কোনো কিছুর সাধারণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য তথা গুণাগুণকে তার ধর্ম বলা যায়। যেমন হাইড্রোজেন একটা গ্যাস, এটা বাতাস অপেক্ষা হালকা, এটা পোড়ালে জল উৎপন্ন হয় –এটা হল হাইড্রোজেনের ধর্ম। একইভাবে মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবধর্ম বা হিউম্যানিটি। একজন মানুষকে চেনা যাবে তার মানবধর্ম দিয়ে, যেমন করে হাইড্রোজেন বা লোহাকে চেনা যায় হাইড্রোজেন বা লোহার ধর্ম দিয়ে। তবে বাংলায় ‘মানুষ’ শব্দটাও ব্যাপক অর্থ বহন করে। তবে ‘ম্যান’ আর ‘হিউম্যান’ সমার্থক নয়। দুই হাত, দুই পা থাকা, সোজা হয়ে হাঁটতে পারাটাই কিন্তু মানবধর্ম নয়, বড়জোর সেটা হোমো স্যাপিয়েনসের বৈশিষ্ট বা ধর্ম হতে পারে। ম্যান যখন ম্যানুকাইন্ডের অন্তর্গত–তখনই সে হিউম্যান। এই মানবসমাজের অন্তর্গত মানুষের ধর্মই হল মানবধর্ম। মানবসমাজে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের একটা ধারণা আছে। প্রচলিত ধর্মগুলো নিজ নিজ ব্যাখ্যা অনুযায়ী স্ব স্ব ধারণা গড়ে তুলে এবং বিভিন্ন ধর্মে এই ধারণার প্রচুর মিল ও অমিলও পাওয়া যায়, আছে প্রচুর কমন ফ্যাক্টর। প্রচলিত প্রধান ধর্মগুলোর ক্ষেত্রে এই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের ধারণার মূলে আছে কোনো অপ্রত্যক্ষ এক বা একাধিক অস্তিত্বের নির্দেশ বা পবিত্র ও ঐশী দাবিকৃত তথাকথিত কোনো এক ধর্মগ্রন্থের দেখানো পথ বা পরলোকের ভয়/চিন্তা কিংবা কোনো এক বা একাধিক মহাপুরুষ-নবি-ঋষিগণের জ্ঞানগর্ভ আদেশ-উপদেশ। বেশ একটা স্ট্যাটিক ধারণা। দেশ-কাল-পাত্র-পরিস্থিতি সেখানে গৌণ, মানুষকে নিয়ে এই সমস্ত আদেশ-উপদেশ-নির্দেশ উত্থাপিত হলেও মানুষও যেন সেখানে গৌণ; মূল হচ্ছে অপ্রত্যক্ষ সেই একজন বা বহুজন, পবিত্র ও ঐশী দাবিকৃত সেই গ্রন্থ কিংবা এক বা একাধিক সেই পরমপূজ্য মহাপুরুষ। অপরদিকে আমার ধর্ম যখন বলছি মানবধর্ম, তখন বুঝব আমার কাছে সব কিছু বিচারের মানদণ্ড এই মানবজাতি–সমগ্র মানবসমাজ, যার দেশ-কাল-পাত্র ভেদে বৈচিত্র্য আছে এবং যা নিয়ত প্রবাহমান ও গতিশীল। সুতরাং আমার ক্ষেত্রে ভালো-মন্দের ধারণাটাও স্ট্যাটিক তো নয়ই, বরং প্রচণ্ড গতিশীল। বিশেষ কোনো গ্রন্থ বা কোনো কাল্পনিক সত্ত্বা, যা একান্তই মর্মর কাগজের তৈরি ও ব্যক্তিবিশেষের লিখিত কিংবা কোন্ সে-কালের এক বা একাধিক রক্তমাংসের মানুষের উপর যুগযুগ ধরে ও সর্বভূতে অর্থহীন এবং অন্ধ নির্ভরতার কোনো স্থান আর যেখানেই থাকুক না-কেন, মানব ধর্মে নেই। সমাজসংস্কারকরা ধর্মের অনুশাসন দিয়ে মোটেই আমাদের পথ সুগম বা মসৃণ করে যায়নি। পাঁচ হাজার বছর আগেও যাছিল, পাঁচ হাজার বছর পরেও তাই-ই আছে, আগামী পাঁচ হাজার বছর পরেও তাই-ই থাকবে। আর ভণ্ডরা ভণ্ডামি করে যাবে যুগযুগ ধরে। পূজা পার্বণ-জপ-তপ-আচার-অনুষ্ঠান-টিকি-দাড়ি-মন্দির-মসজিদ-গির্জা–এগুলি কোনোটাই প্রকৃত ধর্মের আওতায় পড়ে না–কর্মই ধর্ম। প্রেমই বিশ্ব প্রকৃতির ধর্ম। পরস্পরের প্রতি পরস্পরের কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে সপ্রেম সহাবস্থানের নীতিতে দেওয়া-নেওয়া আদান-প্রদানেই ধর্ম আচরণ হয়। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, মা-বাবার প্রতি সন্তানের কর্তব্য, সন্তানের প্রতি মা-বাবার কর্তব্য, পাড়া-প্রতিবেশী-সমাজ-রাষ্ট্র প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই ধর্মের প্রকৃত সার্থকতা।
একবিংশ শতাব্দীতে কয়েকজন নাস্তিক গবেষক ও সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় নাস্তিক্যবাদের একটি নতুন ধারা বেড়ে উঠেছে যাকে ‘নব-নাস্তিক্যবাদ’(New Atheism) নামে ডাকা হয়। ২০০৪ সালে Sam Harris রচিত The End of Faith : Religion, Terror, and the Future of Reason 2015 মাধ্যমে নব-নাস্তিক্যবাদের যাত্রা শুরু হয়েছে বলে মনে করেন আর-এক প্রখ্যাত নব্য-নাস্তিকভিক্টর স্টেংগার।প্রকৃতপক্ষে স্যাম হ্যারিসের বই প্রকাশের পর এই ধারায় আরও ছয়টি বই প্রকাশিত হয়, যার প্রায় সবগুলোই নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলারে স্থান করেনিতে সমর্থ হয়। সব মিলিয়ে নীচের বইগুলোকেই নব্য-নাস্তিক্যবাদী সাহিত্যের প্রধান উদাহরণ হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়–(১) The New Atheism (2009)–Victor J. Stenger, (*) The God Delusion (2006)–Richard Dawkins, () God is Not Great : How Religion Poisons Everything (2007) Christopher Hitchens, (8) The End of Faith : Religion, Terror, and the Future of Reason (2004)–Sam Harris, (@) Breaking the Spell : Religion as a Natural Phenomenon (2006)–Daniel C. Dennett, (y) Letter to a Christian Nation : A Challenge to the Faith of America (Rooy)–Sam Harris, (9) God : The Failed Hypothesis How Science Shows That God Does Not Exist (2004)–Victor J. Stenger
ভিক্টর স্টেংগার এই ব্যক্তিদেরকেই নব্য-নাস্তিক্যবাদের প্রধান লেখক হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। উল্লেখ্য, নব্য-নাস্তিকেরা ধর্মের সরাসরি বিরোধিতা করেন। তাঁরা ধর্মকে প্রমাণবিহীন বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করেন এবং এ ধরনের বিশ্বাসকে সমাজে যে ধরনের মর্যাদা দেওয়া হয় সেটার কঠোর বিরোধিতা করেন।