(১০) আস্তিকদের বাধ্যতামূলকভাবে ধর্ম সম্পর্কিত কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা বিশ্বাস করতে হয়। অপরদিকে নাস্তিকদের এমন কিছু বাধ্যবাধকতা নেই।
(১১) আস্তিকগণ ধর্মগ্রন্থগুলিকে অপৌরুষেয় বলেন, আসমানি কিতাব, ঈশ্বরপ্রদত্ত বলেন এবং অবশ্যই নির্ভুল বলে দাবি করেন যাঁর যাঁর ধর্মগ্রন্থ। নিজের ধর্ম এবং নিজের ধর্মগ্রন্থ মহান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থগুলি বোগাস। নাস্তিকগণের কাছে কোনো ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থই ভ্যালু রাখে না।
(১২) আস্তিকরা তাদের কল্পিত সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন রীতি নীতি পালন করে। অপরদিকে নাস্তিকরা যেহেতু সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসের ধার ধারে না, তাই এহেন যোগাযোগের চেষ্টার প্রশ্নও নেই।
(১৩) আস্তিকগণ মন্দির-মসজিদ-গির্জা এবং অন্যান্য উপাসনাগৃহ ভেঙে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের চরমভাবে আহত করে, রক্তাক্ত করে। অপরদিকে নাস্তিকগণের এমন কোনো কর্মসূচি থাকেই না।
(১৪) আস্তিকগণ অন্য ধর্মাবলম্বীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে ঈশ্বরের নামে অন্য ধর্মে বিশ্বাস রাখার অপরাধে। অপরদিকে নাস্তিকগণের এমন কোনো কর্মসূচিও থাকে না।
(১৫) আস্তিকগণ অন্য ধর্মাবলম্বীদের জোর করে, ভয় দেখিয়ে,সেবার মুখোশ লাগিয়ে ধর্মান্তরিত করে। অপরদিকে নাস্তিকগণের এমন কোনো কর্মসূচি থাকে না।
(১৬) আস্তিকগণ তাঁর অপছন্দের মানুষ বা শত্রু মনোভাবাপন্ন মানুষদের অমঙ্গল বা ক্ষতিসাধনের জন্য ভগবানের কাছে নানারকম মানত করে, ভাড়া বাঁধে, জোড়া পাঁঠা বলি দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ঠাকুরের থানে মাথা ঠোকে, শাপ শাপান্ত করে। অপরদিকে নাস্তিকরা এমনধারা ভাবনা মাথাতেই আনতে পারে না।
(১৭) মৌলবাদী আস্তিকগণ সক্রেটিস, ব্রুনো, গ্যালিলিও, হুমায়ুন আজাদ, থাবা বাবা, সলমন রুশদি, তসলিমা নাসরিনদের মতো বিদগ্ধদের হত্যা করে কিংবা হত্যার করার জন্য ফতোয়া জারি করে। নাস্তিকদের এহেন “ঈশ্বর নির্দেশিত কর্ম”-এর ইতিহাস নেই।
নাস্তিকতা কোনো বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের নাম নয়, এটি একটি ‘স্কুল অব থট’। নাস্তিকতাবাদের মূল কাজ হচ্ছে আস্তিকতার নামে সারা পৃথিবীজুড়ে যে ভণ্ডামি চলে তার প্রতিবাদ করা। অতএব নাস্তিক্যবাদকে কোনোভাবেই ধর্ম বলা যায় না। ধর্ম সেটাই, যেখানে এক বা একাধিক ধর্মগ্রন্থ বর্তমানে। যদিও আস্তিক্যবাদীরা নাস্তিক্যবাদকেও ধর্ম বলার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে, তাই সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় প্রকৃতপক্ষে আস্তিকদের অজ্ঞতা ও ধর্ম বিষয়ে ধারণার অভাবই নাস্তিক্যবাদকে ধর্ম হিসাবে দাবি করার কারণ। সংকট থেকেই এ ধারণা আস্তিকদের মাথার মধ্যে আসে। এটা নতুন নয়, হিন্দু আস্তিকগণ যখন দেখল প্রচুর হিন্দু দলে দলে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে, তখন হিন্দু ধর্মবেত্তারা বলতে শুরু করে দিল বৌদ্ধধর্মও যা হিন্দুধর্মও তাই। আর-এক ধাপ এগিয়ে এটাও বললেন যে, বিষ্ণুর নবম অবতারই তো বুদ্ধ। এদেশে ব্রিটিশশাসন শুরু না-হলে হয়তো হজরত মোহম্মদকেও বিষ্ণুর একাদশতম অবতার হিসাবে পেয়ে যেতাম। সেটা হলে কেমন হত ভাবলেই কেমন যেন রোমাঞ্চকর লাগে। আস্তিকগণ সব পারেন।
গোটা পৃথিবী জুড়ে সর্বমোট জনসংখ্যা ৭.২৮ (৭.২৮ billion people as of January 2015) কোটি। এই ৭.২৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ২.২ কোটি (2.2 billion), ইসলাম ধর্মাবলম্বী ১.৮ কোটি (1.8 billion), ধর্মহীন মানুষ ১.১ কোটি (1.1 billion), হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বী ১ কোটি (1 billion), বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ৩৭৬ মিলিয়ন ইত্যাদি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিশ্বের সমগ্র জনসংখ্যার বিচারে খ্রিস্টান ৩১.৫ %, ইসলাম ২৩.২ %, হিন্দু ১৫ %, বৌদ্ধ ৭.১ %। বিশ্বের ২১০ কোটি লোক বলছে “খ্রিস্টান ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম”। বিশ্বের ১৪০ কোটি লোক বলছে “ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম”। বিশ্বের ৯০ কোটি লোক বলছে “হিন্দু বা সনাতন ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম”। বিশ্বের ১১০ কোটি লোক বলছে “কোনো ধর্ম সত্য নয় (নাস্তিক)”। একাধিক ঈশ্বর, একাধিক ধর্ম এবং একাধিক মতবাদ। কেন, একাধিক কেন? এদের সবার দাবি একসঙ্গে সঠিক হতে পারে না, কারণ এগুলি পরস্পর-বিরোধী। যে-কোনো একটা দলের কথা সঠিক। অথবা কোনোটাই সঠিক নয়।
ভাববার বিষয় এই যে, খ্রিস্টানদের ঈশ্বর মোট জনসংখ্যার বাকি ৬৪.৫ % মানুষকে খ্রিস্টানে পরিণত করতে পারেনি, মুসলিমদের আল্লাহ মোট জনসংখ্যার বাকি ৭৬.৮ % মানুষকে মুসলিমে পরিণত করতে পারেনি, হিন্দুদের ভগবান মোট জনসংখ্যার বাকি ৮৫ % মানুষকে হিন্দুতে পরিণত করতে পারেনি, বৌদ্ধদের ভগবান বুদ্ধ মোট জনসংখ্যার বাকি ৯৩ % মানুষকে বৌদ্ধ করতে পারেনি। এছাড়া অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যেসব ধর্মগুলি আছে তাঁদের কথা তো ধরলামই না। আহা, ভগবানের ক্ষমতা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই। না ক্ষমতা আছে আল্লাহর, না ক্ষমতা আছে ভগবানের, না ক্ষমতা আছে ঈশ্বর বা গডের, না ক্ষমতা আছে অন্য কোনো দেবতার। সেই ভগবানই সর্বশক্তিমান এবং পরমকরুণাময় হবে যে ভগবান পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে এক ঈশ্বরে আস্থা এবং বিশ্বাস আনাতে পারবে। সত্যিই যদি ঈশ্বর বলে কিছু থাকত তাহলে পৃথিবী এত ধর্ম ভাগে বিভাজিত হয়ে থাকত না। “তুই বড়ো, না মুই বড়ো” ধর্মকে কেন্দ্র করে এত রক্তপাত আর হানাহানি থাকত না।