবারের আনুকূল্য একান্তভাবে প্রয়োজন। সৈয়দাবাদে প্রথম আর্মানি গির্জা স্থাপিত হয় ১৬৬৫ সালে— তার ধ্বংসাবশেষের পাশে ১৭৫৮ সালে তাদের নতুন গির্জা তৈরি হয়।৫৭
বাংলায় আর্মানি বণিকদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খোজা ওয়াজিদ। বাংলার বাণিজ্যিক রাজধানী হুগলি ছিল ওয়াজিদের প্রধান কর্মস্থল, সেখান থেকেই তিনি তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের সাম্রাজ্য চালাতেন। একদিকে ফরাসি ও ডাচ কোম্পানি, অন্য দিকে উমিচাঁদের মাধ্যমে তিনি ইংরেজ কোম্পানিকে তাদের রফতানি পণ্য সরবরাহ করতেন তাঁর জীবনের একমাত্র ধ্যানধারণা ছিল তাঁর বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য—যে কোনও মূল্যেই তিনি সেটার শ্রীবৃদ্ধি করতে প্রস্তুত ছিলেন। মুর্শিদাবাদের নবাব আলিবর্দির দাক্ষিণ্যেই তিনি বিহার অর্থনীতির অনেকটাই কুক্ষিগত করতে সমর্থ হন—বিহারে দু’টি প্রধান রফতানি পণ্য, সোরা ও আফিং-এর একচেটিয়া ব্যবসা তিনি নিজের করায়ত্ত করেন ১৭৪০-র শেষ দিক থেকে।৫৮ ১৭৫৩ সালে তিনি আলিবর্দির কাছ থেকে বিহারে সোরার একচেটিয়া ব্যবসা করার ইজারা পান।৫৯ তার আগের বছর তিনি নবাবকে ২৫ বা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে লবণের ব্যবসার ইজারাও নেন।৬০
অন্য বণিকরাজাদের মতো খোজা ওয়াজিদের ব্যবসা-বাণিজ্য শুধু দেশের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ ছিল না—তিনি সমুদ্র বাণিজ্যেও লিপ্ত ছিলেন। মনে হয় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তিনি বর্হিবাণিজ্যে অংশ নিতে শুরু করেন ১৭৪০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে। ডাচ কোম্পানির রেকর্ডস থেকে (যদিও সেগুলি অসম্পূর্ণ, মাঝেমধ্যেই ফাঁক আছে) জানা যায়, পঞ্চাশের দশকে ওয়াজিদের অন্তত ৬টি বাণিজ্যতরী ছিল।৬১ এগুলির মাধ্যমে তিনি তখনকার বাংলার সবচেয়ে বড় বন্দর হুগলির সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর জাহাজগুলি হুগলি থেকে বিভিন্ন পণ্যসম্ভার নিয়ে জেড্ডা (Jedda), মোখা (Mokha), বসরা (Basra), সুরাট, মসুলিপট্টনম প্রভৃতি বন্দরে বাণিজ্য করতে যেত। জাহাজগুলির নাম—‘সালামত রেসান’, ‘মোবারক’, ‘গেনজামের(?)’, ‘মদিনা বক্স’, ‘সালামত মঞ্জিল’ ও ‘মুবারক মঞ্জিল’। ডাচ কোম্পানির প্রধান ইয়ান কারসেবুম ও ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের লেখা থেকে জানা যায় যে সুরাটে ওয়াজিদের একটি বাণিজ্য কুঠিও ছিল।৬২
মুর্শিদাবাদ দরবারে ওয়াজিদের যে প্রবল প্রভাব ও প্রতিপত্তি, তা শুধু জগৎশেঠদেরই ছিল। নবাব সিরাজদ্দৌল্লার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ, নবাব তাঁকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলি, বিশেষ করে ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে, দৌত্যে নিযুক্ত করতেন। ইংরেজরাও তাঁর সঙ্গে নবাবের ঘনিষ্ঠতার কথা ভাল করে জানত। তারা তাঁকে মুর্শিদাবাদ দরবারের একজন অমাত্য বা দরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশীল ব্যক্তি বলেই মনে করত।৬৩ রবার্ট ওরম তাঁকে বাংলার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।৬৪ আর কাশিমবাজার ইংরেজ কুঠির উইলিয়াম ওয়াটস ও ম্যাথু কোলেট (Mathew Collet) লিখেছেন যে তিনি সুবে বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সওদাগর এবং নবাবের ওপর তাঁর প্রচণ্ড প্রভাব ছিল।৬৫ ফারসি ঐতিহাসিক ইউসুফ আলি খানও জানাচ্ছেন যে, ওয়াজিদ নবাব আলিবর্দির এক ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় বন্ধু। ব্যবসা-বাণিজ্য করে তিনি প্রচুর ধনোপার্জন করেন এবং লোকে তাঁকে ‘ফখর-উৎ-তুজ্জার’ (সওদাগরদের গর্ব—pride of merchants) নামে জানত।৬৬