ধর্ম ও ধর্মীয় বিশ্বাসের এই সমালোচনার জন্য ‘New Atheist’ লেবেলে বিষয়বস্তু এবং তাঁদের বইগুলোর উপর সাংবাদিকতার ভাষ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। New Atheist মতাবলম্বীরা তাঁদের মতামতগুলিতে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চস্তরের আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করে। সমালোচকরা লক্ষ করেছেন যে, এইসব লেখকরা নৈতিক চিন্তাধারার অনুভূতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে এবং এমনকি বৈশ্বিক দৃশ্যের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব সম্পর্কেও আতঙ্কিত হয়। New Atheist মতালম্বীরা কেন্দ্রীয় বিশ্বাস ভাগ করে যে-কোনো ধরনের অতিপ্রাকৃত বা ঐশ্বরিক বাস্তবতা নেই ঐতিহাসিক উপাদান তাঁদের সাধারণ দাবি হল, ধর্মীয় বিশ্বাস অযৌক্তিক। নৈতিক উপাদানটি একটি ধারণাকে ধারণ করে যে, একটি সার্বজনীন ও উদ্দেশ্য ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিক মান আছে। Richard Dawkins বলেছেন, বিশ্বাস প্রমাণ ছাড়াও, এমনকি প্রমাণের বিরুদ্ধেও অন্ধ বিশ্বাস। তিনি দাবি করেন যে, বিশ্বাস একটি মন্দ কারণ। এটি যুক্তি ও প্রমাণের প্রয়োজন হয় না এবং বিতর্ক সহ্য করে না।
আস্তিকগণ মনে করেন, তাঁরাই শুধু সব সত্য জেনেছেন। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেই অব্যাখ্যায়িত সত্য খোল-করতাল সহযোগে প্রকাশ করতে থাকেন ২৪ X ৭ X ৩৬৫ দিন। তাঁরাই একমাত্র মহাপণ্ডিত, সর্বজ্ঞ। তাহলে নাস্তিকরা কি ফেলনা? এলিতেলি? আসুন কিছু বিখ্যাত দার্শনিকদের তালিকা এখানে উল্লেখ করা যাক, যারা ইতিহাসের পাতায় নাস্তিক হিসাবে পরিচিত। মূলত ব্যাপক অর্থে নাস্তিক্যবাদ বলতে বোঝায়, উপাস্যদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করা। নেতিবাচক অর্থে, নাস্তিক্যবাদ হল, উপাস্যের কোনো অস্তিত্ব নেই–এই অর্থে বিশেষভাবে অবস্থান করা। সর্বাধিকভাবে, কেবল উপাস্যদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কারণে নাস্তিক্যবাদ গড়ে উঠে। এই তালিকা জীবিত এবং মৃত দার্শনিকদের, যারা দার্শনিক-চিন্তা দ্বারা ও উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বা সামাজিক অবস্থার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এবং যারা প্রকাশ্যে নাস্তিক হিসাবে নিজেদের প্রকাশ করেছেন। জন অ্যান্ডারসন (১৮৯৩-১৯৬২): স্কটিশ, জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান দার্শনিক, গবেষণামূলক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা যেটা ‘সিডনি বাস্তববাদ’ হিসাবে পরিচিত। হেক্টর অভালস (জন্ম ১৯৫৮): মেক্সিকান-আমেরিকান, আইওয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ে অধ্যাপক এবং ধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন বইয়ের লেখক। এ. জে, আয়ের (১৯১০-১৯৮৯): ব্রিটিশ দার্শনিক এবং “যৌক্তিক ইতিবাদ”-এর উকিল। যদিও টেকনিক্যালি তিনি বিদ্যমান ঈশ্বরের ধারণা অর্থহীন হিসাবে দেখেছিলেন। অ্যালান বাদিও (জন্ম ১৯৩৭): ফরাসি দার্শনিক। জুলিয়ান বেগ্নিনি (জন্ম ১৯৬৮): দর্শনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ লেখক, “Theism: A Very Short Introduction,’-এর লেখক। মিখাইল বাকুনিন (১৮১৪-১৮৭৬): রাশিয়ান দার্শনিক, লেখক এবং নৈরাজ্যবাদী। ব্রুনো
বাউইর (১৮০৯-১৮৮২); জার্মান দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ, খ্রিস্টের পৌরাণিক তত্ত্বের প্রথম সূত্রটির প্রবক্তা। সিমোন দ্য বোভোয়ার (১৯০৮ ১৯৮৬); ফরাসি লেখক এবং বস্তুবাদী দার্শনিক। তিনি দর্শন, রাজনীতি ও সামাজিক বিষয়াবলির উপর রচনা, গ্রন্থ ও উপন্যাস এবং জীবনী ও আত্মজীবনী রচনা করেন। জেরেমি বেন্থাম (১৭৪৮-১৮৩২): ইংরেজি লেখক, আইনজীবী, দার্শনিক, এবং আইনগত ও সামাজিক সংস্কারক। তিনি তার উপযোগবাদের ওকালতির জন্য বেশি পরিচিত। সাইমন ব্ল্যাকবার্ন (জন্ম ১৯৪৪): ব্রিটিশ একাডেমিক নাস্তিক দার্শনিক, দর্শনকে জনপ্রিয় করার তাঁর প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত। ইরন ব্রুক (জন্ম ১৯৬১): ইসরাইলের জন্মগ্রহণকারী ‘অ্যান রান্ড ইনস্টিটিউট’-এর সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক। রুড কার্নাপ (১৮৯১ ১৯৭০); জার্মান দার্শনিক, ১৯৩৫ সালের আগে তিনি ইউরোপে এবং তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্য সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভিয়েনা চক্র’-এর একটি নেতৃস্থানীয় সদস্য এবং যৌক্তিক ইতিবাদ’-এর একজন বিশিষ্ট উকিল।
আবার দেখুন—
(১) প্রচলিত ঈশ্বর ধারণায় বিশ্বাস ছিল না বলে তৎকালীন গ্রিসের হর্তাকর্তারা সক্রেটিসকে নাস্তিক’ উপাধি দিয়েছিল এবং তাঁকে হেমলক বিষপান করে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। অথচ তিনি প্রতিদিন প্রার্থনা করতেন “হেপ্রভু আমাকে জ্ঞান দাও”।
(২) জিয়োদানো ব্রুনো, ইনি একজন ধর্মযাজক ও ওকাল্টিস্ট (গূঢ় রহস্যাদিতে বিশ্বাসী ব্যক্তি) হয়েও ‘নাস্তিক’ তকমা পেয়েছেন। তিনি মতবাদ প্রচার করেছিলেন–“মহাবিশ্ব অসীম এবং এর কোনো কেন্দ্র নেই”। এর সঙ্গে প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতার অপরাধে তাঁকে জ্যান্ত বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
(৩) জিশু তৎকালীন সময়ের প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসকে ভেঙে দিয়ে খ্রিস্টধর্ম প্রচার শুরু করেছিল, তাকেও ‘নাস্তিক’ বলা হল। প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসকে ভাঙার অপরাধে তাঁকে জ্যান্ত ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
(৪) নবি হজরত মোহাম্মদ যখন প্রচলিত ধর্মকে ভেঙে দিয়ে নতুন ধর্মের বাণী প্রচারে গেল, তখন তাঁকেও ‘নাস্তিক’ বলা হয়েছে। না, প্রচলিত ধর্মকে ভাঙার অপরাধে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে বা জ্যান্ত বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়নি। এটা অবশ্যই ব্যতিক্রম ঘটনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এই নবিই আবার নাস্তিক বা মুরতাদদের হত্যা করার বিধান দিয়ে গেছেন।