*
শেয়ার করার মানুষ
আপনার জীবনে কি এমন কেউ আছেন, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে খুবই ভালো। কারণ, একটি দীর্ঘ সুন্দর জীবনের জন্য ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের সাথে আপনার জীবনের চলার পথের গল্পগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়াটা খুবই জরুরি।
কিন্তু, শেয়ার করার মানুষ না থাকলে একটু চেষ্টা করে দেখুন কারও সাথে কথা বলা যায় নাকি। কারণ, নিজের কথাগুলো কারও সাথে শেয়ার না করতে পারলে নিজেকে অনেক বিচ্ছিন্ন মনে হয়। সেখান থেকে অনেকে হয়তোবা ডিপ্রেশনে চলে যায়। সুইসাইড করে এমন অনেক মানুষেরই কাছের মানুষও জানে না যে মানুষটা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। কেন? কারণ, শেয়ার করার মত পরিবেশ ছিল না।
এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কেন কথা শেয়ার করে না?
একটা কারণ হতে পারে শেয়ার করার মতো গ্রহণযোগ্য কোনো মানুষ নেই। কিংবা শেয়ার করলে সেই কথা অন্যজনের কানে লাগিয়ে বিপদ তৈরি হতে পারে। অথবা, শেয়ার করলে সেটা নিয়ে অনেকে আপনাকে জাজ করে বসবে, অর্থাৎ আপনাকে নিচু চোখে দেখা শুরু করবে। এমন অবস্থায় কী করা যায়?
১. একদম শুরুতে, ছোটখাটো জিনিস শেয়ার করুন। যেমন : কোনো একটা মুভি দেখার কথা, কিংবা আবহাওয়ার কথা। ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে এমন না। কেবল, কথা বলা শুরু করেন মানুষের সাথে।
২. আপনি ছদ্মনামে অনলাইনে আপনার আইডিয়া অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন যদি একান্তভাবে মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ না থাকে।
৩. মানুষকে বলতে না পারলে কিংবা অনলাইনেও যেতে না পারলে, অন্তত কাগজে লিখে রাখুন নিজের কথাগুলো।
যেভাবেই হোক, মানুষের সাথে কমিউনিকেশন আপনাকে বাড়াতে হবে। অন্যের জন্য না, অন্তত খালি নিজের জন্য। সবথেকে ভালো হবে যদি আপনার কাছে শেয়ার করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, তাহলে অভিজ্ঞ সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
*
ঠাট্টা করে কমিউনিকেশন
সবথেকে ভালো গল্প তারা বলতে পারে যারা মানুষকে হাসাতে পারে, কিংবা কাঁদাতে পারে। ভালো কথা।
কিন্তু, অনেকে নিজেদের কৌতুকে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, তাদের শো-এর টিকেট কাটেনি, এমন মানুষকেও তাদের স্ট্যান্ড-আপ জোকস শোনাতে থাকে। এখানে কিছু বিষয় আছে।
সব কিছুর একটা জায়গা আছে যেটা ইদানীং কিছু মানুষের কাণ্ডজ্ঞানের সৌরজগতের মধ্যে নেই। সেলফি তুলবি তো তোল। আইসিইউ কি বাদ রাখা যেত না? কিংবা কবরস্থান!
আপনি খুশি থাকতেই পারেন। কিন্তু, সবাই তো আর সব সময় খুশিমনে। আপনার দিলখুশ টোটকা শুনতে চায় না।
সিনিয়র মানুষজন যদি দেখে যে আপনি তাদের সামনে ইচ্ছামত হাসিঠাট্টা করে যাচ্ছেন, তাহলে তারা ভাবতে পারে যে আপনার বিচার-বুদ্ধি একটু কম। কিংবা ভাবতে পারে আপনি একদম ড্যাম-কেয়ার। হাসি-ঠাট্টা করুন অসুবিধা নাই, কিন্তু সবাইকে আপনার অডিয়েন্স ভাববেন না।
*
রঙের কমিউনিকেশন
কর্পোরেট দুনিয়ায় রঙ দিয়ে অনেক ব্র্যান্ডিং হয়। বাংলাদেশের চারটি টেলিকম কোম্পানির কিন্তু নির্দিষ্ট রঙ আছে যেগুলো তারা তাদের বিজ্ঞাপনে, মডেলদের পোশাকে সব জায়গায় ব্যবহার করে।
আমরা তো ভিডিও নির্মাণের জগতে বেশ কয়েক বছর ধরে আছি। এখানে আপনি এক ব্র্যান্ডের কন্টেন্টে অন্য ব্র্যান্ডের রঙ দিয়েছেন তো ঝাডি খেয়েছেন! এবং রঙ কিন্তু খালি ব্র্যান্ডিং নয়, রঙের মাধ্যমে অনেক ইমোশনও। প্রকাশ হয়ে যায়। একটা উদাহরণ দেই।
সাধারণত খাতা চেক করার সময় শিক্ষকরা লাল কালি দিয়ে কাটেন। এখন লাল কালি দিয়ে কাটা-কাটি করতে করতে লাল কালির মাধ্যমে বাচ্চাদের অবচেতন মনে একটা আশংকা হয়। তাই, কিছু বাইরের দেশের কিছু পাঠশালায় লাল কালি বদলে বেগুনি কিংবা নীল কালি দিয়ে খাতা চেক করা হয় যাতে বাচ্চাদের ফিডব্যাক দেয়ার সময় অবচেতনভাবে তাদেরকে আশঙ্কিত না করে ফেলা হয়।
তাই, রঙের মাধ্যমে আমাদের ইমোশনকে প্রভাবিত করা যায়। এখানে একটা প্রচলন আছে যে, কমলা রঙ তারুণ্যকে প্রকাশ করে, বেগুনি রঙ আভিজাত্যকে প্রকাশ করে ইত্যাদি। আসলে ব্যাপারটা কালচারের উপর অনেকটা নির্ভর করে।
*
বিরক্তিকর কমিউনিকেশন
আপনি কী বলছেন সেটার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আপনি কোন পরিবেশে কথাটা বলছেন। আপনি দুনিয়ার সেরা স্পিচটাই তৈরি করেন আনেন না। এরপর মানুষকে বলা শুরু করেন। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে দৌড়াচ্ছে। এমন কাউকে থামিয়ে আপনার মহামূল্যবান স্পিচ শোনাতে যান, দেখেন কী হয়? রাখেন আপনার স্পিচ, আমাকে যাইতে দেন আগে!
আরেকটা উদাহরণ দেই। কোন লেকচার সবথেকে বিরক্তিকর বলেন তো! কেউ হয়তোবা বলবে ক্যালকুলাস, কেউ বলবে জিওগ্রাফি আর কেউ বলবে ফিন্যান্স! যে যাই বিরক্তিকর ভাবুক না কেন, একটা লেকচার সবার জন্যই বিরক্তিকর। আর সেটা হচ্ছে ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার পরও চলমান লেকচার। যদি না অসাধারণ কোনো শিক্ষক লেকচারটা দেন, ঘণ্টা পড়ার পর আর কারও কিন্তু শুনতে ইচ্ছা করে না, সেটা যতই গুরুত্বপূর্ণ কথা হোক না কেন।
তাই, খেয়াল রাখুন আপনি যেন বিরক্তিকর সময় কমিউনিকেশন না করেন। লাঞ্চের পর পেটে গরম গরম ভাত থাকলে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে। ঠিক তখন যদি আপনি ব্রেইনস্ট্ররমিং (Brain Storming) মিটিং রাখেন, তাহলে মানুষজন চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে!