Jugget Seat is in a manner the government’s banker; about two thirds of the revenues are paid into his house, and the government give the draught (draft) on him in the same Manner as a Merchant on the Bank.
কোম্পানির আরেক কর্মচারী ও পলাশি ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক, কাশিমবাজার কুঠির প্রধান উইলিয়াম ওয়াটসের মতে জগৎশেঠ ছিলেন ‘the greatest Banker in the Empire of Indostan and the Second in Power in Bengal.’৪৩ আর ফরাসি কোম্পানির কাশিমবাজার কুঠির অধ্যক্ষ জাঁ ল’ (Jean Law) লিখেছেন যে, জগৎশেঠরা হচ্ছেন ‘bankers of the Mogul, the richest and the most powerful who have ever lived’.৪৪
আমরা আগেই বলেছি জগৎশেঠরা ছাড়া মুর্শিদাবাদের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে আরও দু’জন বণিকরাজা, উমিচাঁদ ও খোজা ওয়াজিদের কথা বলা দরকার, যদিও মুর্শিদাবাদে তথা বাংলায় জগৎশেঠদের মতো অতটা প্রভাব বা প্রতিপত্তি এঁদের ছিল না। তবে সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে এই তিন বণিকরাজা মিলে মধ্য-অষ্টাদশ শতকের মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার অর্থনীতি থেকে রাজনীতি সবকিছুকেই যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিলেন। জগৎশেঠদের মতো অন্য দুই বণিকরাজার স্থায়ী নিবাস মুর্শিদাবাদে না হলেও মুর্শিদাবাদের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই নবাব ও নবাবের দরবারের অনুগ্রহলাভের জন্য মুর্শিদাবাদে তাদের আস্তানা করতে হয়েছিল এবং মুর্শিদাবাদই হয়ে উঠেছিল তাঁদের অন্যতম কর্মস্থল।
এই দুই বণিকরাজার মধ্যে একজন উমিচাঁদ বা আমিরচাঁদ। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধের শেষ তিন দশক ধরে বিশেষ করে, তিনি বাংলা তথা মুর্শিদাবাদের বাণিজ্যিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। উত্তর ভারত, সম্ভবত আগ্রা থেকে৪৫ তিনি বাংলায় আসেন ১৭২০-র দশকে এবং কলকাতার বিশিষ্ট দাদনি বণিক ও ইংরেজ কোম্পানির ‘ব্রোকার’ বিষ্ণুদাস শেঠের৪৬ অধীনে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেন।৪৭ ১৭৩০-র দশকের প্রায় প্রথম দিক থেকেই তিনি নিজেকে কলকাতার একজন গণ্যমান্য ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের দুই প্রধান ক্ষেত্র ছিল কলকাতা ও পাটনা। তার কাজকারবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: কলকাতায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিকে, বিশেষ করে ইংরেজ কোম্পানিকে পণ্য সরবরাহ, মহাজনি কারবার এবং অন্তর্বাণিজ্য আর বিহারে সোরা ও আফিং-এর ব্যবসা। ১৭৩০-র দশকের শেষ দিক থেকে তিনি পাটনাতে আলিবর্দির প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। ১৭৪১ সালে তিনি এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে পাটনা টাঁকশালের নিলাম কেনেন।৪৮ তাঁর ভাই দীপাচাঁদ বিহারে সোরা উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র ‘সরকার’ শরণের (Saran) ফৌজদারি চালাতেন। ইংরেজ কোম্পানিকে সোরা সরবরাহকারীদের অন্যতম প্রধান ছিলেন উমিচাঁদ। তিনি ও তাঁর ভাই দীপাচাঁদ মিলে বিহার প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে সোরার একচেটিয়া ব্যবসা প্রায় কুক্ষিগত করেছিলেন।৪৯
সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে অবশ্য উমিচাঁদের খুব একটা সুনাম ছিল না। ইংরেজ কোম্পানি কয়েকবারই তাঁর বিরুদ্ধে অসৎ উপায় অবলম্বন করার অভিযোগ করেছিল। কিন্তু কোম্পানি তাকে তাদের দাদন বণিকের কাজ থেকে বরখাস্ত করতে সাহস পায়নি, এই ভয়ে যে তা হলে তিনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসি বা অন্য কোন ইউরোপীয় কোম্পানির পণ্য সরবরাহের কাজ নিয়ে নিতে পারেন। আসলে উমিচাঁদের ব্যবসায়ী বুদ্ধি, দক্ষতা ও অর্থবল সম্বন্ধে ইরেজদের এতই আস্থা ছিল যে তাঁকে তারা হাতছাড়া করতে চায়নি। এমনকী ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের এক সদস্য জন ফরস্টার (John Forster) লিখেছেন: ৫০
his [Umichand] natural and acquired capacity for business, his extra-ordinary knowledge of the inland trade and his greater command of money all which qualities I think render him a prosper person to deal with.
তবে উমিচাঁদের প্রতিষ্ঠা, সমৃদ্ধি ও সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল বাংলার শাসকগোষ্ঠীর, বিশেষ করে বাংলার নবাব ও মুর্শিদাবাদ দরবারের, সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ১৭৩৫ সালে যখন ইংরেজ কোম্পানি তাদের দাদনি বণিকদের তালিকা থেকে উমিচাঁদের নাম কেটে দিল, তখন আলিবর্দির বড় ভাই ও মুর্শিদাবাদ দরবারের প্রভাবশালী অমাত্য, হাজী আহমেদ, কোম্পানিকে জানান যে উমিচাঁদকে যেন আবার দাদনি বণিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়—তিনি নিজে উমিচাঁদের জন্য জামিন হতে প্রস্তুত।৫১ এ থেকে স্পষ্ট যে মুর্শিদাবাদ দরবারের সঙ্গে উমিচাঁদ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তার সোরা ও আফিং-এর প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা মুর্শিদাবাদ নবাবের দাক্ষিণ্যেই সম্ভব হয়েছিল। নবাব আলিবর্দিকে ছোটখাট বিদেশি ও দুষ্প্রাপ্য জিনিস উপহার দিয়ে তিনি তাঁর প্রশ্রয় পেয়েছিলেন।৫২ শুধু তাই নয়, নবাব সিরাজদ্দৌল্লারও তিনি প্রিয়পাত্র এবং বিশ্বস্ত সভাসদ হয়ে ওঠেন।
উমিচাঁদ যে একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন তাতে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। কোন অগ্রিম বা দাদনি না নিয়েই তিনি ইংরেজ কোম্পানির জন্য ১০ লক্ষ টাকার পণ্য সরবরাহ করতে পারতেন। ১৭৫০ সালে কোম্পানির কাছে তাঁর পাওনা ছিল ১৬ লক্ষ টাকা।৫৩ পাটনাতে তাঁর ভাই দীপচাঁদের বার্ষিক আয় ছিল এক লক্ষ টাকা, এ থেকে উমিচাঁদের,—যাঁর বাণিজ্যিক পরিধি আরও অনেক ব্যাপক ছিল—আয়ের কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে।৫৪ তিনি কলকাতার সবচেয়ে বড় ও ভাল অনেকগুলি বাড়ির মালিক ছিলেন। তাঁর সশস্ত্র কর্মচারী ও পিওনের সংখ্যা ছিল তিনশো।৫৫ ইংরেজ কোম্পানির ঐতিহাসিক রবার্ট ওরম ১৭৫০-র দশকের প্রথমদিকে কলকাতায় ছিলেন এবং উমিচাঁদকে ভাল করেই জানতেন। তিনি উমিচাঁদ সম্বন্ধে লিখেছেন:৫৬