(৪৬) ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীদের হাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি নিহত হলে সাড়া ভারত জুড়ে শিখদের উপর বীভৎস তাণ্ডবলীলা চালানো হয়। তিনদিনের মধ্যে ৫০০০ শিখকে হত্যা করা হয়। শিখদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে, বাস থেকে নামিয়ে, দোকান থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়, কখনো জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
(৪৭) ১৯৮৯ সালে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ নামের উপন্যাস লেখার দায়ে সালমান রুশদিকে ফতোয়া দেওয়া হয় ইরানের ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনির পক্ষ থেকে। বইটি না পড়েই মুসলিম বিশ্বে রাতারাতি শুরু হয় জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডব। ইসলামকে অবমাননা করে লেখার দায়ে এর আগেও মনসুর আল হাল্লাজ, আলি দাস্তি, আজিজ নেসিন, উইলিয়াম নেগার্ড, নাগিব মাহফুজ, তসলিমা নাসরিন, ইউনুস শায়িখ, রবার্ট হুসেইন, হুমায়ুন আজাদ, আয়ান আরসি আলি সহ অনেকেই মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে, কেউ-বা হয়েছেন পলাতক।
(৪৮) ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর রামজন্মভূমি মিথকে কেন্দ্র করে হিন্দু উগ্রপন্থীরা শত বছরের পুরোনো বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। এর ফলশ্রুতিতে দাঙ্গায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, এর প্রভাব পড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও।
(৪৯) ১৯৯৭ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় স্বর্গের দ্বার (Heaven’s Gate) নামে এক ‘ইউএফও ধর্মীয় সংগঠনের ৩৯ জন সদস্য একযোগে আত্মহত্যা করে, জীবনের পরবর্তী স্তরে যাওয়ার লক্ষ্যে।
(৫০) বাংলাদেশে ১৯৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরে তা শতকরা ২২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ক্রমশ হিন্দুদের সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫%, ১৯৭৪ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, এবং ১৯৯১ সালে ১০% এ এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হিন্দুদের শতকরা হার কমে ৮ ভাগের নীচে নেমে এসেছে বলে অনুমিত হয়।
(৫১) ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারের উপর আল কায়দা আত্মঘাতী বিমান হামলা চালায়, এই হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বসে পড়ে, মারা যায় ৩,০০০ আমেরিকান নাগরিক।
(৫২) ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে দাঙ্গায় ২০০০ মানুষ মারা যায়, উদ্বাস্তু হয় প্রায় ১৫০,০০০ মানুষ। নারী নির্যাতন প্রকট আকার ধারণ করে। বহু মুসলিম কিশোরী এবং নারীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
(৫৩) ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বেছে বেছে হিন্দু বাড়িগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়। পূর্ণিমা রানির মতো বহু কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রথম ৯২ দিনের মধ্যে ২২৮টি ধর্ষণের ঘটনা, এবং পরবর্তী তিন মাসে প্রায় ১০০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ ছিল হিন্দু কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।
(৫৪) বিএনপি-জামাত কোয়ালিয়েশন সরকারের সময় বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতার (জে এম. জে) উত্থান ঘটে। তাঁরা পুলিশের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একটি ঘটনায় একজন গ্রামবাসীকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে উলটো করে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়।
(৫৫) ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রথা ভাঙা লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা চালায় মৌলবাদী জেএমবি। চাপাতি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলা হয় তার দেহ, যা পরে তাঁকে প্রলম্বিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
(৫৬) ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর চিত্র পরিচালক থিও ভ্যান গগকে প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি এবং ছুরিকাহত করে হত্যা করে মুসলিম সন্ত্রাসী মোহাম্মদ বোয়েরি। সাবমিশন নামের দশ মিনিটের একটি ‘ইসলাম বিরোধী’ চলচিত্র বানানোর দায়ে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের রাস্তায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই ছবির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে নারীবাদী লেখিকা আয়ান হারসি আলিকেও মৃত্যুপরোয়ানা দেওয়া হয়।
(৫৭) বাংলাদেশে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সামান্য ‘মোহাম্মদ বিড়াল’ নিয়ে কৌতুকের জের হিসেবে ২১ বছর বয়সি কার্টুনিস্ট আরিফকে জেলে ঢোকানো হয়, বায়তুল মোকারমের খতিবের কাছে গিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনার নাটক প্রদর্শিত হয়।
‘যুক্তিবাদ’ বাজারজাত কোনো ট্যাবলেট নয় এবং তা সেবনপূর্বক ‘যুক্তিবাদী’ হওয়া যাবে না। যুক্তিবিদ্যায় সমস্ত যুক্তিকে মূলত দু-ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায়। ছাঁচে ঢালা বা ফর্মাল যুক্তি এবং ছাঁচহীন বা ইনফর্মাল যুক্তি। ছাঁচে ঢালা যুক্তি হল গণিতের মতো ব্যাপার। বেশি তত্ত্ব কথা না-বুঝেও বোধগম্য হয়। ছাঁচে ঢালা যুক্তির বৈধতা বা অবৈধতাও নির্ণয় করা যায় কয়েকটি সূত্র প্রয়োগ করে, ঠিক গণিতের মতোই। কিন্তু ছাঁচহীন বা ইনফর্মাল যুক্তি এরকম নয়। সাধারণ মানুষের কথায় প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হওয়া এই ধরনের যুক্তিকে গণিতের মতো একে ছাঁচে ঢালা যায় না। সহজে সূত্র প্রয়োগে উত্তর বেরোয় না।